বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা: অভিভাবকদের যা জানা প্রয়োজন

আবদুর রহমান আবির: ছোট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে একটি বীমা পলিসি চালু করেছে সরকার। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ মার্চ, ২০২১ তারিখে জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে এই বীমা পরিকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

প্রতিটি জেলা থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় এবং দাখিল পর্যায়ের মাদারাসায় ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে এই বীমা সুবিধা দেয়া হবে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জীবন বীমা করপোরেশন। প্রথম দু’বছর এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরিচালিত হবে।

অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন- কারা এই বীমা গ্রহণ করতে পারবে! খরচ কত হবে! আর কিবা সুবিধা পাওয়া যাবে! কিভাবে কাজ করবে এই বীমা পলিসি! এর মেয়াদই বা কতদিন! অভিভাবকদের এই সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে।

কে হবেন বীমাকৃত ব্যক্তি বা কে নিতে পারবেন এই বীমা?

শিক্ষার্থীর পিতা বা মাতা অথবা আইনগত অভিভাবকদের যেকোন একজন বীমাকৃত হবেন।

এই বীমা পলিসি নেয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা কত?

ন্যূনতম বয়স ৩ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী এই বীমা নিতে পারবেন। আর পিতা বা মাতা অথবা আইনগত অভিভাবকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬৪ বছর। এক্ষেত্রে নিকটতম জন্মদিন অনুযায়ী বয়স নির্ধারিত হবে।

বীমা পলিসির মেয়াদ হবে কত?  

এই বীমা পলিসির মেয়াদ শিক্ষার্থীদের বয়সের সাথে সম্পর্কিত। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ১৮তম জন্মদিনে পলিসির মেয়াদ শেষ হবে।

সুতরাং, শিক্ষার্থীর বয়স সর্বনিম্ন ৩ বছর হলে বীমার সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ১৮-৩= ১৫ বছর এবং শিক্ষার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ১৭ বছর হলে বীমার সর্বনিম্ন মেয়াদ হবে ১৮-১৭= ১ বছর।

প্রিমিয়ামের হার কত?

প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা বৃত্তির জন্য বীমাকৃত ব্যক্তির বার্ষিক প্রিমিয়াম হার ৮৫ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের বরাদ্দকৃত বাজেটের ভিত্তিতে মাসিক বৃত্তির পরিমাণ নির্ধারণ করবে সরকার।

বীমার সুবিধা কি কি?

পলিসি মেয়াদের মধ্যে পিতা বা মাতা অথবা আইনগত অভিভাবকের মৃত্যু হলে অথবা দুর্ঘটনাজনিত সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা অথবা পঙ্গু হলে পলিসির অবশিষ্ট মেয়াদে প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা হারে শিক্ষার্থীকে বৃত্তি হিসেবে প্রদান করা হবে।

বীমাকৃত ব্যক্তি যে মাসে মৃত্যুবরণ করবেন, সেই মাসের শেষে বৃত্তি প্রদান শুরু হবে এবং শিক্ষার্থীর ১৮তম জন্ম তারিখে শেষ হবে।

তবে শর্ত থাকে যে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষম হলে অথবা পঙ্গু (APTD) হলে জীবন বীমা করপোরেশনের অনুমোদিত ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত সনদপ্রাপ্তি সাপেক্ষে মাসের শেষে বৃত্তি প্রদান শুরু হবে।

দুর্ঘটনাজনিত সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ব (APTD) বলতে কি বোঝায়?

স্থায়ী বা সম্পূর্ণ অক্ষমতা হল অনুমোদিত ডাক্তার কর্তৃক প্রত্যায়নকৃত শারীরিক আঘাত যা কোন ব্যক্তিকে কোন ব্যবসা পরিচালনা বা কোন কাজ বা কোন পেশায় যুক্ত হতে বাধাগ্রস্ত করে যেখান থেকে তিনি পারিতোষিক বা মুনাফা হতে বঞ্চিত হবেন।

