3467

04/17/2024

অগ্নি বীমায় ভুয়া বা জাল দাবি প্রসঙ্গে

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২১

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: অগ্নি বা সম্পত্তি বীমায় ভুয়া বা জাল দাবি নতুন কোন ঘটনা নয়। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লাভের আশায় এই অবৈধ পন্থার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।

ভুয়া বা জাল দাবি প্রমাণ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। আর এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগের ফায়দা লুটছে। এই অপরাধ সংক্রামক ব্যাধির মত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অগ্নি বীমার মূল লক্ষ্য:

অগ্নি বা সম্পত্তি বীমার মূল বা প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আকস্মিক এবং দুর্ঘটনাজনিত কারণে সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।

এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বীমা গ্রাহক বা তার এজেন্ট কর্তৃক সম্পত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগ (Arson) সকল অগ্নি বা সম্পত্তি বীমায় একটি সুনির্দিষ্ট বহির্ভুত কারণ।

বীমা চুক্তির মূল নীতি:

সকল বীমা চুক্তি চূড়ান্ত সদবিশ্বাস (Utmost Good Faith) নীতির উপর নির্ভরশীল। ভুয়া বা জাল দাবির মাধ্যমে বীমার টাকা উদ্ধারের প্রচেষ্টা এই নীতির পরিপন্থী। এটি একটি গুরুতর অন্যায় এবং গর্হিত কাজ যা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নৈতিক বিপদ (Moral Hazard):

বীমা বিশেষজ্ঞদের ধারণা নৈতিক বিপদ এই অপরাধ সংগঠনের এক বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। ভুয়া বা জাল দাবি এক প্রকার সামাজিক ব্যধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। শক্ত হাতে এই সংক্রমণের প্রতিরোধ এবং এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বীমা চুক্তির পূর্বে নৈতিক বিপদের উপসর্গসমূহ:

বীমা চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে প্রস্তাবিত ঝুঁকি পরিদর্শন (Pre-Inspection)’র সময় নৈতিক বিপদের বিভিন্ন উপসর্গ দৃষ্টিগোচর পরিলক্ষিত হতে পারে। যেমন,

১। সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা বা গাফিলতির ছাপ।

২। হিসাব বই (Books of Account) সুষ্ঠুভাবে লেখার ব্যাপারে অনিয়ম বা গরমিল।

৩। ঝুঁকি উন্নতির ব্যাপারে সার্ভেয়ারের সুপারিশ গ্রহণে অনিচ্ছা বা অনীহা প্রকাশ ইত্যাদি।

ভুয়া বা জাল দাবির সম্ভাব্য কারণসমূহ:

ভুয়া বা জাল দাবির জন্য দায়ী সম্ভাব্য কারণসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো-

১। ব্যবসায় বিরাজমান মন্দা অবস্থা।

২। ব্যাংক লোন পরিশোধে ব্যর্থতা বা অক্ষমতা।

৩। মালামাল বিশেষ করে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য ঔষধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া।

৪। ফ্যাশন পরিবর্তনের কারণে বিশেষ করে ড্রেস সামগ্রী অচল বা বিক্রির অযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়া ইত্যাদি।

এসব অপরাধ দমনে বীমা কোম্পানির করণীয়:

স্পষ্ট প্রমাণাদি এবং উপযুক্ত তথ্যের অভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর এক বৃহৎ অংকের টাকা ভুয়া বা জাল দাবি বাবদ পরিশোধ করা হয়ে থাকে, যা বীমা কোম্পানি তথা বীমা খাতের জন্য এক বড় ধরনের অপচয়।

পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোতে বীমা কোম্পানি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে টাকা ব্যয় করে থাকে।

বিভিন্ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে:

১। ভুয়া বা জাল দাবি সম্বলিত তথ্য ‘ডাটা’ হিসেবে সংরক্ষণ।

২। নিজেদের মধ্যে নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান।

৩। মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার।

৪। নিজেদের সম্পদ ও জনবল ব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়া বা জাল দাবির অনুসন্ধান এবং পরীক্ষা ইত্যাদি।

প্রয়োজনে উন্নয়নশীল বিশ্বের বীমা খাত এ ব্যাপারে নিজ নিজ সরকারের নিকট সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করতে পারে এবং বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

ভুয়া বা জাল দাবি এক প্রকার সামাজিক ব্যাধি, যা বীমা কোম্পানির জন্য এক মারাত্মক মাথাব্যথা এবং চিন্তা বা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অপরাধ হয়তো সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়।

তবে বীমা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের এ ব্যাপারে সদা সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অপরাধের তীব্রতা এবং সংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে।