অবৈধ কমিশন বন্ধ নিয়ে আশঙ্কায় মূখ্য নির্বাহীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১০ সালের মার্চে অনুমোদন পায় নতুন বীমা আইন। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গঠিত হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এরপরই খাতটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নন-লাইফ বীমাখাতে অবৈধ কমিশন বন্ধের উদ্যোগ। সেসময় নিয়েন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বীমা মালিক ও নির্বাহীরা একাত্মতা ঘোষণা করলেও কার্যকর কোন ফল পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আবারো স্বক্রিয় হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। একই সঙ্গে যেকোন মূল্যে অবৈধ কমিশন বন্ধের আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম। তবে এ উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাতটির একাধিক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল নন-লাইফ বীমায় অবৈধ কমিশন বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে প্রিমিয়াম জমার একটি ব্যাংক হিসাব ছাড়া বাকিগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। তবে খাত সংশ্লিষ্টদের আপত্তির মুখে তা সংশোধন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম জমার ক্ষেত্রে তিনটির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবে না।

আইডিআরএ'র এ নির্দেশনা খাত সংশ্লিষ্টরাও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। শুধু তাই নয় অতীতের মতো এবারো বীমা কোম্পানিগুলোর মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে এখন থেকে কোন নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেবে না।

এদিকে, অতিরিক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ ও ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন না দেয়া নিয়ে ইন্স্যুরেন্সে নিউজ বিডি'র সাথে খোলামেলা আলাপ করেন বেশ কিছু মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় নাম প্রকাশে রাজি হননি তারা।

তাদের মতে, এর আগেও কমিশন বাণিজ্য বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় বছর খানেক তা নিয়ন্ত্রণেও ছিল। কিন্তু তার পরপরই দেশের প্রভাবশালী একটি কোম্পানি বিদেশ থেকে প্রিমিয়াম রেট নিয়ে স্বল্প মূল্যে বীমা সুবিধা দিতে শুরু করে। কোম্পানিটি অনেক বড় বড় পলিসির চুক্তি করতো বিদেশে বসেই। এমন পরিস্থিতিতে আইন লঙ্ঘন করে বিদেশ থেকে রেট এনে পলিসি করায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে আবারো।

তাদের মতে, নন-লাইফ বীমা খাতে কমিশন বন্ধে যে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা খাতটিতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট নয়। এর পাশপাশি আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

তারা বলেন, দেশের বিদ্যমান প্রিমিয়াম হার খুব বেশি। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উচিৎ দ্রুত ট্যারিফ রেট সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া। এছাড়া বিদেশি পুনর্বীমা কোম্পানির কাছ থেকে রেট নেয়ার ক্ষেত্রে যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তাও মানছে না বড় কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা দূর করতে পুনর্বীমা সংক্রান্ত সুষ্পষ্ট প্রবিধানমালা এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, দেশে বেসরকারিখাতে পৃথক কোনো পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান নেই। এ ক্ষেত্রে পুনর্বীমাকারি সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনকে আরো শক্তিশালী করা বা সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিকে শুধুই পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুপান্তর করা উচিৎ। একই সঙ্গে দেশে বেসরকারি পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা জরুরি।

জানা যায়, অবৈধ কমিশন বন্ধের জন্য ২০১১ সালের পরপরই যেসব উদ্যোগ নেয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- নগদ টাকায় লেনদেন বন্ধ করা, আগে প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিয়ে পরে কমিশন নেয়া , কমিশন এজেন্টদের লাইসেন্স অনুমোদনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক করা।

কিন্তু সেসময় কমিশন বাণিজ্য বন্ধে খাত সংশ্লিষ্টরা নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। নিয়ম ভেঙে ৪০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়ার নজির এখনো বিদ্যমান। এছাড়া কমিশনের টাকা বীমা এজেন্টদের পাওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের। এছাড়া কমিশনের অতিরিক্ত টাকা যোগানের জন্য গোপন হিসাবের ব্যবহার করছে কোম্পানিগুলো।