2292

03/28/2024

বীমা নীতি বা বীমা মতবাদের পরিচয়

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৯

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: বীমা প্রধানত ৬টি নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো-

১। বীমাযোগ্য স্বার্থ (Insurable Interest)

২। চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাস (Utmost Good Faith)

৩। ক্ষতিপূরণ (Indemnity)

৪। ক্ষতির নিকটতম বা আসন্ন কারণ (Proximate Cause)

৫। অপরের অধিকারের উত্তরাধীকারী হওয়া (Subrogation Right) এবং

৬। ক্ষতির দাবি পূরণে অংশগ্রহণ (Contribution)

১। বীমাযোগ্য স্বার্থ (Insurable Interest):

বীমা পলিসি ক্রয় করার জন্য বীমা বস্তুর সঙ্গে বীমাগ্রহীতার আর্থিক সম্পর্ক থাকা জরুরি বা আবশ্যক, যা আইনের চোখে স্বীকৃত বা গ্রহণযোগ্য।

বীমাযোগ্য স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ-

ক) বীমাযোগ্য বিষয়বস্তু

খ) বীমাগ্রহীতার সাথে বীমা বিষয়বস্তুর আর্থিক সম্পর্ক

গ) বীমাগ্রহীতার সাথে বীমা বিষয়বস্তুর আর্থিক সম্পর্ক যা আদালত কর্তৃক গৃহীত এবং স্বীকৃত।

ঘ) বীমাগ্রহীতার সাথে বীমা বিষয়বস্তুর আর্থিক সম্পর্ক এমন যে, বীমার বিসয়বস্তুর ধ্বংসের কারণে বীমাগ্রহীতার আর্থিক ক্ষতিসাধন এবং বিষয়বস্তুর ক্ষতিসাধন না হলে আর্থিক উপকার বা লাভ।

২। চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাস (Utmost Good Faith):

এই মতবাদ বীমাগ্রহীতা এবং বীমকারী উভয় পক্ষেরই চুক্তির সময়ে চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাস প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাস নীতি সঠিক বা নির্ভুল তথ্য পরিবেশন বা উপস্থাপনার ওপর অধিক বা বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।

৩। ক্ষতিপূরণ (Indemnity):

অভিধানের পরিভাষায় ক্ষতিপূরণ বলতে সাধারণত ক্ষতির রক্ষণ, আশ্রয় বা নিরাপত্তা প্রদান করাকে বুঝায়। বীমা পরিভাষায় ক্ষতিপূরণ বলতে মূলত আর্থিক ক্ষতিপূরণকে বুঝায়। বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতির পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। দাবির ক্ষতিপূরণ কেবল প্রকৃত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেখানে লাভ বা মুনাফা অর্জনের কেন প্রকর সুযোগ নেই।

ক্ষতিপূরণ নীতির ব্যবহার:

ক) অতিরিক্ত বা অধিক পরিমাণ বীমা করা থেকে বীমাগ্রহীতাকে নিরুৎসাহিত করা।

খ) অসামাজিক ও অসৎ কাজ থেকে বীমাগ্রহীতাকে বিরত রাখা।

গ) প্রিমিয়াম লেভেল বীমাগ্রহীতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ধারণ করা।

ক্ষতিপূরণের শর্তাবলী:

১। বীমা আবরিত ঝুঁকির দ্বারা বীমা বিষয়বস্তুর ধ্বংস বা ক্ষতি সাধিত হলে বীমাগ্রহীতাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, এর দ্বারা বীমাগ্রহীতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২। ক্ষতির পরিমাণ অধিক হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ বীমাগ্রহীতা সর্বোচ্চ বীমার টাকার সমপরিমাণ টাকা পাওয়ার যোগ্য বা অধিকারী (পলিসি শর্ত সাপেক্ষে), কিন্তু তার অধিক নয়।

৩। বীমাগ্রহীতা বীমাকারীর নিকট থেকে প্রকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা সংগ্রহের পর তৃতীয় পক্ষের নিকট সংগৃহীত টাকার ওপর বীমাকারীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে।

৪। এই বীমা নীতি জীবন বীমা (Life Insurance) এবং ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা (Personal Accident Insurance)’র বেলায় প্রযোজ্য নয়। কারণ এই দুইটি বীমা ‘বেনিফিট’ বীমার অন্তর্ভুক্ত।

ক্ষতিপূরণ প্রদানের পদ্ধতি:

সাধারণ ৪ পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ সম্ভব। যেমন-

ক) নগদ টাকা প্রদান (Cash Payement)

খ) ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তি মেরামত (Repair of Damaged Property)

গ) প্রতিস্থাপন (Replacement of Lost Item)

ঘ) পুনঃপ্রতিষ্ঠা (Reinstatement)

৪। ক্ষতির নিকটতম বা আসন্ন কারণ (Proximate Cause):

বীমা দাবির বেলায় নিকটতম কারণ বলতে সক্রিয় (Active) এবং কার্যকর (Efficient) কারণকে বুঝায় যা বাইরের কোন শক্তির (External Cause) বা প্রভাব (Influence) ব্যতিরেকে ঝুঁকি ঘটাতে সাহায্য করে।

উদাহরণসরূপ-

ক) আগুন নির্বাপিত করার সময় দমকল বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত পানি বা ফোম দ্বারা সম্পত্তির ক্ষতি,

খ) আগুণের ধোঁয়ার কারণে সম্পত্তির ক্ষতি এবং

গ) দমকল বাহিনীর অগ্নিস্থলে পৌঁছানোর সময় প্রাচীর বা ফটকের ক্ষতিসাধন ইত্যাদি।

এই সমস্ত ক্ষেত্রে ক্ষতির নিকটতম কারণ হচ্ছে আগুণ। কারণ আগুণ সংগঠিত না হলে ওপরে উপরে বর্ণিত সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হত না।

৫। অপরের অধিকারের উত্তরাধীকারী হওয়া (Subrogation Right):

এই মতবাদ অনুযায়ী বীমাকারী বীমাগ্রহীতার দাবি পূরণ করার পর ক্ষতির জন্য দায়ী তৃতীয় পক্ষের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণের সমপরিমাণ টাকা উদ্ধার করার আইনগত ক্ষমতা বা যোগ্যতা রাখে। এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে, বীমাগ্রাহকের মুনাফাজনিত ক্ষতির বীমা (Loss of Profit) ব্যতিরেকে কোন অবস্থাতেই লাভ বা মুনাফা অর্জন করা Indemnity মতবাদের পরিপন্থী।

৬। ক্ষতি দাবি পূরণে অংশগ্রহণ (Contribution):

এই মতবাদ অনুযায়ী বীমা পলিসিতে একাধিক বীমাকারী অংশগ্রহণ করলে দাবির বেলায় প্রত্যেক বীমাকারী নিজ নিজ অংশের সমানুপাতে বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

ক্ষতিপূরণের কতিপয় পূর্ব শর্ত হচ্ছে;

ক) বীমাকৃত বিষয়বস্তু সকল পলিসিতে আবরিত থাকা

খ) বীমাকৃত ঝুঁকি (Peril) সকল পলিসিতে আবরিত থাকা এবং

গ) ঝুঁকির নিকটতম বা আসন্ন কারণ সকল বীমা পলিসিতে আবরিত থাকা।