বিকল্প বিরোধ মীমাংসা (ADR) প্রসঙ্গে

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: বিকল্প বিরোধ মীমাংসা (Alternative Dispute Resolution- ADR) সালিসি বা মধ্যস্থতা পদ্ধতির (Arbitration) একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।

এ পদ্ধতি যেকোনো আইনগতভাবে বৈধ চুক্তির বেলায় ব্যবহার করা যেতে পারে। বীমার বেলায় বিশেষ করে অগ্নি বীমা বা সম্পত্তি বীমা পলিসিতে সাধারণত সালিসি (Arbitration) একটি অতিরিক্ত শর্ত (Supplementary Condition) হিসেবে জুড়ে দেয়া হয়।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বীমা কোম্পানির দায় (Liability) স্বীকার সাপেক্ষে আদালতের শরণাপন্ন বা আশ্রয় না নিয়ে এ পদ্ধতির মাধ্যমে দাবির পরিমাণ সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা করা এই ব্যবস্থার একটি প্রধান উদ্দেশ্য।

এখন সালিসি বা মধ্যস্থতা পদ্ধতির বিভিন্ন উপকারিতা এবং সুবিধাজনক দিক তুলে ধরা যাক।

১) আদালতে মোকদ্দমা (Litigation) চালানোর খরচ (Court Fee) ব্যয়বহুল যা সালিসের বেলায় অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়সাপেক্ষ।

২) মোকদ্দমার বেলায় উকিল খরচ মধ্যস্থতায় নিয়োগকৃত বীমা বিশেষজ্ঞ বা রেফারী খরচের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অধিক।

৩) আদালতের সিদ্ধান্ত বা রায় আসতে সাধারণত দীর্ঘ সময় লেগে থাকে। কিন্তু সালিসের বেলায় অপেক্ষাকৃত কম সময় প্রয়োজন হয়।

৪) সালিসের বেলায় প্রত্যেক পক্ষ (বীমাকারী এবং বীমা গ্রাহক) নিজ নিজ মধ্যস্থতাকারীকে ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। কিন্তু মোকাবেলায় বিচারকের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা আইন দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত।

৫) মধ্যস্থতার বেলায় মধ্যস্থতাকারী সাধারণত বীমা বিষয়ে পারদর্শী বা অভিজ্ঞ হয়ে থাকে। কিন্তু সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত বিচারক বীমা বিষয়ে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ হতে পারে।

৬) সালিসের বেলায় উভয় পক্ষের গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু মোকদ্দমরার বেলায় সেটা সম্ভব নয়।

৭) সালিসের মাধ্যমে দুই পক্ষের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু মোকদ্দমার বেলায় সেটা সম্ভব নয়।

আদালতের তুলনায় সালিসি বা মধ্যস্থতা ব্যবস্থা অধিকতর সুবিধাজনক হওয়া সত্বেও এই ব্যবস্থার একটি অন্তর্নিহিত দুর্বলতা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে এই যে, সালিসি বা মধ্যস্থতার রায় বা সিদ্ধান্ত কোন পক্ষের উপর বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ বা চাপানো সম্ভব নয়। কিন্তু আদালতের বেলায় বিচারের রায় উভয় পক্ষের জন্য অবশ্য পালনীয়।