3911

03/28/2024

ভ্যালেন্টাইন’স ডে: তরুণদের যেভাবে আশা জাগাচ্ছে বীমা

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

আবদুর রহমান আবির: বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সারাবিশ্বে উৎযাপিত হয় ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’। নির্মোহ ভালাবাসা থেকে দিবসটির গোড়াপত্তন হলেও আজ তা ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। অন্যান্য কোম্পানির পাশাপাশি ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র বাণিজ্যিকীকরণে পিছিয়ে নেই বিশ্বের বীমা কোম্পানিগুলো। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ভ্যালেন্টাইন শব্দের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের পণ্যের নামকরণ করছে। শুধু তাই নয়, এসব পণ্যের বৈশিষ্ট্যেরও মিল রয়েছে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে।

ভালোবাসার বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয় মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে। ১৯৮০ সালের দিকে দেশটির ডায়মন্ড কোম্পানিগুলো প্রথম “ভ্যালেন্টাইন’স ডে” পালন শুরু করে। এরপর থেকেই জুয়েলারি চলে আসে ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র প্রচলিত গিফটের তালিকায়। আর সেই গিফটের নিরাপত্তা দিতে এগিয় আসে বীমা কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি আরও নতুন এবং সময়োপযোগী অফার নিয়ে গ্রাহকের মন কাড়তে চেষ্টা করে।

ভালোবাসা দিবসের এই বীমাকে বলা হচ্ছে “ভ্যালেন্টাইন’স ইন্স্যুরেন্স”। যার মূল কথা হলো “ইন্স্যুর ইওর লাভ” বা আপনার প্রেমের বীমা করুন। এই বীমার মাধ্যমে ভালোবাসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। তবে এই প্রচেষ্টা দেশভেদে নানামুখী হতে পারে। অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন’স ইন্স্যুরেন্স পণ্যের ধরণ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।

যাদের গার্ল ফ্রেন্ড নেই এবং ভালোবাসা দিবসে উপহার পাওয়া থেকে বঞ্চিত- তাদের জন্য রয়েছে এক ধরণের বীমা পলিসি। যার মাধ্যমে গ্রাহককে ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে সুন্দরী নারীর পক্ষ থেকে উপহার ও চিঠি পাঠানো হয়। আবার যারা প্রেমিকাকে দামি উপহার প্রদান করতে চান অথবা বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্ট বা বাগদান করতে চায় তাদের জন্যও রয়েছে বীমা পলিসি।

ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ইনস্টিটিউটের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা জিনি এম স্যালভেটর’র মতে, এই বীমা পলিসি গ্রাহকের মূল্যবান গহনা বা উপহার চুরি কিংবা হারিয়ে গেলে আর্থিক দুর্দশা কমাতে পারে। সুতরাং যদি কাউকে ভালোবাসার বা বিয়ের প্রস্তাব করার পরিকল্পনা থাকে তবে আংটি উপস্থাপনের আগে তার বীমা করুন।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বীমা পণ্য হলো ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স। ভালোবাসার উচ্ছ্বাসকে দীর্ঘায়িত করতে এই বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপলক্ষে বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরণের পণ্যের প্রস্তাব করে থাকে।

দিবসটিতে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে বাড়ি, গাড়ি, বিয়ে ইত্যাদির জন্য নতুন নতুন বীমা পন্য বাজারে ছাড়ে কোম্পানিগুলো। তবে ভ্যালেন্টাইন’স ডে তে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে জীবন বীমা পণ্য বেশি উযুক্ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এলআইএমআরএ’র একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দশজন নাগরিকের মধ্যে ৪ জনই বলেছে- জীবনের ঘটনা যেমন, বিয়ে করা, বাড়ি কেনা এবং পারিবারিক জীবন শুরু করা এসবই মানুষের জীবন বীমা ক্রয়ের শীর্ষ কারণ। সর্বোপরি, ভালোবাসাকে আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা করাই হলো প্রধান লক্ষ্য। ভালোবাসার জন্য জীবন বীমার গুরুত্ব তুলে ধরতে বীমা কোম্পানিগুলো ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে এসব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।

‘লাইফ হ্যাপিনেস’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ শতাংশ নাগরিক ভালবাসার জন্য বীমা করে। অর্থাৎ তাদের বীমা করার মূল কারণ হলো পরিবারের প্রতি ভালোবাস। পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসে বলেই তাদের আর্থিক সহযোগিতা এবং জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে বীমার আশ্রয় নেয়।

জাপানের ভ্যালেন্টাইন’স ডে তে চকোলেট আদান-প্রদানের রেওয়াজ একটু বেশি। দেশটির মেয়েরা প্রিয়জনকে নিজের হাতে তৈরি উপহার দিতে পছন্দ করে বেশি। তবে ভালোবাসা দিবসে পুরুষরা সাধারণত কোনো ধরনের উপহার দেয় না। ভালোবাসা দিবসের ঠিক এক মাস পর অর্থাৎ ১৪ মার্চ 'হোয়াইট ডে তে জাপানি পুরুষরা তাদের প্রিয় নারীকে উপহার প্রদান করে।

জাপানি চকোলেট কোম্পানিগুলোর তথ্য মতে, বছরজুড়ে তাদের যে পরিমাণ চকোলেট বিক্রি হয় তার অর্ধেকই বিক্রি হয় ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে। কিন্তু যারা গরীব বা যাদের গার্ল ফ্রেন্ড নেই অর্থাৎ যারা এদিন একটা চকোলেটও উপহায় পায় না তাদের কি হবে?

মূলত এই প্রশ্নকে ঘিরেই জাপানে যাত্রা শুরু করে ভ্যালেন্টাইন’স ইন্স্যুরেন্স।

এর মাধ্যমে ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে কোন উপহার না পাওয়ার বেদনা এড়িয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়। সেবাটি খুবই সাধারণ। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে বীমা পলিসি গ্রাহক একজন সুন্দরি ভদ্রমহিলার কাছ থেকে স্ব-নামেমাত্র ব্যক্তিগত বার্তা এবং চকোলেটের একটি প্যাকেজ পাবেন।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে ইন্স্যুরেন্স গ্রাহককে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদানের মাধ্যমে দিবসটিতে কোন উপহার না পাওয়ার অসস্তি দূর করে। মাত্র পাঁচশ’ ইয়েন খরচ করে ভ্যালেন্টাইন’স বীমা ক্রয় করা যায়।