4177

03/29/2024

প্রি-ইনস্পেকশন সার্ভে: সার্ভেয়ারদের দায়িত্ব ও করণীয়

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: সম্পত্তির প্রি-ইন্সপেকশন সার্ভে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রস্তাবপত্রে অনেক সময়ই ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়ে থাকে, যা অবলিখকদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নিয়ম অনুযায়ী বীমার জন্য পাঁচ কোটি টাকার অধিক সকল সম্পত্তির প্রি-ইন্সপেকশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রি-ইন্সপেকশনের বেলায় সার্ভেয়ারদের যে সমস্ত দিক বিশেষ যত্ন ও গুরুত্বসহকারে দেখা প্রয়োজন নিম্নে সেই সমস্ত বিষয়ের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো।

১। হাউসকিপিং (Housekeeping):

হাউসকিপিংয়ে সাধারণত যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত তা হচ্ছে- পরিষ্কার পরিছন্নতা; সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; সাধারণ মেইনটেন্যান্স বা পরিচর্যা ইত্যাদি।

২। ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন (Electrical Installation):

ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশনের মধ্যে রয়েছে-

ইলেকট্রিক্যাল ব্যবস্থাপনা: অনেক সময় দেখা যায় খরচ কমানোর জন্য কমদামি বা নিম্নমানের ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ওভারলোডিং অফ সিস্টেম: যা শর্ট-সার্কিট সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে। ইলেকট্রিক্যাল লুজ কানেকশনও এতে মদদ জোগাতে পারে।

৩। অগ্নি নির্ণয় এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা (Fire Detection and Protection System):

অগ্নি নির্ণয় ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে- স্মোক ডিটেকশন সিস্টেম; ফায়ার এলার্ম সিস্টেম ইত্যাদি।

অগ্নি নিবারণ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে- ফায়ার হোজ রিল; অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি; ফায়ার ব্লাঙ্কেট; স্যান্ড বাকেট; অটোমেটিক স্প্রিংকলার সিস্টেম ইত্যাদি।

সার্ভেয়ারকে নিশ্চিত হতে হবে যে, এই সমস্ত ফায়ারফাইটিং ফ্যাসিলিটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যার জন্য বার্ষিক ব্যবস্থাপনা চুক্তি (Annual Maintenance Contract) বর্তমানে কার্যকর রয়েছে।

৪। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষতির পরিমাণ (Probable Maximum Loss- PML):

প্রি-ইন্সপেকশনের বেলায় সম্পত্তির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষতির পরিমাণ (পিএমএল) নির্ণয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একটি রক্ষনশীল পদ্ধতি, যার প্রবর্তক হচ্ছে এসোসিয়েশন অব ব্রিটিশ ইন্স্যুরার (এবিআই)।

এই পদ্ধতিতে বিদ্যমান সকল প্রকার অগ্নি নির্ণয় এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বিবেচনায় নেয়া হয় না। অর্থাৎ এই সমস্ত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ধরে নেয়া হয় এদের অস্তিত্ব নেই।

এই পদ্ধতিতে একটি সম্পত্তি (Unit of risk) থেকে অন্য একটি সম্পত্তির ন্যূনতম ব্যবধান ২৫ মিটার হতে হবে।

সহজে বোঝার জন্য নিম্নে বিভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা করা হলো-

ক) এই পদ্ধতি অনুযায়ী একক ইউনিট রিস্কের বেলায় (যেমন- ফ্যাক্টরি ইউনিট বা গুদামঘরের বেলায়) পিএমএল দাঁড়াবে ১০০%।

খ) যেখানে একই কম্পাউন্ডে দুই ইউনিট রিস্ক (যেমন- ফ্যাক্টরি ইউনিট এবং গুদামঘর বা ওয়্যারহাউজ) অবস্থিত সেখানে দুইটি ইউনিটের মধ্যে দূরত্ব যদি ২৫ মিটারের কম হয় তবে পিএমএল দাঁড়াবে ১০০%।

গ) আবার দুই বা ততোধিক ইউনিটের মধ্যে যদি নূন্যতম দূরত্ব ২৫ মিটার হয় তবে টার্গেট রিস্ক অর্থাৎ সকল ইউনিটের মধ্যে যার মূল্য অধিক তার উপর ভিত্তি করে পিএমএল নির্ধারণ করতে হবে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ- ফ্যাক্টরির মূল্য ৬০ কোটি টাকা এবং গোডাউনে মজুদকৃত মালামালের মূল্য ৪০ কোটি টাকা (সম্পত্তির সর্বমোট মূল্য ১০০ কোটি টাকা) । এক্ষেত্রে পিএমএল হবে ৬০%  এবং টার্গেট রিস্ক হবে- ফ্যাক্টরি।

৫। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management)

সার্ভেয়ারকে প্রয়োজনে ঝুঁকি উন্নয়ন (Risk Improvement) সংক্রান্ত সুপারিশ করতে হবে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ: ফ্যাক্টরিতে স্মোক ডিটেক্টর এবং ফায়ার এলার্ম সিস্টেম স্থাপন; ডিজেলচালিত ফর্ক লিফট এর পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত ফরকলিফট এর ব্যবহার ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে সার্ভেয়ারকে মালিক বা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে হবে এবং ঝুঁকি উন্নয়ন সংক্রান্ত সুপারিশ করতে হবে।

শুধু সুপারিশ করাই যথেষ্ট নয়, এর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে (যেমন ১৫ থেকে ৩০ দিন ইত্যাদি) ।

সার্ভেয়ারকে নির্ধারিত এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের পর দ্বিতীয় সার্ভে (Re Inspection)  করতে হবে এবং রিস্ক ইমপ্রুভমেন্ট রিকমেন্ডেশন পালন করা হয়েছে কিনা তা অরিজিনাল প্রি-ইন্সপেকশন রিপোর্টের সাথে সংযোজন (Addendum)  হিসেবে দেখাতে হবে।

এ কথা মনে রাখতে হবে যে, প্রি-ইন্সপেকশন রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বীমা কোম্পানি সাধারণত ঝুঁকি অবলিখন (Risk Underwriting) করে থাকে। এই কারণে প্রি-ইন্সপেকশন রিপোর্টে কোন প্রকার ভুল, বিভ্রান্তিমূলক বা মিথ্যা তথ্য পরিবেশন গ্রহণযোগ্য নয়।