বেস্ট লাইফের নতুন সিইও শহিদুল ইসলামের শিক্ষা সনদ ২টি দারুল ইহসানের ধানমন্ডি থেকে ইস্যুকৃত নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্বে নিয়োগ পাওয়া শহিদুল ইসলামের বিএ ও এমএ পাসের সনদ ২টি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি থেকে ইস্যু করা হয়নি। শহিদুল ইসলামের সনদ ২টির সঠিকতা যাচাই করতে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে পাঠানো এক চিঠির উত্তরে এমন মতামত দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়কে সনদ ২টি যাচাইয়ের সুপারিশ করে চিঠিটি পাঠায় গত বছরের ২৭ আগস্ট।

ওই চিঠির জবাবে গত ৩১ আগস্ট দারুল ইহসান ট্রাস্টের প্যাডে সনদ ২টির বিষয়ে মতামত পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। মতামতটি ছিল- ‘সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর উল্লেখিত প্রোগ্রামের সনদপত্র দুটি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ী নং ২১, রোড-৯/এ, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা-১২০৯ থেকে ইস্যু করা হয়নি’।

দারুল ইহসানের চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মো. শহিদুল ইসলামের সনদপত্র দু’টি বিশ্বিবদ্যালয়ের সংরক্ষিত রেকর্ডের সাথে যাচাই করে মতামত প্রদান করা হয়েছে। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন দারুল ইহসান ট্রাস্টের সচিব, তবে সেখানে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে শহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, তার সনদ দু’টি সঠিক। তিনি বলেন, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির মিরপুর ক্যাম্পাসে তিনি পড়ালেখা করেছেন, ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে নয়। তাই ধানমন্ডি ক্যাম্পাস থেকে তার সনদের সত্যতা যাচাই গ্রহণযোগ্য নয়।

শহিদুল ইসলাম বলেন, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে থাকতে তার সনদ যাচাই করা হয়েছে, তখন এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি। এরপর সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে নিয়োগের সময়ও তার সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি। তাছাড়া সনদ যাচাইয়ের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও উল্লেখ করেন।

তবে বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহীর পদে থাকা একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক দফতর ছিল ধানমন্ডিতে। এ দফতর থেকেই সনদ ইস্যু করা হতো। এসব ব্যক্তি মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণে দারুল ইহসানের বিবিএ ও এমবিএ পাসের সনদ দাখিল করেন।

সূত্র মতে, এর আগে শহিদুল ইসলাম চাকরি নেন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে। এ কোম্পানিতে ২০১৯ সালের ২৩ মে তিনি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকরি নেন। পরের বছর ২ নভেম্বর ওই কোম্পানি থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৪ জুন থেকে তিনি কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্বে ছিলেন।

চাকরি নিতে শহিদুল ইসলাম দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির অননুমোদিত ক্যাম্পাস মিরপুর-১০ থেকে ইস্যুকৃত ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) ও মাস্টার্স অব আর্টস (এমএ) পাসের ২টি সনদ দাখিল করেন।

সনদ ২টির তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে তিনি সিজিপিএ ৩.৫১ নিয়ে বিএ এবং ২০১১ সালে সিজিপিএ ৩.৫৪ নিয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

শহিদুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৫ মে চাকরি নেন চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। এ কোম্পানিটিতে তিনি পৌঁনে ৪ বছর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে মোটা বেতনে চাকরি করেন।

অথচ বীমা আইন অনুসারে প্রথম দফায় ৩ মাস ও দ্বিতীয় দফায় আরো ৩ মাস অর্থাৎ ৬ মাসের বেশি কোন কোম্পানিতে চলতি দায়িত্বে কোন ব্যক্তি দায়িত্ব পালন ও বেতন-ভাতা দেয়া বেআইনি। শহিদুল ইসলাম চার্টার্ড লাইফের চাকরি ছেড়ে দেন ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি।

শহিদুল ইসলাম গত প্রায় ৫ বছরে ৩টি কোম্পানিতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে চাকরি নেন। পূর্ণাঙ্গ মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগের জন্য তার নাম প্রস্তাব করার আগ মুহুর্তে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

মোটা অংকের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নিতে শহিদুল ইসলাম অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন কী না তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা। তবে চাকরি নিতে তিনি সরকারের উচ্চ মহলে সম্পর্ক আছে এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দিয়ে তিনি সুপারিশ করান বলে অভিযোগ রয়েছে।