দেশে মাথাপিছু প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৪ ডলার

আবদুর রহমান আবির: ২০২১ সালে দেশে মাথাপিছু বীমার প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৪ ডলার। ২০২০ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রিমিয়াম আয় ছিল ৮ ডলার, যা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১২ ডলার। ‘ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্স: ইনফ্লেশন রিস্কস ফ্রন্ট এন্ড সেন্টার’ নামের সর্বশেষ সিগমা রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান সুইস রি গত ১৩ জুলাই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

অঞ্চল ও দেশ ভিত্তিক প্রিমিয়াম আয়, জিডিপিতে বীমার অবদান, বীমার ঘনত্ব, বীমা বাজারের প্রবণতা, সামষ্টিক অর্থনীতি সূচক ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাপী বীমা বাজারের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্স: ইনফ্লেশন রিস্কস ফ্রন্ট এন্ড সেন্টার’ নামের প্রতিবেদনে। বিশ্বের ১৪৭টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করা হলেও প্রতিবেদনটিতে স্থান পেয়েছে ৮৮টি দেশ।

যেখানে প্রিমিয়াম আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৬০তম। মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ১৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২১ সালে র‌্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। গেলো বছর দেশের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ১ হাজার ৯৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  এর আগে ২০২০ সালে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ১ হাজার ৭৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সুইস রি’র ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ১৩.৪ শতাংশ।  আলোচ্য বছরে দেশের এই খাতে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছর ২০২০ সালে ছিল ১ হাজার ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশের মোট বীমা ব্যবসায় এই খাতের অবদান ৭৮.১ শতাংশ।    

প্রতিবেদনটিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশের নন-লাইফ বীমা খাতে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ দেখানো হয়েছে ৪৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছর ২০২০ সালে ছিল ৩৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গেলো বছর দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ১৫.৭ শতাংশ। আর দেশের মোট বীমা ব্যবসায় এই খাতের অবদান ২১.৯ শতাংশ।  

অন্যদিকে বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান তথা বীমার পেনিট্রেশন বেড়েছে ০.১ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ০.৫ শতাংশ।  এর আগে ২০২০ সালে দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ছিল ০.৪ শতাংশ। তবে বিশ্বে বীমার পেনিট্রেশনের র‌্যাংকিংয়ে একই অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই র‌্যাংকিংয়ে দেশের অবস্থান ৮৬তম।

প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বর্তমান বীমার ডেনসিটি তথা মাথাপিছু বীমার ঘনত্বের পরিমাণ ১২ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৮ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মাথাপিছু বীমার প্রিমিয়াম বেড়েছে ৪ ডলার। একইসঙ্গে ২০২১ সালে বিশ্ব বাজারে বীমার ডেনসিটি তথা মাথাপিছু বীমার ঘনত্বের র‌্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৮৫তম।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি ৮১টি বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে লাইফ বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৩৫টি, যার মধ্যে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। অন্যদিকে দেশের নন-লাইফ বীমা কেম্পানির সংখ্যা সর্বমোট ৪৬টি, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে একটি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত ১০ মে একনেক সভা শেষে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা বা ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা বা ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরো জানিয়েছেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।  এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।