আওয়ামী লীগের ইশতেহারেও নেই বীমাখাত
আবদুর রহমান আবির: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এবারের ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ক্ষমতাসীন এ দল। তবে এসব অঙ্গীকারে স্থান মেলেনি বীমাখাতের। অবহেলিতই রয়েছে দেশের সম্ভাবনাময় এ আর্থিক খাত।
নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নির্মূল, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা থাকলেও বীমার ব্যবহার নেই কোথাও।
এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত ইশতেহারেও গুরুত্ব পায়নি বীমাখাত। তরুণদের কর্মসংস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, ব্যাংক, শেয়ারবাজার, সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশসহ ৩৫টিরও বেশি বিষয়ে আলোচনা থাকলেও বাদ পড়েছে বীমাখাত। ব্যাংক, শেয়ার বাজার ও বাজেট নিয়ে পৃথকভাবে ৯টি পয়েন্টে নানাবিধ পরিকল্পনা থাকলেও উপেক্ষিত বীমাখাত।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ইশতেহারে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনীতি, মুক্তিযোদ্ধা, যুব নারী ও শিশু, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, জ্বালানি, তথ্য ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, বৈদেশিক ও প্রবাসীকল্যাণ, কৃষি ও শিল্প, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা ও পুলিশ, আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ফান্ড প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ, পররাষ্ট্র এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে পরিকল্পনা থাকলেও স্থান পায়নি বীমাখাত।
অথচ উন্নত দেশগুলোতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বীমাখাত। এমনকি ক্ষমতার পালাবদলেও খাতটির প্রভাব দৃশ্যমান। দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি উন্নয়ন, পশুপালন, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বীমা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে দেশগুলোতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে এ খাত।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ৩২টি লাইফ ও ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানি রয়েছে। ২০১৭ সালে এই ৭৮টি কোম্পানি ১১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এরমধ্যে লাইফ খাতে প্রিমিয়াম আয় ৮ হাজার ২১৫ কোটি টাকা এবং নন-লাইফে প্রিমিয়াম আয় ২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮২৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন খাতে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার ১২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুসারে ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। এসব কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৯৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি।
নির্বাচনী এ ইশতেহারে নিশ্চয়তা রয়েছে তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের। বলা হয়েছে, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। সহজ শর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আয়বর্ধকমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে।
ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমত ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে। ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে।
ইশতেহারের অন্যান্য অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা।