সময়োপযোগী নতুন বীমা পণ্য চালু করা দরকার: ড. আতিউর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে নতুন বীমা পণ্যের খুবই অভাব রয়েছে। এই অভাব মোচন করতে লাইফ ও নন-লাইফ খাতে সময়োপযোগী নতুন বীমা পণ্য চালু করা দরকার বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ১৭ তোপখানা রোডস্থ সিরডাপ'র চ্যামেলি হাউজে অনুষ্ঠিত বীমা বিষয়ক একটি সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
"হাউ টু রেইজ স্ট্যান্ডার্ড অব বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স মার্কেট" শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি) । সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. আতিউর রহমান। বাংলাদেশের বীমাখাতের মান কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে দেশি-বিদেশি বীমা বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে আলোচনা রাখেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বীমা পেশায় দক্ষ জনবলের খুবই অভাব রয়েছে। এ ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের কর্মীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বীমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ভালো নয়। এর একটি কারণ হচ্ছে, দাবি পূরণের সময় বীমা কোম্পানিগুলো অসহযোগিতামূলক আচরণ পোষণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক গভর্নর আরো বলেন, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ আজ পথিকৃত। তবে দেশের বীমাখাত যতটা উন্নত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। পলিসি ইনোভেশন ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। পুনর্বীমা খাতকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে বীমাখাতকে কাজ করতে হবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশের বীমাখাতের উন্নয়নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং বর্তমান আইনগুলো সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করতে হবে। তিনি বীমাখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের বীমা শিল্পকে বর্তমান নৈরাজ্যজনক অবস্থা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিআইএ'র দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নিটল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান একেএম মনিরুল হক বলেন, বাংলাদেশের বীমাখাতে যোগ্যরা আসে না। এর কারণ হচ্ছে, এই খাতে চাকরি করার পর তার ভবিষ্যৎ কি দাঁড়াবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এ খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বীমাখাত আগের চেয়ে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছে।
একেএম মনিরুল হক বলেন, আমি মনে করি- যে দেশের বীমাখাত যত শক্তিশালী সেদেশের অর্থনীতিও তত শক্তিশালী। কিন্তু জিডিপি'তে বাংলাদেশের বীমাখাতের অবদান খুবই কম, দশমিক ৬৫ শতাংশ। অথচ পার্শবর্তী দেশ ভারতে এখাতের অবদান অনেক বেশি। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের বীমাখাত ডিজিটালাইজেশন করার জন্য বিশ্বব্যাংক অর্থ দিচ্ছে। যেকোন খাতের জন্য প্রশিক্ষণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বীমাখাতে যারা ভালো অবস্থায় আছেন তারা সবাই মার্কেটিং সেক্টর থেকে এসেছেন উল্লেখ করে ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (সিআরআইএসএল)'র প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও মুজাফফর আহমেদ বলেন, বীমাখাতে যারা জড়িত আছেন তারা এ বিষয়ে ভালো জানেন। আমি আশা করি, তারা খাতটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আরো আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
সেমিনারের মূল পর্বে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা রাখেন ইংল্যান্ডের আসফেরিকা কনসালটিং এর ইন্টারন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কনসালটেন্ট গ্রাহাম ওয়েদারলী, ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (আইআইআই)'র কলেজ অব ইন্স্যুরেন্স এর প্রিন্সিপাল প্রদীপ সরকার, এসিসট্যান্ট প্রফেসর অর্চনা ভাজ ও মেটলাইফ বাংলাদেশ'র চীফ ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার মো. জাফর সাদেক চৌধুরী।