অপরদিকে উভয় চক্ষুর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া, কজির উপর থেকে উভয় হাত কাটা বা খোয়া যাওয়া, গোড়ালির উপর থেকে উভয় পা কাটা  বা খোয়া যাওয়া, কব্জির উপর থেকে এক হাত এবং গোড়ালির উপর থেকে এক পা কাটা বা খোয়া যাওয়া, এক চক্ষু এবং কব্জির উপর থেকে এক হাত নষ্ট বা কাটা বা খোয়া যাওয়া, এক চক্ষু এবং গোড়ালীর উপর থেকে এক পা নষ্ট বা কাটা বা খোয়া যাওয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ এবং অপরিবর্তনীয় ক্ষতি, যা দুর্ঘটনাজনিত সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ব (APTD) হিসাবে গণ্য হবে।

কোন কোন ক্ষেত্রে বীমা সুবিধা প্রাপ্য হবে না?

বীমার ঝুঁকি গ্রহণের ১ বছরের মধ্যে আত্মহত্যা অথবা স্বীয় আঘাতে অক্ষম হলে । AIDS অথবা AIDS সম্পর্কিত রোগে মৃত্যু অথবা সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা। এখানে AIDS এর অর্থ Immune Deficiency Syndrome Acquired ।

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধ বা যুদ্ধ অনুরূপ কর্মকাণ্ড ( যুদ্ধ ঘোষণা না করা ) অথবা বহিরাক্রমণ, বিদেশী শত্রু দ্বারা আক্রমণ, যুদ্ধ বিগ্রহ, বিদ্রোহ, দাঙ্গা, বেসামরিক আন্দোলন, গৃহযুদ্ধ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত সশস্ত্র বিদ্রোহ, বিপ্লব, উপবিপ্লব, ষড়যন্ত্র, সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল, সামরিক আইন অথবা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল অথবা যেকোন ঘটনার কারণে সামরিক আইন ঘোষণার ফলে মৃত্যু, স্থায়ী এবং সম্পূর্ণ অক্ষমতা অথবা স্থায়ী এবং আংশিক ক্ষমতা।

হামলা অথবা হামলার চেষ্টা অথবা কোন বেআইনি কার্যকলাপ অথবা অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে কোন দাবি উত্থাপিত হলে। বিষ, গ্যাস, ধোয়া (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করলে) । এ ছাড়াও মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের ফলে দুর্ঘটনায় পতিত হলে এবং মারাত্মক অপরাধে লিপ্ত হলে।

কেমন হবে দাবি পরিশোধ প্রক্রিয়া?

এ চুক্তিপত্র কার্যকর থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের পিতা বা মাতা বা আইনগত অভিভাবক চুক্তি মেয়াদের মধ্যে মৃত্যুবরণ অথবা সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষম বা পঙ্গু (যা APTD হিসেবে জেবিসি’র স্বীকৃত ) হলে, সেক্ষেত্রে আইডিআরএ বীমা দাবির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি (মৃত্যুসনদপত্র, APTD এর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রত্যায়নপত্র, কবরস্থানের সনদপত্র , চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের প্রত্যায়নপত্র ইত্যাদি ) পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশসহ জীবন বীমা করপোরেশনকে প্রেরণ করবে । উক্ত সুপারিশের প্রেক্ষিতে জীবন বীমা করপোরেশনের বিদ্যমান আইন অনুসরণপূর্বক মাসিক বৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করা হবে।

এই বীমায় অর্থায়ন হবে কিভাবে?

পাইলটিং চলাকালে এই বীমার সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নিজস্ব তহবিল থেকে অগ্রিম ভিত্তিতে বীমাকারী জীবন বীমা করপোরেশন (জেবিসি)’কে প্রদান করবে। দাবি উত্থাপিত হলে জেবিসি দাবি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে এবং মাসিক বৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করবে। জেবিসি সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রিমিয়ামের একটি অংশ প্রাপ্য হবে। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমার তহবিল অন্যান্য তহবিল থেকে আলাদাভাবে জেবিসি সংরক্ষণ করবে। এই তহবিল প্রতি বছর শেষে একচ্যুয়ারি কর্তৃক মূল্যায়ন করা হবে এবং উদ্বত্ত অর্থ পরবর্তী বছরের জের হিসেবে গণ্য করা হবে।