3357

03/29/2024

সম্পত্তি বীমায় প্রি-ইন্সপেকশনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২১

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: সম্পত্তি বীমা বিশেষ করে অগ্নি বীমার বেলায় প্রি-ইন্সপেকশন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এই পদ্ধতি সম্পত্তি বীমা অবলিখনের বেলায় একটি প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) সম্পত্তি বীমার বেলায় গুণগত বা মানগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

অগ্নি বীমায় নৈতিক বিপদ (Moral Hazard) কে একটি বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

প্রি-ইন্সপেকশনের মাধ্যমে অনেক সময় নৈতিক বিপদের উপস্থিতি উপলব্ধি বা অনুমান করা সম্ভব হতে পারে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ- ঝুঁকি সম্পর্কে সম্পত্তি মালিকের উদাসীন মনোভাব, সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা, হিসাব বই, স্টক রেজিস্টার সুষ্ঠুভাবে রক্ষণের ব্যাপারে গাফিলতি ইত্যাদি নৈতিক বিপদের ইঙ্গিত বহন করে।

অগ্নিকাণ্ডে সম্পত্তির ক্ষতি এক ধরনের অপচয়, যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রি-ইন্সপেকশন এই ধরণের অপচয় প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

অনেক সময় বীমা প্রস্তাব পত্র (Proposal Form) -এ প্রথমে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন বা তথ্য গোপন কোনো বিরল বা নতুন ঘটনা নয়।

প্রি-ইন্সপেকশনের মাধ্যমে সম্পত্তির প্রকৃত বা সত্যিকারের অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব।

অন্ধভাবে প্রস্তাব পত্রে বর্ণিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সম্পত্তি অবলিখন এক মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা দাবির বেলায় বীমা কোম্পানির জন্য এক চরম আর্থিক সঙ্কটের বার্তা বয়ে আনতে পারে।

প্রি-ইন্সপেকশনের বেলায় ঝুঁকির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকারী বিষয় যেমন- অগ্নি নিরূপন ব্যবস্থা (ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম) এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা (ফায়ার প্রোটেকশন সিস্টেম) সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা করা করে দেখা প্রয়োজন।

ফায়ার এলার্ম সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর ইত্যাদি অগ্নি নিরুপণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম, ফায়ার হোজ রিল, সার্কিট ব্রেকার, ফায়ার ডোর, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতি যেমন- অগ্নি নির্বাপন সিলিন্ডার (CO2 type, Dry powder type, Foam type) ইত্যাদি (যার ব্যবহার ব্যবহার ব্যবসার ধরন বা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল) অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত।

বীমা স্থলে উপরে বর্ণিত ব্যবস্থা সমূহের উপস্থিতি বা প্রতিস্থাপনই যথেষ্ট নয়। অগ্নিকাণ্ডের বেলায় এই সমস্ত ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এ ছাড়াও এই সমস্ত যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পেশাদারী কোম্পানির সাথে চুক্তি থাকা আবশ্যক।

প্রি-ইন্সপেকশনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সম্পত্তি বীমা গ্রহণ সম্ভব বা অসম্ভব সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব হতে পারে। সম্প্রতি বীমা গ্রহণ সম্ভব হলে অবলিখনের শর্তাবলী (যা নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ) পালন করতে হবে, যা পুন:ইন্সপেকশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

প্রি-ইন্সপেকশনের মাধ্যমে ঝুঁকিতে বিদ্যমান অবাঞ্চিত বিপদ বা উপাদানসমূহ অপসারণ বা নিরাময়ের দ্বারা অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব।

এই পদ্ধতির মাধ্যমে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো বা পরিহার করা সম্ভব হতে পারে, যা বীমা কোম্পানির জন্য আর্থিকভাবে স্বাস্থ্যকর প্রমাণিত হতে পারে।

উপরে বর্ণিত কারণসমূহ পর্যালোচনা সাপেক্ষে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সম্পত্তি বীমা বিশেষ করে অগ্নি বীমায় প্রি-ইন্সপেকশনের ভূমিকা অপরিহার্য এবং অপরিসীম।