বীমা পেশায় সফলতা এনে দেবে ৭ অভ্যাস
প্রত্যেকটি সফলতার পেছনে থাকে অনেক ভালো অভ্যাস। একটি ভালো অভ্যাস গড়ে তোলাও সফলতা। কর্ম জীবনে যারা সফল হয়েছেন, তাদের সফলতার পেছনে পাওয়া যায় অসংখ্য অভ্যাস- যেগুলো তাদেরকে ধাপে ধাপে সফলতার দ্বারপ্রান্তে বয়ে এনেছে। বীমা পেশায় যারা সফল হয়েছেন, বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন- তাদেরও রয়েছে এমন অনেক অভ্যাস। এসব অভ্যাসের মধ্যে রয়েছে কিছু অত্যন্ত কার্যকর। বীমা পেশায় সফলতা অর্জনে কর্মীদের জন্য এমন ৭টি কার্যকর অভ্যাসের কথা এখানে তুলে ধরা হল-
১। সফলতার ক্ষুধা:
বীমা কর্মীদের প্রথম এবং প্রধান যে বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা হচ্ছে সফলতার ক্ষুধা। কোন কাজেই সফলতা অর্জনের পথ আরামদায়ক নয় বরং অত্যন্ত কষ্টের। মাঝে মাঝে এমন কঠিন সময়ও আসে যখন চারদিক থেকেই ঘিরে ধরে অকৃতকার্যতা। এটাই জীবন।
মানুষের ভাগ্যের পরিহাস যে, জীবনকে আরামদায়ক অথবা নিরাপদ করে সাজানো হয়নি। সময় বদলায়, মানুষ বদলায়। সাথে সাথে বদলে যায় মার্কেট প্লেস ও বিপণন পদ্ধতি।
জীবন তাদেরই পুরস্কৃত করে যারা ঝুঁকি গ্রহণ করে এবং ঝক্কি-ঝামেলার মাঝেও ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যায়। অত্যন্ত দক্ষ বীমা কর্মীরা তাদের সম্পর্কে গুরুত্ব অনুধাবন করে। তারা জানে কিভাবে কর্মচাঞ্চল্য পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে হয়, যখন এটা প্রয়োজন হয়।
অভ্যাসগতভাবে আমি প্রতিদিন দু'টি সমান চিন্তা নিয়ে জেগে উঠি। প্রথমত: আমিই সেরা, কেউই আমাকে ছুঁতে পারে না এবং কোন কিছুই আমাকে থামাতে পারে না। দ্বিতীয়ত: আমি সবচেয়ে খারাপ অথবা আমি চাকরি থেকে বের হয়ে এসেছি।
একটি আমাকে শিক্ষার ভীতি অথবা অস্বাভাবিক নতুন কিছু করা ছাড়াই আস্থা যোগায়। অন্যদিকে আরেকটি আমাকে হতাশ, বিনয়ী এবং ক্ষুধার্ত করে তোলে যাতে করে সফল হওয়ার জন্য সবসময় কিছু শিক্ষা গ্রহণ করি। -এমনটাই জানিয়েছেন, সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া'র আই৮০ ইন্স্যুরেন্স সলিউশন এর চীফ ফিনান্সিয়াল অফিসার নিকোলাস আয়ার্স।
২। গ্রাহকদের কাছে সহজলভ্য:
অত্যন্ত দক্ষ বীমা কর্মীরা তাদের নিজেদেরকে প্রাপ্তিসাধ্য করে তোলেন, শুধুমাত্র তখনকার জন্য নয় যখন নিজেদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত বরং অন্য সময়ও তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারে।
অনেক ভিন্ন আকারে নিজেদের উপস্থিত করানো যায়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কল সেন্টার ভাড়া করে অথবা টেক্সট মেসেজের অনুমোদন দিয়ে এটা নিশ্চিত করা যায়। টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট অথবা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রত্যাশিত গ্রাহকের সঙ্গে চ্যাটিং করেও নিজেকে সহজলভ্য করা যায়। প্রত্যেকটি ফোন কল রিসিভ করার মাধ্যমেও সহজলভ্য হওয়া যায়। ফোন কল বা ই-মেইল প্রত্যাবর্তনের জন্য সময় রাখতে হবে।
আমি সব সময়ই গ্রাহকের ফোনকল অথবা ই-মেইল পুনরায় দেয়ার জন্য হাতে সময় রাখি। কারণ, যখন কেউ আমাকে পায়নি, তখন তারা কোন বিষয়ে উত্তর খুঁজে পায়নি। এটা আমাকে সুযোগ তৈরি করে দেয় তাদেরকে মূল্যাণ করার এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের নিকটবর্তী হওয়ার।
আপনি কি গ্রাহককে প্রভাবিত বা তার মনে রেখাপাত করতে চান, তাহলে তাদের ফোনে ফিরতি কল করুন। ফিরতি ফোন কল গ্রাহককে প্রভাবিত করে। -এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্যারন রবলেস এজেন্সি'র মালিক শ্যারন রবলেস।
৩। মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল:
সফল বীমা কর্মীরা সত্যিকারভাবে তাদের গ্রাহক ও সমাজের জন্য সহযোগিতা এবং সেবা দেয়ার চেষ্টা করে। জোরপূর্বক বিক্রির চেয়ে তারা গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের চাহিদাগুলো বোঝেন।
গ্রেটার নিউইয়র্ক সিটির এরিকসন ইন্স্যুরেন্স সার্ভিস এর প্রেসিডেন্ট স্পেন্সার হোলডিন বলেছেন, ব্যতিক্রমী গ্রাহক অভিজ্ঞতা প্রদানের মাধ্যমে আমি আমার ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। আমি আমার গ্রাহকদের শিখিয়েছি যে, শুধু পণ্যের মূল্যের চেয়ে এখানে বীমা ক্রয়ে অনেক কিছুই রয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করো এবং গ্রাহকের সর্বোত্তম স্বার্থ যাতে আছে সবসময় তাই কর। যখন তাদের কোন দাবি উত্থাপন হয় তখন তাদের সহযোগিতা কর।
৪। ব্যর্থতার প্রতি ভয়হীন:
আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, "ব্যর্থতাই অগ্রগতিতে সাফল্য"। ভয় মানুষকে অসহায় করে।
আমাদের ভুলগুলি যখন আমাদের মুখে ফুটে ওঠে, আমরা প্রায়ই তখন অনেক বেশি বিচলিত হই। ব্যর্থতার প্রাথমিক সুবিধা: বৃহৎ, শক্তিশালী, দ্রুততর এবং আরও দক্ষতার সাথে ফিরে আসার সুযোগটি আমারা হারিয়ে ফেলি। আমাদের অনেকেই ব্যর্থতার সম্ভাবনাকে এড়িয়ে চলি। এমনকি, ব্যর্থ না হওয়ার ওপর আমরা অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করি।
সফল বীমা কর্মীরা বিশ্বাস করেন যে, সফলতার রাস্তায় ব্যর্থতা হচ্ছে আরেকটি ধাপ। তারা ব্যর্থতা থেকে দূরে থাকার পরিবর্তে তাদের ভুলগুলোর সদ্ব্যবহার করেন, শিক্ষাগ্রহণ করেন, মানিয়ে নেন এবং আবারও চেষ্টা করেন।
ব্যর্থতার ভয়ের চেয়ে কোন কিছুই আমাদেরকে দমাতে পারে না। কিন্তু আমরা যদি আমাদের বড় সাফল্যের দিকে ভালোভাবে খেয়ার করি, তাহলে সম্ভবত আমরা দেখব যে, তখন আমরা ভয় সত্ত্বেও কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ফ্লোরিডার মিয়ামির ডপাজো অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এর অংশীদার আলেক্সান্ডার ডপাজো বলেছেন, এজেন্ট হিসেবে আমি মনে করি আমরা ঝুঁকি বিমুখ হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি, কিন্তু আমাদের নিজস্ব ব্যবসায় ঝুঁকি গ্রহণ থেকে আমাদের থামানো উচিত হবে না।
৫। হিসাব নির্ভর কর্ম পরিকল্পনা:
যারা খুব দক্ষ বীমা কর্মী তারা তাদের সেলস পাইপলাইন কর্মকাণ্ড দিয়ে ভরে তোলে, প্রত্যাশা দিয়ে নয়। এ ধরণের বীমা কর্মীরা তাদের কর্মকাণ্ডকে সংজ্ঞায়িত করে লার্জার লিড জেনারেশন প্রসেস'র মাধ্যমে। তারা তাদের বিক্রয় লক্ষ্য মেট্রিকস এর প্রয়োজনীয়তা জানে। বিক্রয় ফানেলে সঠিক ধরণের ব্যবসা যথেষ্ট নয়, গ্যারান্টিও এখানে যথেষ্ট হবে না।
সাধারণ বীমার কর্মীরা সত্য পরিচালনা করতে পারে না। ফলাফলগুলো অসংহত এবং অনিশ্চিত হওয়ার কারণে তারা সেলস পাইপলাইন পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন সেশনগুলোতে তারা অস্বস্তিবোধ করেন। দক্ষ বীমা কর্মীরা বোঝেন যে, সাফল্যের গোপনীয়তা নিহীত রয়েছে ভালো অথবা খারাপের সংখ্যায়। কারণ এসব সংখ্যা সবসময়ই আমাদের শিক্ষা দেয়।
একজন বীমা কর্মী ভাল বিপণনকারী হওয়া, উত্তম গ্রাহকসেবা প্রদান এবং কার্যক্রমের দক্ষতা উন্নত করার অসংখ্য সুযোগের ভিড়ে থাকেন। এমনটাই বলেছেন, নিউইয়র্কের আলবেনির ইফেক্টিভ কভারেজ'র সিইও এরিক নারসিসো।
৬। সংহত:
সবচেয়ে সফল স্বাধীন বীমা কর্মীরা এই জগতে অত্যন্ত সংহত বা মনযোগী। তারা বর্তমান মুহূর্ত এবং বর্তমান কাজে মনোযোগ নিবদ্ধ করে। খারাপ ফলাফলের জন্য তারা কোন কারণ দর্শানোকে অনুমোদন দেয় না।
এই অভ্যাস নিশ্চয়তা দেয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, আরো কিছু সম্পন্ন এবং দক্ষতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা সম্পূর্ণভাবে কর্মে জড়িত। অত্যন্ত কেন্দ্রিভূত বা সংহত মানুষ সহজভাবে মনোনিবেশ করে। সেসব কাজ থেকে তারা বিপথে থাকে না যা তাদের সংস্থাকে বৃদ্ধি করে।
কোন বিঘ্নতা ছাড়া কাজের জন্য সময় বের করা অনেক কঠিন করেছে স্মার্টফোন এবং সোস্যাল মিডিয়া। কিন্তু এটা আমার জন্য নয়। প্রত্যেক দিন আমি দুই/এক ঘণ্টা সময় আলাদা করে রাখি, যাকে আমি "জ্যাম সেশন" বলি। -সান ডিয়েগোর হান্টলি ওয়েল এন্ড বীমা সার্ভিসেস এজেন্সি মালিক ক্রিস হান্টলে এসব কথা বলেন।
৭। দৃঢ়তা:
একটা সফল কর্মজীবন গঠন সবসময় সহজ হয় না। মাঝে মাঝে- যখন একটি বড় বিক্রয় বা একজন বড় গ্রাহক হারান- তখন এটা আপনাকে বিষণ্ণ করে তুলতে পারে। কিন্তু এমনকি সবচেয়ে খারাপ সময়েও সফলতা একদম কাছে চলে আসে। হাল ছেড়ে দেয়ার চেয়ে অত্যন্ত কার্যকর বীমা কর্মীরা যেসব কারণে তারা সফল হতে পারে সেগুলোতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। এবং তারা সফল হওয়ার রাস্তা খুঁজে পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের স্টেফোর্ড স্প্রিংস'র প্যারাডিসো ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইনসিওরেন্স সার্ভিসেসের মালিক ক্র্যাশ প্যারাডিসো বলেছেন, কোন কঠোর পরিশ্রম ছাড়াই আপনি সৌভাগ্যবান হতে পারেন কিন্তু দৃঢ়তাই হচ্ছে মূল উপাদান। সকল সময় জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছুক হতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ না অন্তত ৫ বার স্থায়ীভাবে না বলে। (সূত্র: এজেন্সি ন্যাশন)