3405

03/29/2024

সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনে যেসব সুপারিশ করল বিআইএ

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপারভাইজরি পদগুলোর নতুন নামকরণ, এসব পদে খরচের হার নির্ধারণ এবং এফএ থেকে জিএম (উন্নয়ন) পর্যন্ত ৬ পদে নিম্নস্তর অপেক্ষা ঊর্ধ্বতন স্তরে আর্থিক সুবিধার হার কম রাখাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) ।

লাইফ বীমা কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত একটি খসড়া সার্কুলারের বিষয়ে এসব সুপারিশ করেছে বীমা মালিকদের এই সংগঠন। বৃহস্পৃতিবার (১০ জুন, ২০২১) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে পাঠিয়েছে বিআইএ।

তথ্য অনুসারে, লাইফ বীমা কোম্পানির সুপারভাইজরি লেভেলে বর্তমান প্রচলিত ৫টি গ্রেডের পরিবর্তে ৩টি গ্রেড রাখাসহ এসব গ্রেডের জন্য বেতন-ভাতা, কমিশন, বোনাস ও যাতায়াতসহ সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ খরচের বাধ্যবাধকতা রেখে গত ২৭ মে এই খসড়া সার্কুলার প্রকাশ করেছে আইডিআরএ

এক্ষেত্রে বিআইএ বলছে, প্রস্তাবিত সার্কুলারের মাধ্যমে লাইফ বীমা খাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত অসংখ্য মাঠ কর্মীর মাঝে শৃঙ্খলা আসবে এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। সর্বোপরি, সার্কুলারটি লাইফ বীমা খাতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

আইডিআরএ’র খসড়া সার্কুলারের সাথে একমত পোষণ করে বিআইএ যেসব নতুন প্রস্তাব রেখেছে সেগুলো হলো-

সুপারভাইজরি লেভেলে সর্বোচ্চ তিনটি গ্রেডে কর্মকর্তা নিয়োগ করার বিষয়ে আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছে বিআইএ। তবে এ সকল গ্রেডের বা পদের নতুন নামকরণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের প্রস্তাবিত এসব পদের নাম: জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন), ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন), এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন) ।

এক্ষেত্রে বিআইএ’র যুক্তি হচ্ছে বর্তমানে কর্মরত সুপারভাইজরি লেবেলে ৫টি গ্রেডে কর্মরত কর্মকর্তাদেরকে ৩টি গ্রেডে পদায়ন করতে হলে অবসায়নকৃত দুটি গ্রেডের কর্মকর্তাদের নতুনভাবে (উচ্চতর গ্রেডে অথবা নিম্নতর গ্রেডে) পদায়ন করতে হবে। এতে মাঠপর্যায়ে অনেক কর্মকর্তা নিরুৎসাহিত হতে পারে।

সুপারভাইজরি লেভেলে ৩টি গ্রেডে নতুন নামকরণ করা হলে এই জাতীয় জটিলতা নিরসন করা যাবে। একইসঙ্গে সুপারভাইজরি লেভেলে কিছুটা নতুনত্ব আসবে এবং কর্মকর্তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ।

বীমা মেয়াদকাল বিবেচনায় নিয়ে সুপারভাইজরি ৩টি গ্রেডে খরচের হার নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, ফাইন্যান্সিয়াল এসোসিয়েট (এফএ), ইউনিট ম্যানেজার (ইউএম) ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (বিএম) এর প্রাপ্য কমিশন সিডিউল বীমা মেয়াদকালের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এমনকি লাইফ বীমাকারীর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমায় যে নির্ধারিত হার রয়েছে তাও বীমার মেয়াদকালের সাথে সম্পৃক্ত।

তাই সুপারভাইজরি ৩টি গ্রেডে যে সর্বোচ্চ কমিশন বা বেতন-ভাতা (পারফরম্যান্স বোনাস, যাতায়াত ভাতা ইত্যাদিসহ) নির্ধারণ করা হবে তা বীমার মেয়াদকাল সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অধিকন্তু বীমার মেয়াদকাল বিবেচনায় না রেখে নির্দিষ্ট হারে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হলে তুলনামূলকভাবে কম মেয়াদে পলিসির প্রিমিয়াম সংগ্রহে যে পরিমাণ ব্যয় হবে, তা সংশ্লিষ্ট বীমা পলিসির পূর্ণমেয়াদে বিনিয়োগজনিত লাভ দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

বিআইএ’র প্রস্তাব- ফাইন্যান্সিয়াল এসোসিয়েট, ইউনিট ম্যানেজার, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন), ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন) এবং জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন) এই ৬ পদে নিম্নস্তর অপেক্ষা ঊর্ধ্বতন স্তরে আর্থিক সুবিধার হার কম হবে। সংগঠনটির দাবি, লাইফ বীমা কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নিম্নস্তর অপেক্ষা ঊর্ধ্বতন স্থরে খরচের হার কম হতে হবে- এটিও জীবন বীমার একটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম।

কারণ হিসেবে বিআইএ বলছে, উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের অধীনেই নিম্ন স্তরের কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকেন এবং অধীনস্থ কর্মকর্তার প্রিমিয়াম সংগ্রহের (মূলত ফাইনান্সিয়াল এসোসিয়েটের সংগৃহীত প্রিমিয়াম)’র ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। নিম্নস্তর অপেক্ষা ঊর্ধ্বতন স্তরে আর্থিক সুবিধার হার অধিক হলে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হবে। কারণ অধিক কমিশন প্রাপ্তির জন্য সকলের ঊর্ধ্বতন স্তরে যোগদান করতে চাইবে। ফলে বিদ্যমান বাস্তবতায় পিরামিড আকারে সাংগঠনিক কাঠামো বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর প্রত্যেক লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য পিরামিড আকারে সাংগঠনিক কাঠামো গঠন একান্ত আবশ্যক।

এক্ষেত্রে আলোচিত স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম দু’টি বাস্তবায়নের জন্য সার্কুলার ০৩(খ)/২০১২ এর ‘বি’ পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশও করেছে বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ।

প্রস্তাবিত সার্কুলারটি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ হতে কার্যকর করার জন্য সুপারিশ করেছে বিআইএ। সংগঠনটি বলছে, প্রস্তাবিত সার্কুলারে নতুন সাংগঠনিক কাঠামো পূর্বের সার্কুলার ০৩(খ)/২০১২ এর সাংগঠনিক কাঠামোতে ভিন্নতর। তাই মাঠ পর্যায়ে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রতিটি লাইফ বীমা কোম্পানির কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।