2712

03/29/2024

গ্রাহকের সব টাকাই খেয়ে ফেলেছে এনআরবি গ্লোবাল লাইফ

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক: এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স গেলো পাঁচ বছরে সর্বমোট ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। আর ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ করেছে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে বীমা কোম্পানিটি গ্রাহকের জমা করা সব টাকাই খেয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় বীমা গ্রাহকের দায় পরিশোধে কোম্পানিটির সক্ষমতা নেই। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে দাখিল করা কোম্পানিটির ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপনী হিসাব পর্যালোচনা করে এই চিত্র উঠে এসেছে।

তথ্য অনুসারে, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৯ সালে প্রথম বর্ষ ও নবায়নসহ সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এই সংগ্রহ ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ২৩ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং নবায়ন ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ২০১৯ সালে বীমা কোম্পানিটি কমিশন, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট খরচ করে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে এই খরচ ছিল ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে কোম্পানিটি ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করে, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বা ৬০ শতাংশ বেশি।

এদিকে অনুমোদিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত খরচ করায় লাইফ ফান্ডের ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এনআরবি গ্লোবাল লাইফ। প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও লাইফ ফান্ডে ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তবে সর্বশেষ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৫৬ লাখ টাকা লাইফ ফান্ডে যোগ করতে সক্ষম হয়েছে বলে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যার মধ্যে সরকারী খাতে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাতে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।বীমা আইন ২০১০ মোতাবেক কোম্পানি শুরুর প্রাক্কালে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা মালিকপক্ষকে সরাসরি বিনিয়োগ করতে হয় এবং কোম্পানি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা উঠানো যায় না। অর্থাৎ কোম্পানিটি প্রিমিয়াম আয় থেকে এখনো পর্যন্ত নতুন কোন বিনিয়োগে সমর্থ হয়নি। কোম্পানিটির প্রারম্ভিক পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৮ কোটি টাকা।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ আবু মুসা সিদ্দিকী উল্লেখিত তথ্যের বিষয়ে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, ‘এসব তথ্যের সত্যতা আমি এই মুহুর্তে যাচাই করতে না পারলেও আমাদের লাইফ ফান্ডে কোন ঘাটতি নেই। এছাড়াও প্রিমিয়াম সংগ্রহের ক্ষেত্রে মার্কেটিং খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও বিনিয়োগ আয় থেকে তা পূরণ হয়ে যায়’।

অর্থাৎ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে দাখিলকৃত হিসাবের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, সংশ্লিষ্ট বীমা গ্রাহকদের দায় পরিশোধের কোন সক্ষমতাই বর্তমানে নেই কোম্পানিটির। এছাড়া, বর্তমানে যে বিনিয়োগ রয়েছে তার সম্পূর্ণটাই মালিকপক্ষের পরিশোধিত মূলধনের অংশ।