যেসব সংশোধন আসছে বীমা আইনে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বীমা খাতের উন্নয়নে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা বীমা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে বীমা আইনের খসড়া সংশোধনী প্রকাশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
আইনটিকে যুগোপযোগী করতে যেসব বিষয়ে সংশোধন আনা হবে সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ এবং জনসাধারণের মতামত চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে এই মতামত দিতে বলা হয়েছে।
বীমা আইন ২০১০ এর খসড়া সংশোধনীতে ১১টি নতুন ধারা সংযোজন এবং ৪টি ধারা বিয়োজনসহ সর্বমোট ৪৯টি ধারা-উপধারায় সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধন অনুযায়ী- বীমা কোম্পানির সম্পদ বা বিনিয়োগ জামানত রেখে পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার বা তাদের পরিবার অথবা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বীমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন কোন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার বা তাদের পরিবার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোন ঋণ প্রদান বা অন্যকোনভাবে আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে পারবে না।
বীমা কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা এবং কোম্পানি সচিব নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে- কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বীমা কোম্পানির সিএফও বা কোম্পানি সচিব হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত কোন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানির সচিবকে কর্তৃপক্ষের পুর্বানুমতি ছাড়া চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত করা যাবে না।
কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব এবং বীমাকারী বা এই বিষয়ে কোম্পানির স্বার্থক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ করেছেন কি না এবং এ ক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে লিখিত আদেশের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
এভাবে চাকরিচ্যুত হওয়ার পরবর্তী ৫ বছর তিনি কোন বীমা কোম্পানিতে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।
বীমাকারী কোন ব্যক্তি প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব হওয়ার বা ওই পদে না থাকার বিষয়ে জানার ১৫ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবে।
বীমা কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানির সচিব পদ একাধারে ৩ মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাবে না। তবে কর্তৃপক্ষ অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিবার ওই সময়সীমা আরও এক মাস বাড়াতে পারবে।
উপদেষ্টা বা কনসালটেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনুমোদন নিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার। বীমা কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ২ জন উপদেষ্টা বা কনসালটেন্ট নিয়োগ করা যাবে, যাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করবে কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকাস্যুরেন্স ও করপোরেট এজেন্ট সম্পর্কিত কয়েকটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে বীমা আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে।
পরিবারের সংজ্ঞায় কিছুটা সংযোজন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে- স্বামী বা স্ত্রী, পিতা বা মাতা, নির্ভরশীল পুত্র অথবা কন্যা, নির্ভরশীল ভাই অথবা বোন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল প্রাকৃতিক ব্যক্তিস্বত্তার সকলেই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বীমা দাবি পরিশোধের সময়সীমা ৯০ দিনের পরিবর্তে ৪৫ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৪৫ দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করতে না পারলে পরবর্তী দিনগুলোর জন্য সুদসহ বীমার টাকা ফেরত দিতে হবে গ্রাহককে।
বীমা কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ জন-ই থাকছে। তবে নিরপেক্ষ পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কোন কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা ১০ জনের বেশি হলে নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবেন ৪ জন, এর কম হলে থাকবেন ২ জন।
শেয়ারগ্রহীতারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে বীমা কোম্পানির পরিচালক নির্বাচন করবেন।
এছাড়া আরো কিছু বিষয়ে সংশোধন আনা হচ্ছে। বীমা আইন ২০১০ এর খসড়া সংশোধনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।