3367

03/29/2024

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূল্য এবং প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২১

 

 

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management)” প্রো- একটিভ” তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, ”রিএকটিভ” তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে নয়।

বিখ্যাত প্রবাদ “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম” কিংবা “সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়” প্রো-একটিভ তত্বেকে সমর্থন করে।

বীমার বেলায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এক কার্যকরী অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন উপাদান বা কলা-কৌশলের উপর নির্ভরশীল যেমন;

ক. ঝুঁকি নির্মূল (Risk Elimination), খ. ঝুঁকি হ্রাস (Risk Reduction), গ. ঝুঁকি উপশম (Risk Minimization/ Mitigation) এবং ঘ. ঝুঁকি হস্তান্তর (Risk Transfer).

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে সকল ক্ষেত্রে ঝুঁকি নির্মূল করা সম্ভব নাও হতে পারে। ঝুঁকির ব্যবস্থাপনার একটি মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে ঝুঁকি নির্মূলের মাধ্যমে সম্ভাব্য স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা।

বীমা সুবিধার জন্য ঝুঁকি সমূহ মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে যেমন; ১. বীমাযোগ্য ঝুঁকি ২. গড় ঝুঁকি এবং ৩. অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি।

সুষ্ঠু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গড় ঝুঁকি গ্রহণ যোগ্য ঝুঁকিতে পরিণত করা সম্ভব হতে পারে। নিম্নে বর্ণিত দৃষ্টান্ত সমূহ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উপাদানের কার্যকারিতা সম্বন্ধে সম্পর্কে ধারণা দিতে সম্ভব হতে পারে।

ক. ঝুঁকি নির্মূল করণ:

১. টিনের চালের বদলে ফ্যাক্টরি বিল্ডিং ইত্যাদিতে স্থায়ীভাবে কংক্রিটের ছাদ নির্মাণের মাধ্যমে ঝড়-তুফান সংক্রান্ত ঝুঁকি নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে।

২. গুদামে মাল উঠানামা করার জন্য ব্যবহৃত ডিজেল চালিত ফর্ক লিফটের পরিবর্তে ব্যাটারী চালিত ফর্ক লিফট ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজেল লিফটের কারনে অগ্নি সংগঠন নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে।

খ. ঝুঁকি হ্রাস করণ:

১. “নো স্মোকিং” নীতি প্রয়োগ বা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগুনের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে।

২. গ্যাস স্টেশনে গাড়ির ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রাখার মাধ্যমে অগ্নির ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে।

গ.ঝুঁকি উপশম লঘু করণ:

১. ফ্যাক্টরি ইত্যাদিতে ”স্প্রিংকলার সিস্টেম” প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ উপশম করা যেতে পারে।

২. অনুরূপভাবে “ফায়ার ডোর” প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উপশম করা যেতে পারে।

ঘ ঝুঁকি হস্তান্তর করন:

১. সম্পত্তির মালিক বীমা ক্রয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকি যেমন আগুনের ঝুঁকি/ চুরির ঝুঁকি বীমা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে পারে।

২. বীমা কোম্পানি তাদের ধারণকৃত ঝুঁকির একটি অংশ পূনঃবীমার মাধ্যমে পুনঃবীমা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে পারে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ঝুঁকি হ্রাস এবং ঝুঁকি উপশমে দুয়ের মধ্যে পার্থক্য সামান্য।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সকল রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ না করলেও নিঃসন্দেহে এই পদ্ধতি ঝুঁকির গুণগত বা মানগত উন্নয়নে এক সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে। বর্তমান বিশ্বে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কর্পোরেট জগতে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জীবনে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। এটিকে ছোট বা ক্ষীন করে দেখার কোন সুযোগ বা অবকাশ নাই।