3992

04/20/2024

ফারইস্টের ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, নজরুল-হেমায়েতসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশ: ৮ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহসহ কোম্পানিটির ৯ পরিচালক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ।  আজ মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুসারে, প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং পিএফআই প্রোপার্টিজ লিমিটেড নামক দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভেঙ্গে দেয়া পরিচালনা পর্ষদ। ১৫৮তম পর্ষদ সভার ভুয়া সার-সংক্ষেপ তৈরি করে সেটির বরাত দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় এ অর্থ।  প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহসহ ৯ পরিচালক-কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে এ অর্থ হাতিয়ে নেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)'র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পৃথক ২টি মামলা করছে সংস্থাটি।

আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক কে এম খালেদ, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খালেদ, পরিচালক এম এ খালেক, পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, পরিচালক ফরিদউদ্দিন এফসিএ, পরিচালক আসাদ খান, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আবদুল আজিজ এবং অপসারিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ।

দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩) ড. মোহাম্মদ জহিরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করেন। টিমের অপর সদস্যরা হলেন, সহকারি পরিচালক শারিকা ইসলাম ও সহকারি পরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে পারষ্পরিক যোগসাজশে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লিমিটেড (এফআইএলআইসিএল) এর ১৫৮তম পর্ষদ সভার কার্য বিবরণীর ভুয়া সার-সংক্ষেপ সৃজন করে এ সার-সংক্ষেপের বরাত দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার, মতিঝিলে ‘এফআইএলআইসিএল’র নামে রক্ষিত ২২টি এমটিডিআর জামানত রেখে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পিএফআই প্রপার্টিজ লিমিটেডকে ৪০ কোটি টাকার ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ’ ৩৯ টাকা আত্মসাত করেন। যা ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এম এ খালেক, কে এম খালেদ, ফরিদউদ্দিন, মিজানুর রহমান, আসাদ খান এবং এম এ খালেকের পুত্র শাহরিয়ার খালেদ একই সঙ্গে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য। সুতরাং ফারইস্টের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়তে উল্লাহ, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আবদুল আজিজ এবং এফআইএলআইসিএল ও প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক এম এ খালেক, কে এম খালেদ, ফরিদউদ্দিন, মিজানুর রহমান, আসাদ খান ও শাহরিয়ার খালেদ পরষ্পর যোগসাজশের মাধ্যমে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ কোটি টাকা তাদেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পিএফআই প্রোপার্টিজ লিমিটেডকে ঋণ দিয়েছেন। পরবর্তীতে এ ঋণ পরিশোধ না করে আত্মসাত করেন। এর ফলে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মোট ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

উল্লেখ্য, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া আয় ব্যয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘আয় ও বিনিয়োগের ১৪শ’ কোটি টাকার হদিস নেই: বীমা দাবি পাচ্ছে না ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহকরা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি।  একই বছরের ২৪ জুন ‘সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতেই খরচ ১৪২ কোটি টাকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে এই অনলাইন পোর্টাল।

এসব সংবাদ আমলে নিয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরই ধারাবাহিকতায় ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ বীমা কোম্পানিটিতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।