প্রিমিয়াম আয়ের সর্বোচ্চ ৫০% ব্যয় করতে পারবে কোম্পানিগুলো
আবদুর রহমান আবির: প্রিমিয়াম আয়ের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০১৮ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করা হয়। খুব শিগগিরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নতুন প্রবিধানমালার ৩ -এ টেবিল উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, "কোন নন-লাইফ বীমাকারী কোন পঞ্জিকা বৎসরে সাকুল্যে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ সর্বোচ্চ নিম্ন বর্ণিত অর্থ ব্যয় করিতে পারিবে, যথা:- সংশ্লিষ্ট বৎসরে- (ক) পরিচালিত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বীমা এজেন্ট ও ব্রোকারগণকে পরিশোধিত কমিশন খরচ ও অন্যান্য পারিশ্রমিক; এবং (খ) বাংলাদেশে সরাসরি লিপিবদ্ধ মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর উপর নিম্নবর্ণিত টেবিলে বর্ণিত অর্থ,"
২০১৮ সালের এ প্রবিধানে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত বীমাকারীর মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়কে ৮টি অংশে বিভক্ত করে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ ছাড়াও বীমা এজেন্ট ও ব্রোকারগণকে পরিশোধিত কমিশন খরচ ও অন্যান্য পারিশ্রমিক ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বাইরে রাখা হয়েছে। ১৯৫৮ সালের প্রবিধানেও এটি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বাইরে ছিল। তবে ২০১৬ সালের রহিত প্রবিধানে কমিশনকে মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৫৮ সালের বিধির চেয়ে নতুন প্রবিধানে ১১.২৯ শতাংশ ব্যয়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
চূড়ান্ত করা নতুন এ প্রবিধান অনুসারে, প্রথম ১৫ কোটি টাকা প্রিমিয়ামে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা খাতে গড়ে ৩৫ শতাংশ এবং বীমা এজেন্ট ও ব্রোকারগণকে পরিশোধিত কমিশন খরচ ও অন্যান্য পারিশ্রমিক বাবদ ১৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। অর্থাৎ প্রথম ১৫ কোটি টাকায় কমিশন ও ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ৫০ শতাংশ খরচ করার অনুমোদন দিয়েছে। যা নৌ বীমার ক্ষেত্রে সর্বমোট ৪১ শতাংশ।
তবে ১২০ কোটি টাকার ওপরে যেকোন অংকের ক্ষেত্রে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কমিশনসহ ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ৩৭ শতাংশ ব্যয়ের অনুমোদন রাখা হয়েছে ২০১৮ সালের প্রবিধানমালায়। আর নৌ বীমায় কমিশনসহ ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ৩১ শতাংশ ব্যয়ের অনুমোদন রাখা হয়েছে নতুন এ বিধিমালায়।
অন্যদিকে ১৯৫৮ সালের বিধান, প্রথম ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রিমিয়ামে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা খাতে গড়ে ২৩.৭১ শতাংশ এবং বীমা এজেন্ট ও ব্রোকারগণকে পরিশোধিত কমিশন খরচ ও অন্যান্য পারিশ্রমিক বাবদ ১৫ শতাংশ ব্যয় করার অনুমোদন ছিল। অর্থাৎ প্রথম ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকায় কমিশন ও ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ৩৮.৭১ শতাংশ খরচ করার অনুমোদন ছিল। যা নৌ বীমার ক্ষেত্রে ছিল সর্বমোট ২৯ শতাংশ।
২০১৮ সালের প্রবিধান বলা হয়েছে, বীমাকারীর মোট গ্রস প্রিমিয়ামের প্রথম ১৫ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে ৩৫ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে এ সীমা ২৬ শতাংশ। পরবর্তী ১৫ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। এর পরবর্তী ১৫ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। পরবর্তী ১৫ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমায় ৩০ শতাংশ এবং নৌ বীমায় ২২ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে।
এ ছাড়াও এর পরবর্তী ১৫ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, পরবর্তী ১৫ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমায় ২৬ শতাংশ এবং নৌ বীমায় ১৮ শতাংশ, এর পরবর্তী ৩০ কোটি টাকায় অগ্নি ও অন্যান্য বীমায় ২৪ শতাংশ এবং নৌ বীমায় ১৭ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। সর্বশেষ অষ্টম ধাপে ১২০ কোটি টাকার উর্ধ্বে যেকোন পরিমাণের ক্ষেত্রে অগ্নি ও অন্যান্য বীমায় ২৪ শতাংশ এবং নৌ বীমা ১৬ শতাংশ ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৮ সালের প্রবিধানমালায়।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আইডিআরএ প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখিত টেবিল অনুযায়ী, সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত বীমাকারির অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রথম ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামের উপর শতকরা ৩৫ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ কমিশনসহ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয়ের অনুমোদন করা হয়েছিল।
এ ছাড়াও প্রথম ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে কমিশনসহ ব্যবস্থাপনা খাতে গড়ে সর্বমোট ২৯.৭১ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে গড়ে ২১.৭১ শতাংশ। আর ৪০ কোটি টাকার উর্ধ্বে যেকোন অংকের ক্ষেত্রে অগ্নি ও অন্যান্য বীমা সর্বমোট ২২ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে সর্বমোট ১৬ শতাংশ কমিশনসহ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল। ২০১৮ সালের প্রবিধানমালার মাধ্যমে ২০১৬ সালের প্রবিধানমালা রহিত করা হয়েছে।
২০১৮ সালের প্রবিধানমালা ৩ এর উপ-বিধি (২) এ বীমাকারীর প্রথম ১০ বছরের বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে কমিশন খরচ বা পারিশ্রমিকসহ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বিধান অনুসারে, প্রথম বছর মোট পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ; পরবর্তী ৩ বছরে মোট পরিশোধিত মূলধনের উপর অর্জিত সুদের অর্থ; পরবর্তী ৩ বছরে মোট পরিশোধিত মূলধনের উপর অর্জিত সুদের অর্থ বা সংশ্লিষ্ট বছরের ইস্যুকৃত পলিসির গ্রস প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের মধ্যে যা কম হয় সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবে।
এ ছাড়াও পরবর্তী ৩ বছরের প্রতি পঞ্জিকা বছরে পরিশোধিত মূলধনের উপর অর্জিত সুদের তিন-চতুর্থাংশ অর্থ বা ওই বছরের সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ২.৫০ শতাংশ অর্থের মধ্যে যা কম হয় সেই পরিমাণ অর্থ কমিশন খরচ বা পারিশ্রমিকসহ ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে পারবে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো।
উপ-প্রবিধান ৩ -এ বলা হয়ছে, যে সকল বীমাকারীর ব্যবসার প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত তাদের প্রধান কার্যালয়ের ব্যয়ের একটি অংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমাভুক্ত হবে এবং তা সরাসরি ও গৃহীত পুনর্বীমা ব্যবসাসহ এবং প্রদত্ত পুনর্বীমা প্রিমিয়াম ব্যতিরেকে কোনক্রমেই ওই বছরের বাংলাদেশে অর্জিত মোট প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের অধিক হবে না।
প্রবিধানমালা ৪ -এ বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত 'নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা, ২০১৬' এতদ্বারা রহিত করা হল।