সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করল আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি বীমা কোম্পানি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে এবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. শাহ আলম ও কর্মকর্তা মো. আবু মাহমুদকে এই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সকল সভায় তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়্ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বলছে, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে ২০ বছর অতিবাহিত করেছে। কোম্পানির বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রাহকদের আস্থা তৈরি ও বাজার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে।

কোম্পানি প্রদত্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় প্রতিনিয়তই কমছে, বিনিয়োগ রিটার্ন বাজার রিটার্নের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে। যার ফলে পলিসিহোল্ডাররা বোনাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং কোম্পানিটি বীমা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অত্যন্ত উচ্চ ব্যবস্থাপনা ব্যয় করে যাচ্ছে। যার দায়ে কোম্পানির গ্রাহকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে প্রচুর পরিমাণ বীমা দাবি অপরিশোধকৃত অবস্থায় রয়েছে। যার মাধ্যমে কোম্পানির গ্রাহকরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সমগ্র বীমা শিল্পের ইমেজ মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে।

এক্ষেত্রে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ যথাযথ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যার ফলসরূপ কোম্পানিটি একটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সকল সভায় পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে সভা শুরুর ৭ দিন পূর্বে সানলাইফের সভার বিস্তারিত পর্যবেক্ষকদের অবহিত করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ৩ ফেব্রুয়ারি বীমা কোম্পানিটিসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছে আইডিআরএ।

এর আগে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত করে আইডিআরএ। বীমার মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না –গ্রাহকদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা অনুসারে এই তদন্ত করা হয়। গত ১২ অক্টোবর দু’সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে সংস্থাটি।

বীমা গ্রাহকদের পাওনা টাকা আদায়ে সানলাইফের ‍বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগটি দায়ের করেন কোম্পানিটির রংপুর বিভাগের ব্লক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেলো বছরের ১৪ জুলাই আইডিআরএ-কে বিষয়টি তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলে দুদক।

এই প্রেক্ষিতে সানলাইফের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা ও ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে গত ১৭ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন দাখিল করে কর্তৃপক্ষের তদন্ত দল। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ওই তদন্তে ৭টি অনিয়ম উঠে আসে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এসব অনিয়ম দূর করতে ৫টি সুপারিশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত দল।

সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষের পরিচালক (লাইফ) মো. শাহ আলম বলেন, বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করছে না, আবার আইন লঙ্ঘণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাদের।

তিনি আরো বলেন, গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে এরইমধ্যে বীমা কোম্পানিটির জমি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে আমরা জমিটি বিক্রির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব। যথাযথ মূল্যে জমিটি বিক্রি করা হলো কিনা, আবার সেই টাকা বীমা গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হলো কিনা -সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।