প্রিমিয়াম সংগ্রহে সফল ২৭৩ বীমা কর্মকর্তার ওমরা হজ পালন

আবদুল্লাহ পাটোয়ারী: ব্যবসা সফল ২৭৩ জন উন্নয়ন কর্মকর্তাকে এ বছর ওমরা হজে পাঠিয়েছে দেশের তিনটি লাইফ বীমা কোম্পানি। ২০২২ সালে প্রিমিয়াম সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ায় এসব কর্মকর্তাকে হজে পাঠানো হয়। লাইফ বীমা খাতের অন্তত ৩২টি কোম্পানির সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বেশি কর্মকর্তাকে ওমরা হজে পাঠিয়েছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ২৩০ জন উন্নয়ন কর্মকর্তাকে এ বছর ওমরা হজে পাঠিয়েছে। এছাড়াও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে ৩ জন এবং আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে ৪০ জন কর্মকর্তাকে ওমরা হজে পাঠানো হয়েছে। তবে বাকী কোম্পানিগুলোতে এ ধরণের কোন আয়োজন ছিল না।

বীমা কোম্পানিগুলো বলছে, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের মাঝে কাজের উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে এবং কাজের প্রতি তাদের মনোনিবেশ আরো বাড়াতে প্রতি বছরই নানান ধরণের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানির গ্রাহক বৃদ্ধি এবং প্রিমিয়াম সংগ্রহ বাড়ানো। মানদণ্ড হিসেবেও থাকে প্রিমিয়াম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা।

এদিকে বিজয়ী উন্নয়ন কর্মকর্তারা বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন- মক্কা-মদীনা ঘুরে এসে নিজেদের চিন্তার পরিধি বেড়েছে, বেড়েছে প্রত্যাশাও। দৃষ্টিভঙ্গীতে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেড়েছে কাজের প্রতি। দৃঢ় প্রত্যয়ে তারা সামনে এগিয়ে যেতে চান আগামীর দিনগুলোতে।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, আমরা ২০২২ সালে সারা বাংলাদেশে প্রিমিয়াম অর্জনের একটি টার্গেট দিয়েছিলাম। আমাদের ৩ জন উন্নয়ন কর্মকর্তা সেই টার্গেট পূরণ করেছে। কোম্পানির ঘোষণা অনুযায়ী ওই বিজয়ী ৩ কর্মকর্তাকে আমরা ওমরা হজে পাঠিয়েছি।

এস এম নুরুজ্জামান বলেন, আমরা মূলত এই টার্গেটগুলো দিয়ে থাকি সংগঠকদের কাজের উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে এবং কাজের প্রতি তাদের আরো মনোনিবেশ করাতে। গত বছর থেকে আমরা ওমরা হজ কনটেস্ট শুরু করেছি; এবছরও এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা আছে।

তিনি আরো বলেন, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স তার সংগঠকদেরকে ওমরা হজে পাঠিয়ে একটা সওয়াবের কাজে অংশীদার হয়েছে। দেশের লাইফ বীমা খাতে ইসলামী বীমা কোম্পানি হিসেবে এটাও আমাদের একটা বড় অর্জন।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান বলেন, আমাদের এই ওমরা কনটেস্টটি ছিল ২০১৯ ও ২০২০ সালের। করোনা মহামারীর কারণে আমরা এটা ২০২৩ সালে এসে সম্পন্ন করেছি। আমাদের কোম্পানি কমিটমেন্ট রাখতে বদ্ধ পরিকর। এটা আমাদের দ্বিতীয় ওমরা কনটেস্ট। এই প্রতিযোগিতায় ২৩০ জন কর্মকর্তা বিজয়ী হয়েছিলেন। গত মার্চ মাসে তারা ওমরা হজ সম্পন্ন করেছে।

মীর রাশেদ বিন আমান আরও বলেন, আমরা বীমা জগতে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি। ওমরা হজ কনটেস্টটি আমরাই প্রথম বীমা জগতে নিয়ে আসি। আমরা আশা করি যারা গিয়েছে তারা আমাদের কোম্পানির জন্য মক্কা-মদিনায় গিয়ে দোয়া করবে। বিজয়ী কর্মীরা তাদের কাজের পাশাপাশি সওয়াবপূর্ণ কাজও আদায় করে নিল।

আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী অভি বলেন, ওমরা হজ ছিল আমাদের তিন মাসের একটি ব্যবসায়িক কনটেস্ট। আমাদের সারাদেশের মার্কেটিং কর্মকর্তাদের নিয়ে ওমরা হজ কনটেস্ট হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় ২৪ হাজার উন্নয়ন কর্মকর্তার মধ্যে বিজয়ী হয়েছে ৪০ জন। আমরা তাদেরকে ওমরা হজ করতে পাঠিয়েছি। এটার মাধ্যমে আমাদের কর্মীরা ব্যবসা সফল হয়েছে; কোম্পানিও ভালো ব্যবসা করেছে।

কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ওমরা কনটেস্ট বিজয়ী উন্নয়ন কর্মকর্তা কপিল উদ্দিন মাহমুদ ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ; আমি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে প্রথমবার পবিত্র ওমরা পালন করার সুযোগ পেয়েছি। এটাই আমার মক্কা-মদিনায় প্রথম সফর।

তিনি বলেন, পবিত্র ওমরা পালন করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য কতটা আবেগ ও অনুভুতির বিষয় তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি এই সফরে ওমরা পালন ছাড়াও পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারা ও ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থানসমূহ পরিদর্শন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, সব মিলে আমি অত্যন্ত খুশি এবং সোনালী লাইফের কাছে কৃতজ্ঞ।

কপিল উদ্দিন আরো বলেন, আমি মনে করি- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্মীদের জন্য বিদেশ সফর করার যে সুযোগ দিয়ে থাকে তার মধ্যে পবিত্র ওমরা পালনের সুযোগ দেয়াটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি মনে করি সামর্থ্য থাকলে সব কোম্পানিকেই এসব প্রোগ্রামের আয়োজন করা উচিত।

সোনালী লাইফের ওমরা কনটেস্ট বিজয়ী এমএ হাসান বলেন, আমি এই প্রথম ওমরা হজে গিয়েছি; এর আগে যাওয়া হয়নি। এজন্য সোনালী লাইফের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যেখানে মানুষ অনেক সময় পরিকল্পনা করেও মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয় সেখানে সোনালী লাইফ আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে। সোনালী লাইফে কাজ করার সুবাদে শুধু ওমরা নয়, আরো অনেক জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তাই আমি মনে করি সোনালী লাইফের ওমরা কনটেস্ট প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

জেনিথ ইসলামী লাইফের ওমরা কনটেস্ট বিজয়ী সংগঠন প্রধান আবদুল কাদের ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের সিইও (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা) এসএম নুরুজ্জামান স্যারকে। তারই উৎসাহ-উদ্দীপনায় আমার কাজের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আমি আস্তে আস্তে ছোট থেকে জাতীয় পর্যায়ের কনটেস্টগুলোতে অংশগ্রহণ করি।

আবদুল কাদের বলেন, স্যারের উৎসাহ-উদ্দীপনার ধারাবাহিকতায় আমি ২০২২ সালে প্রিমিয়াম সংগ্রহের টার্গেট পূরণ করেছি। তার ফলসরূপ কোম্পানি আমাকে ওমরা করার সুযোগ দিয়েছে। এজন্য আমি জেনিথ ইসলামী লাইফের প্রতি কৃতজ্ঞ; তারা তাদের কথা রেখেছে। আমি এখানে কাজ করার পর থেকে দেখে আসছি- জেনিথ ইসলামী লাইফ সবসময় তাদের কথা রাখে।