বীমা মেলা- ২০১৮ এর সফলতা ও ব্যর্থতা প্রসঙ্গে

এ কে এম এহসানুল হক:

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বীমা মেলা- ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সরকারিভাবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ মেলার আয়োজন করে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বীমাখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট গণ্যমান্য এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ দুই দিনব্যাপী এই মেলায় উপস্থিত ছিলেন।

২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম বীমা মেলায় লেখকের অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। পাশাপাশি এবারের বীমা মেলায় উপস্থিত ছিলেন এমন কিছু ব্যক্তির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে।

প্রায় সকলেই একমত যে, মূলত যাদের জন্য এ বীমা মেলার আয়োজন অর্থাৎ জনসাধারণের কাছ থেকে এবারের বীমা মেলা উল্লেখযোগ্য কোন সাড়া জাগাতে পারেনি। দেশের ৭৮টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিটি কোম্পানি থেকে সর্বনিম্ন ৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১৫-২০ জন পর্যন্ত প্রতিনিধি এবারের বীমা মেলায় অংশগ্রহণ করে। তবে জনসাধারণের উপস্থিতি ছিল নগণ্য, যা চোখে পড়ার মতো।

প্রতিবছর বীমা মেলা আয়োজনের মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্বস্তরের জনগণকে বীমা সম্বন্ধে সচেতন করে তোলা এবং তাদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করা। বীমা মেলায় জনসাধারণের ব্যাপক এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে কেবলমাত্র সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব হতে পারে।

এই বীমা মেলায় আনুমানিক ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে যার মধ্যে বীমা কোম্পানির প্রত্যেকের আনুমানিক ব্যয়ের পরিমাণ কম করে হলেও ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

এবারের মেলার অসফলতার মূল কারণগুলো পর্যালোচনা করা প্রয়োজন, যাতে করে ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।

দেশে নানা ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়। বীমা মেলার সঙ্গে এসব মেলার তুলনা করা যায়। যেমন-  

ক. বইমেলা

খ. বাণিজ্য মেলা

গ. চিত্র প্রদর্শনী

ঘ. মোটরগাড়ি প্রদর্শনী

উপরে বর্ণিত মেলা বা প্রদর্শনীতে বিপুল পরিমাণ জনগণের সমাগম বা উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এর কারণ, মেলাগুলো আয়োজনের আগ থেকেই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। মিডিয়ায় প্রচারণাসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। এ ছাড়াও এসব মেলার যে প্রকৃতি তাও সাধারণ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এটাই অন্যান্য মেলার সাথে বীমা মেলার প্রকৃতিগত পার্থক্য।

বীমার প্রতি সর্বসাধারণের আস্থা এবং বিশ্বাসের অভাব মূলত বীমা শিল্পের বর্তমান নৈরাজ্যজনক অবস্থার জন্য দায়ি। এই সংকট থেকে বের হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। এর জন্য সরকার, বীমা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

এবারের বীমা মেলা জনসাধারণের মাঝে প্রত্যাশিত সাড়া জাগাতে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ব্যাপক প্রচারণার অভাবকে মূলত চিহ্নিত করা যেতে পারে।

বীমা মেলা শুরু হওয়ার অন্তত ১ মাস পূর্ব থেকে বীমা কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি এবং সামাজিক মাধ্যম বীমা মেলা সম্বন্ধে ব্যাপক প্রচার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ কাজটি বীমা কর্তৃপক্ষ এবং বীমা কোম্পানি প্রত্যেককে সমানভাবে বন্টন করে নিতে হবে। বীমা কোম্পানির স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে নিজেদের খরচে বীমা মেলার প্রচার করার পাশাপাশি কোম্পানির প্রচারও চালাতে পারে। অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে পারে।

গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি বীমার ওপর নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ ছবি ও প্রামাণ্য চিত্রের প্রদর্শনী, দেশের জনপ্রিয় শিল্পিদের নিয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠান/ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের মাঝে বীমা মেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলার ব্যাপারে সহায়ক হতে পারে।

বীমা কর্তৃপক্ষকে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, কেবলমাত্র অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যথেষ্ট নয়। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার কোনো যথার্থতা বা সার্থকতা নাই।