জীবন বীমা পরিভাষা: পর্ব- ১

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পাঠকদের জন্য জীবন বীমার বিভিন্ন পরিভাষা সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ইভিপি (অবলিখন ও পুনর্বীমা) সৈয়দ আব্দুল্লাহ জাবির। আজ প্রথম পর্বে থাকছে জীবন বীমার পনেরটি পরিভাষা।

জীবন বীমা (Life Insurance):

নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত বা এককালীন প্রিমিয়াম প্রদানের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কোন ব্যক্তির জীবনের উপর ঘটে যাওয়া আকস্মিক কোন দূর্ঘটনা বা মৃত্যুর জন্য বা মেয়াদান্তে নির্দিষ্ট অর্থ  (Sum Assured) প্রাপ্তির নিমিত্তে যখন কোন বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন ব্যক্তির চুক্তি হয় সেই চুক্তিকে জীবন বীমা বলে।

বীমা অংক (Sum Assured):

মেয়াদী বীমার ক্ষেত্রে বীমার মেয়াদ শেষে বা মেয়াদের মধ্যে বীমা গ্রাহকের মৃত্যুতে বীমাগ্রাহক যে পরিমাণ অর্থ পাবেন।

বীমা ঝুঁকি অংক (Sum at Risk):

বীমা চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদের মধ্যে বীমাগ্রাহকের মৃত্যুতে নমিনিকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় তাকেই বীমা ঝুঁকি অংক বলে। উদাহরণ স্বরুপ: ১ লাখ টাকা বীমা অংকের শিশু নিরাপত্তা বীমার পরিকল্পে বীমার মেয়াদ শেষে বীমা গ্রাহক জীবিত থাকলে লাভসহ বীমা অংক প্রতিপ্রাপ্য হবেন। কিন্তু মেয়াদের মধ্যে বীমা গ্রাহকের মৃত্যু হলে নমিনী (শিশু) এক লাখ টাকার চেয়ে বেশি অর্থ প্রতিপ্রাপ্য হবেন। এই প্রতিপ্রাপ্যের পরিমাণ নির্ভর করে বীমার মেয়াদ, বীমা কতদিন চলার পর গ্রাহক মৃত্যুবরণ করল ইত্যাদির উপর।

প্রিমিয়াম (Premium):

বীমার প্রতিপ্রাপ্য প্রাপ্তির নিমিত্তে বীমাগ্রাহক বীমা কোম্পানীকে যে অর্থ প্রদান করে তাকে প্রিমিয়াম বলে।

বীমাযোগ্য স্বার্থ (Insurable interest):

বীমার বিষয়বস্তুর উপর বীমা গ্রহীতার স্বার্থকে বীমাযোগ্য স্বার্থ বলে। বীমাযোগ্য স্বার্থ না থাকলে চুক্তি বলবৎ হয় না। যেমন: জীবন বীমায় জীবনই হলো বীমার বিষয়বস্তু। জীবনের কোন ক্ষতি হলে গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন।

বীমা যোগ্যতা (Insurability):

বীমা প্রস্তাবকের যে সকল যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে বীমা কোম্পানি তার আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকেন। যেমন তার চুক্তি করার যোগ্যতা থাকতে হবে অর্থাৎ তার বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে হবে। তিনি আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হবেন না।

সহযোগী বীমা (Supplementary Insurance):

এই বীমা মূল পরিকল্পের সাথে নিতে হয় আলাদাভাবে নেয়া যায় না। এই বীমায় তুলনামূলক অনেক কম প্রিমিয়ামে অধিক আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। সহযোগী বীমা চুক্তি অনুযায়ী কোন ঘটনা সংঘটিত হলেই সহযোগী বীমার আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। যেমন: দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বীমা (DIAB)।

অবলিখন (Underwriting):

অবলিখন হচ্ছে বীমা প্রস্তাবকের তরফ থেকে জমাকৃত প্রস্তাবপত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোম্পানির পক্ষে প্রস্তাবিত আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য কিনা বা কি শর্তে গ্রহণযোগ্য তা নির্ণয় করার প্রক্রিয়া।

অবলিখক (Underwriter):

কোম্পানির তরফ থেকে যে কর্মকর্তা জীবন বীমা প্রস্তাবের বিপরীতে ঝুঁকি গ্রহণ সংক্রান্ত সিদ্ধাস্ত গ্রহণ করেন।

ঝুঁকি (Risk):

জীবন বীমায় ঝুঁকি বলতে সেই সব কারণকে বুঝায় সেগুলোর কারণে মৃত্যু, দুর্ঘটনা বা রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

পেশাগত ঝুঁকি (Occupational Risk):

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে স্বাভাবিক মৃত্যু ঝুঁকি/দুর্ঘটনার চেয়ে যে অতিরিক্ত মৃত্যু/দুর্ঘটনা ঝুঁকি থাকে। যেমন: নদী/সমুদ্রের  জেলে, বাস-ট্রাক ড্রাইভারদের পেশার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি।

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি (Physical Risk):

বীমা প্রস্তাবকের অসুখ বিসুখের ইতিহাস, শারীরিক পরিমাপ বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও পারিবারিক ইতিহাস থেকে যে অতিরিক্ত মৃত্যু ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

নৈতিক ঝুঁকি (Moral Risk):

জীবন বীমা প্রস্তাবকের তরফ থেকে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে প্রকাশ না করা, ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করা/অনিচ্ছাকৃত বা অবহেলাবশত তথ্য উল্লেখ না করার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি।

প্রমিত জীবন (Standard Life):

স্বাভাবিক ঝুঁকির বাইরে অতিরিক্ত নিয়ামকসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যখন কোন প্রস্তাবিত জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি না হয় তখন তাকে প্রমিত জীবন (Standard Life) বলে।

অবপ্রমিত জীবন (Sub-Standard Life):

স্বাভাবিক ঝুঁকির চেয়ে প্রস্তাবকের জীবনে মেডিকেলের কারণে অতিরিক্ত মৃত্যু ঝুঁকির সৃষ্টি হলে সেই জীবনকে অবপ্রমিত জীবন (Sub- Standard Life) বলে। যেমন: রোগের কারণে কোন ব্যক্তির জীবনে অতিরিক্ত মৃত্যু ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার ফলে সেই জীবনকে অবপ্রমিত (Sub- Standard Life)  জীবন বিবেচনা করা হবে।

(চলবে....)