বীমা খাতে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১ লোকের কর্মসংস্থান

আবদুর রহমান আবির: দেশের বীমা খাতে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্ট হিসেবে তারা কাজ করছেন। এর মধ্যে লাইফ বীমা খাতে কাজ করছেন ৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৫০ জন এবং নন-লাইফ বীমা খাতে কাজ করছেন ১৯ হাজার ৪০১ জন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে লাইফ বীমা খাতে একটি এবং নন-লাইফ বীমা খাতে একটি সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও সারাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৪৭৮টি শাখা কার্যালয় রয়েছে। এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্টসহ এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে কাজ করছেন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১ নারী-পুরুষ।

২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানিতে বীমা এজেন্ট রয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৫১ জন। এর আগে ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮৩৯। বর্তমানে এমপ্লয়ার অব এজেন্ট রয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ১৭৮, যা আগের বছরে ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ৮২৪। আর প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ৪ হাজার ১৫৮টি শাখা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৪২১। অর্থাৎ লাইফ বীমায় ৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৫০ জনের কর্মসংস্থান।

অন্যদিকে ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিতে কর্মরত আছেন ১৯ হাজার ৪০১ নারী-পুরুষ। ২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে খাতটিতে এজেন্টের সংখ্যা ২ হাজার ৬০৭। এর আগে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৮১। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও সারাদেশে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ১ হাজার ৩২০টি শাখা কার্যালয়ে জনবলের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৯৪। যা আগের বছরে ছিল ১৬ হাজার ৯৮১। অর্থাৎ বীমা খাতের ২.৮৮ শতাংশ জনবল নন-লাইফের।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, এজেন্টরা বীমা শিল্পের প্রধান বিক্রয় শক্তি এবং তারা ব্যবসা সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রধান অবদান রাখে। এজেন্টদের দক্ষ ব্যবস্থাপনা বীমাকারীর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। বিশ্বাসের অভাব এবং সামাজিক স্বীকৃতির অভাবে এজেন্টের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। তাছাড়া কর্মচারী ব্যবস্থাপনার চিত্র খুবই হাতাশাব্যঞ্জক। ক্রমান্বয়ে জনবল কমে যাওয়া বীমা শিল্পের ভালো আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন করে না।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা খাতের পরিধি বিশাল। বর্তমানে খাতটিতে যে পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, এর দিগুণ কর্মসংস্থান করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে আইডিআরএ’কে। বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। শিক্ষিত নাগরিকদের বীমা পেশায় আনতে হবে। এজন্য মিডিয়াকেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।

পদ্মা ইসলামী লাইফের সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মাদ ওয়াসিউদ্দিন বলেন, বীমা খাতে ৭ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। কারণ, আইডিআরএ যে হিসাব প্রকাশ করেছে এর বাইরেও কিছু বীমা এজেন্ট রয়েছে, যাদের এজেন্ট লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। বীমা খাতে বর্তমানে যে পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে সেটা আরো বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

ন্যাশনাল লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এম এ নাসের বলেন, বীমা পেশায় জড়িতের সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু নানা কারণে সেটা হচ্ছে না। আমাদের এজেন্ট রিটেনশন কম, এটা বাড়াতে হবে। প্রফশনাল এজেন্ট তৈরি করতে পারছি না আমরা। যাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তারা বেশি দিন থাকছে না। নিয়মিত কাজ না করায় কাঙ্খিত উপার্জন হচ্ছে না এজেন্টদের। তাদের সর্বনিম্ন আয় নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বীমা পলিসি বিক্রি বাড়াতে হবে, কমাতে হবে ল্যাপস। মাঠ পর্যায়ে আমাদের অনেক কাজ করার আছে। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব।