ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব প্রসঙ্গে

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: জীবন ঝুঁকিময়। জীবনের পদে পদে ঝুঁকি। ঝুঁকি সারাক্ষণ আমাদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছে। ঝুঁকি ছাড়া জীবন কল্পনা করা এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো সম্ভব না হলেও এর মাধ্যমে খানিকটা হলেও মানসিক প্রশান্তি মিলতে পারে।

ব্যক্তিগত জীবনে হোক কিংবা করপোরেট জগতেই হোক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। নিম্নে বর্ণিত কতিপয় উদাহরণের মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি চিত্র তুলে ধরা হলো।

ব্যক্তিগত জীবন (Personal/ Domestic Life):

১) মৃত্যু অবধারিত বা অবসম্ভাবী। কিন্তু সময়টা অনিশ্চিত। তাই পরিবারের রুটি-রুজি উপার্জনকারীর জীবন বীমা/ ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা ক্রয় করা প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে স্বাভাবিক বা দুর্ঘটনাজনিত যেকোন কারণে পরিবার প্রধানের মৃত্যু ঘটলে বীমার টাকা তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে কাজ করবে (Transfer of risk) ।

২) সড়ক দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে। মোটরগাড়ি বীমার মাধ্যমে মোটরগাড়ির মালিক দুর্ঘটনায় নিজস্ব গাড়ি এবং তৃতীয় পক্ষের ক্ষয়-ক্ষতির ঝুঁকি আবরিত করতে পারে (Transfer of risk) ।

৩) অব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার বাড়িতে না রেখে ব্যাংকের লকারে বা ভল্টে রাখলে সম্ভাব্য চুরি-ডাকাতির ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে (Reduction of risk) ।

৪) শেয়ার মার্কেটে টাকা বিনিয়োগের পরিবর্তে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট বা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি দূরীভূত করা সম্ভব হতে পারে (Elimination of risk) ।

৫) ধূমপান থেকে বিরত থাকলে ফুসফুসের সম্ভাব্য ক্যান্সারজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতে পারে (Reduction of risk) ।

করপোরেট জগত (Corporate World):

১) কল-কারখানা বা ফ্যাক্টরিতে প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্ণয় এবং নির্বাপন যন্ত্রপাতি যেমন স্মোক ডিটেক্টর, স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম, ফায়ার হোজ রিল, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ইত্যাদি স্থাপন ও কার্যক্ষম রাখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারী নিয়োজিত করার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে (Minimization of risk) ।

২) অফিস-আদালত বা কল-কারখানায় ‘ধূমপান’ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে (Reduction of risk) ।

৩) গুদাম ঘরে মাল উঠা নামা করার জন্য ডিজেল চালিত ফর্ক লিফট ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত ফর্ক লিফট ব্যবহার (Reduction of fire risk) ।

৪) কল-কারখানা বা ফ্যাক্টরির বিপরীতে অগ্নি বীমা (Fire Insurance) এবং মুনাফাজনিত ক্ষতির বীমা (Loss of Profit) ব্যবস্থার মাধ্যমে বীমা গ্রাহকের আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে (Transfer of risk) ।

৫) ধারে বিক্রয় (Sale on credit) না করার মাধ্যমে বিক্রেতার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে (Elimination of risk) ।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি জটিল বিষয়। পাঠকের বোঝার সুবিধার জন্য উপরে বর্ণিত উদাহরণসমূহ সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

জীবন এখন অতীতের তুলনায় অনেক জটিল এবং যান্ত্রিক। গতানুগতিক বা সাদামাটা চিন্তার সমাপ্তি বা ইতি টানার সময় এসেছে। উদ্ভাবনী চিন্তার জগতে বিপ্লব আনতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (Disaster Management), পরিবেশ ব্যবস্থাপনা (Environment Management), বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা (Flood Control Management), বায়ু দূষণ ব্যবস্থাপনা (Air Pollution Control Management) ইত্যাদি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নাই। এর জন্য প্রয়োজন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা।