বিদায়ী বছরে বীমা খাতে আলোচিত ১০ ঘটনা

আবদুর রহমান আবির: ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বড় পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বীমা খাতেও। নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন এসেছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায়। পরিবর্তন এসেছে বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’সহ বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানির নেতৃত্বেও। এ বছরই যাত্রা শুরু করে আরেকটি নতুন প্রতিষ্ঠান শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

২০২৪ সালে বেশ কিছু নতুন বিধি-প্রবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতে। দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা, বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন, গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন, বীমা কোম্পানির পরিচালক নির্বাচন বিধিমালা এবং রিস্ক বেইসড সুপারভিশন ফ্রেমওয়ার্ক যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগ, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তাদের আইডিআরএ কার্যালয় অবরোধ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানসহ ৫ পরিচালকের পদত্যাগ এবং সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্তৃপক্ষের প্রশাসক নিয়োগের ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছে বীমা খাতে।

বিদায়ী বছরে ঘটে যাওয়া আলোচিত-সমালোচিত এসব ঘটনার রেশ হয়তো নতুন বছরেও টানতে হবে বীমা খাতকে। তবে নতুন কিছু সম্ভাবনা আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। এসব প্রতিকূলতা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাবে দেশের বীমা খাত এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

২০২৪ সালে দেশের বীমা খাতে আলোচিত এমনই ১০টি ঘটনা ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগ

নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও চার সদস্য। এর মধ্যে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জয়নুল বারী পদত্যাগ করেন চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। সাবেক সচিব জয়নুল বারী ২০২২ সালের ১৫ জুন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ১৪ জুন।

এরপর গত ৭ নভেম্বর অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন আইডিআরএ’র ৪ সদস্য। তারা হলেন- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য খোকন (প্রশাসন), মো. দলিল উদ্দিন (আইন), মো. নজরুল ইসলাম (নন-লাইফ) এবং কামরুল হাসান (লাইফ)।

সংস্কারের অংশ হিসেবে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুসারে তারা এই পদত্যাগ করছেন বলে জানা যায়।

নতুন নেতৃত্বে আইডিআরএ

২০২৪ সালের শেষার্ধে এসে নতুন নেতৃত্ব পায় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও চার সদস্য। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. এম আসলাম আলম।

এরপর ২ ডিসেম্বর পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে নিয়োগ দেয়া হয় কর্তৃপক্ষের ৪ সদস্য। তারা হলেন- ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী মো. আপেল মাহমুদ (লাইফ), মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক (নন-লাইফ), সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক (প্রশাসন) এবং সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মিজ তানজিনা ইসমাইল (আইন)।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিআইএ’র নেতৃত্বে পরিবর্তন

দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর পরিবর্তন এসেছে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট পদে। গত ২১ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। তিনি ২০১১ সাল থেকে বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বিআইএ’র নির্বাহী কমিটির ২০২৩-২০২৪ মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন পদত্যাগ করায় প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবর বিআইএ’র ২১৮তম নির্বাহী কমিটির সভায় তাকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়।

আইডিআরএ কার্যালয়ে সোনালী লাইফ কর্মকর্তাদের অবরোধ

‘ভুক্তভোগী সকল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মাঠকর্মীবৃন্দ’র ব্যানারে গত ২০ আগস্ট আইডিআরএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে সোনালী লাইফের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল থেকে এই কর্মসূচি শুরু হলেও বেলা আড়াইটায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে আইডিআরএ কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আন্দোলকারীরা।

এসময় তারা কার্যালয়ের গেট ভেঙে ফেলেন। এরপর সংস্থাটির কর্মকর্তা শামসুল আলম ও নিরাপত্তাকর্মী জাহানুর রহমানকে আহত করেন। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, ৩ সদস্য এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। পরে রাত ১টায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সমঝোতা হয়।

সমঝোতার বিষয়গুলো হলো- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও উন্নয়ন কর্মীরা পূর্বের মতো তাদের সুযোগ-সুবিধা বহালের বিষয়ে আগামীকাল আইডিআরএ থেকে প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হবে। এবং যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হবে।

পরবর্তীতে সমঝোতার শর্ত অনুসারে সোনালী লাইফের প্রশাসক প্রত্যাহার ও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহালের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং গত ৫ সেপ্টেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে কোম্পানিটিতে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে আইডিআরএ।

সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা প্রণয়ন

দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রবিধানমালা সলভেন্সি মার্জিন চূড়ান্ত করা হয় ২০২৪ সালে। ‘লাইফ বীমাকারীর সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা, ২০২৪’ নামে গেজেট প্রকাশ করা হয় গত ২৩ অক্টোবর এবং ‘নন-লাইফ বীমাকারীর সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা, ২০২৪’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয় ১৫ অক্টোবর।

সম্পদ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে উভয় খাতের সলভেন্সি মার্জিনে কোম্পানি গঠনের প্রাথমিক ব্যয়, অনাদায়ী প্রিমিয়াম, আসবাবপত্র, সফটওয়্যার, স্টেশনারি মালামালসহ ১০ প্রকারের সম্পদকে শূন্য মূল্য হিসেবে গণ্য করার বিধান রাখা হয়েছে।

লাইফ ও নন-লাইফ বীমাকারীর সলভেন্সি মার্জিনে ৬টি প্রবিধান এবং ৩টি তফসিল সংযুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উভয় সলভেন্সি মার্জিনের প্রবিধান ৩-এ প্রত্যেক বীমা কোম্পানিকে সম্পদের মূল্যায়ন বিবরণী প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও প্রবিধান ৪-এ দায়ের পরিমাণের বিবরণী; প্রবিধান ৫-এ প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিন এবং সলভেন্সি মার্জিনের বিবরণী প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। আর প্রবিধান ৬-এ নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সলভেন্সি অনুপাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন জারি

বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বীমা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে ‘বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন্স, ২০২৪’ জারি করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

গত ২৮ এপ্রিল জারি করা এই গাইডলাইন- বীমাকারী; পুনর্বীমাকারী; জরিপকারী বা বীমা এজেন্ট বা বীমা মধ্যস্থতাকারী বা বীমা পরিষেবা প্রদানকারী; বীমা গ্রাহক এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন্সে বীমাকারীর করণীয়, বীমা গ্রাহকের করণীয়, পুনর্বীমাকারীর দায়িত্ব, জরিপকারীর দায়িত্ব, বীমা দাবি ব্যবস্থাপনায় আবশ্যিক পালনীয় বিষয়, কলসেন্টারসহ সাহায্যকারী ডেস্ক এবং পরিচালনা পর্ষদ ও এর কমিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

অপরদিকে লাইফ ও নন-লাইফ উভয় খাতের বীমা গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন আরেকটি গাইডলাইন জারি করা হয় চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি। ‘বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন্স, ২০২৪’ নামে এটি জারি করা হয়।

বীমা কোম্পানি, বীমা এজেন্ট বা ব্রোকার অথবা এজেন্ট নিয়োগকারী বা জরিপকারী বা বীমা গ্রাহকসহ পরিষেবা প্রদানকারী অথবা বীমা পলিসির আবেদন, বিক্রয় বা প্রশাসনের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বীমা গ্রাহক সুরক্ষার এই গাইডলাইন প্রযোজ্য।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ

১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগ করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। পরে ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৫ জুলাই মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।

অপর দিকে জুলাই মাসেই সোনালী লাইফের ১০ বছরের ব্যবসায়ীক কর্মকান্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসিকে নিয়োগ করে আইডিআরএ। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও সোনালী লাইফের অনিয়ম দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তবে বীমা কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন বোর্ড গঠনের নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত ২ সেপ্টেম্বর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ ৪টি নির্দেশনা দেয় হয়।

ওই নির্দেশনা অনুসোরে ৫ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য মইনুল ইসলামকে সোনালী লাইফের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।এ ছাড়াও কোম্পানিটির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মো. জাফর ইকবাল এনডিসিকে।

শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আনুষ্ঠানিক যাত্রা

দেশের স্বনামধন্য করপোরেট হাউজ শান্তা হোল্ডিংসের নতুন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর। শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ারে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়।

শান্তা লাইফ বর্তমান পলিসিগুলো হচ্ছে চাইল্ড এডুকেশনাল প্ল্যান, ডিপোজিটরস প্রটেকশন স্কিম, এনডাওমেন্ট প্ল্যান, থ্রি পেমেন্ট প্ল্যান (থ্রিপিপি) এবং গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে সবার জন্য সহজ এবং গ্রহণযোগ্য বীমা পণ্য চালু করার আশ্বাস দিয়েছে শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানসহ ৫ পরিচালকের পদত্যাগ

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ ৫ পরিচালক পদত্যাগ করেন চলতি বছরের আগস্টে। এর মধ্যে রয়েছেন বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও বিআইএ’র তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন, স্বতন্ত্র পরিচালক মোজাম্মেল হক, যিনি ৭১ টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পদত্যাগ করা অন্য পরিচালকরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও রোবটিকস এন্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. লাফিফা জামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং আরিফ খান এফসিএমএ।

এর মধ্যে শেখ কবির হোসেন পদত্যাগ করেন ১৪ আগস্ট, মোজাম্মেল হক পদত্যাগ করেন ১৯ আগস্ট এবং অন্য ৩ পরিচালক পদত্যাগ করেন ১৯ আগস্ট, একই দিনে। এরা সবাই স্বাস্থ্যগত এবং ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে নতুন ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বিএসইসি। বিনিয়োগকারী, পলিসিহোল্ডার এবং সামগ্রিক পুঁজিবাজারের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এরপর ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি।

পরিচালক নির্বাচন বিধিমালা, সুপারভিশন ফ্রেমওয়ার্ক ও নতুন ১০ সার্কুলার

গত ২৯ জুন বীমাকারীর পরিচালক নির্বাচন বিধিমালা, ২০২৪ এর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। নতুন এই বিধিমালায় বীমা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচালকদের শেয়ারধারণের সময় ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ১ বছর করা হয়েছে।

এর ফলে একজন শেয়ারহোল্ডারকে পরিচালক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে বীমা প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার কমপক্ষে ১ বছর ধারণ করতে হবে।

অপরদিকে বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন বীমা শিল্পে সর্বাধুনিক টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই প্রেক্ষিতে দেশের লাইফ  ও নন-লাইফ বীমা খাতের জন্য ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল জারি করা হয় 'রিস্ক বেইসড সুপারভিশন ফ্রেমওয়ার্ক'।

এ ছাড়াও ২০২৪ সালে লাইফ  ও নন-লাইফ বীমা খাতে অন্তত ১০টি সার্কুলার জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

বীমাকারীর ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমিতকরণ সংক্রান্ত সার্কুলার; বীমা দাবি দ্রুত ও সহজীকরণের বিষয়ে দলিল পত্রাদির চেকলিষ্ট সংক্রান্ত লাইফ সার্কুলার; পরিশোধিত মূলধন ও বিনিয়োগের এফডিআর বিষয়ে নির্দেশনা; বীমা শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার লক্ষ্যে বীমা এজেন্টদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবস্থাপনা যুক্ত নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ব্যাংক হিসাব পরিচালনা সংক্রান্ত সার্কুলার।