কেউ কৃষি বীমার সুপারিশ করলেন না
নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষি খাতের উন্নয়ন বা কৃষকের উন্নয়ন ও প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে বিশ্বব্যাপী কৃষি বীমা, শস্য বীমা, প্রাণী সম্পদ বীমা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে কৃষিখাত রক্ষায় এখন সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কৃষি বীমা। অথচ 'কৃষি, কৃষক- আগামীর বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে কৃষি বীমা বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেননি আলোচকরা। যদিও কৃষিখাত সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কৃষক প্রতিনিধিরা এ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ মে দেশের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কৃষকদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ, কৃষি গবেষণা, কৃষিতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, দেশিয় বীজের সক্ষমতা ও পর্যাপ্ততা বাড়াতে, কৃষি পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার, অঞ্চল ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ, আরো কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানান ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কৃষি বীমার ওপর জোর দিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। যতবেশি সম্ভব ফসলকে বীমার আওতায় নিয়ে আসতে চালু করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা’। এর ফলে এক বছরেই বীমার আওতায় নিয়ে আসার পরিমাণ ২৩ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
একইসঙ্গে এ খাতে বরাদ্দ ৫৫০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার অধীনে ৩.৫ কোটি কৃষকের বীমা করা হয়েছে এবং বীমার পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। উর্বরতা রক্ষা করে একই জমিতে অধিক ফসল তোলার জন্য এখন পর্যন্ত মোট ৭.১১ কোটি সয়েল হেলথ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রচলিত শস্য বীমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে খরচ বেশি হওয়ায় ১৯৯৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে পাইলট প্রকল্প আকারে আবারও শস্য বীমা চালু করে এসবিসি। আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক এ শস্য বীমা একটি নতুন সংযোজন।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এডিবি'র সহযোগিতায় ৬টি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩টি জেলার ৯ হাজারের বেশি কৃষককে শস্য বীমা সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনটি জেলায় ২০টি আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ১৫ হাজার কৃষককে শস্য বীমা সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে এবং ৯শ' কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বন্যা, খরা, ঝড়-বৃষ্টি ও রোগে আমন, আলু ও বোরো ফসলের ক্ষতি সাধিত হওয়ায় সমাপ্ত ৫টি পাইলটিংয়ে সর্বমোট ৫৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৫৪ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এসবিসি। এসময় ৭ হাজার ৯৬ কৃষক বীমাকারীকে ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৬৩০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়েছেন। সর্বশেষ ৬ষ্ঠ পাইলটিংয়ে ২ হাজার কৃষককে এ শস্য বীমার আওতায় আনা হয়েছে।
প্রথম আলোর ওই গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর পরিচালক কেএএস মুরশিদ, চ্যানেল আই এর পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ওয়ায়েস কবির, বহুমুখী পাট পণ্য সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম, সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (বিক্রয় বিপণন) সোয়েব মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এএমএম সালেহ।
এ ছাড়াও এসিআই লি. এর এসিআই এগ্রিবিজনেস এর নির্বাহী পরিচালক এফ এইচ আনসারী, ইউন ইনকরপোরেট এর সিইও কাশফিয়া আহমেদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কারপ্রাপ্ত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কারপ্রাপ্ত গাজীপুরের মৎসচাষী মো. আকরাম হোসেন, পোলট্রি ফার্ম উদ্যোক্তা ও উপজেলা শ্রেষ্ঠ জয়িতা শিরিন সুলতানা, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাতক্ষীরা শ্যামনগরের কৃষক অল্পনা রানী মিস্ত্রি ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।