ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতামুক্ত থাকছে করপোরেট ফায়ার-মেরিন-বিবিধ বীমা

আবদুর রহমান আবির: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বীমা পণ্যসমূহ বাজারজাত করতে দেশের বাজারে চালু হতে যাচ্ছে ব্যাংকাস্যুরেন্স। তবে সব ধরণের বীমা পলিসি এই ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতার আসছে না। এক্ষেত্রে করপোরেট ফায়ার, মেরিন কার্গো, মেরিন হাল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিবিধ বীমা পলিসি ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতামুক্ত থাকবে। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

এরইমধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্স গাইডলাইন্স ও করপোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স) নির্দেশিকার খসড়া প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। খসড়া দু’টির পর্যালোচনা করতে বুধবার (৩১ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ’র সভাপতিত্বে বৈঠকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল), রূপালী ইন্স্যুরেন্সের উপদেষ্টা পি কে রায়সহ ব্যাংক, বীমা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিআইএ’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে লাইফ বীমা পলিসির গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এতে করে দেশে বীমার পেনিট্রেশন হার দ্রুত বৃদ্ধি করা সম্ভব। বর্তমানে ১২ কোটি ৩৫ লাখ ব্যাংক একাউন্টধারী রয়েছে; যাদের খুব সামান্যই বীমার আওতায় রয়েছে। এদিকে লাইফ বীমা খাতে পলিসিহোল্ডারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স গাইডলাইন্স অনুসারে নন-লাইফ বীমা খাত ব্যাংকের এসএমই এবং রিটেইল গ্রাহকদের ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে বীমার আওতায় আনতে পারবে। তবে করপোরেট গ্রাহকরা ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতায় আসবে না। অর্থাৎ করপোরেট ফায়ার, মেরিন কার্গো, মেরিন হাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিবিধ বীমা পলিসি ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতামুক্ত থাকবে।

ব্যাংকাস্যুরেন্সের গ্রাহকের বিষয়ে গাইডলাইন্সে বলা হয়েছে, ব্যাংকের হিসাব বা কার্ডধারী গ্রাহককে ব্যাংকাস্যুরেন্স পণ্য বিক্রির প্রস্তাব করতে পারবে ব্যাংক। ব্যাংকের গ্রাহক নয় এমন কোন ব্যক্তির নিকট ব্যাংকাস্যুরেন্সের অধীন বীমাপণ্য বিক্রির প্রস্তাব করা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত কেওয়াইসি পরিপালনপূর্বক ব্যাংকের গ্রাহক তার পরিবার যেমন: পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী এবং পুত্র-কন্যাদের জন্য বীমাপণ্য ক্রয় করতে পারবে।

উল্লেখিত নির্দেশনা পরিপালনপূর্বক ব্যাংকাস্যুরেন্স পণ্য রিটেইল এবং এসএমই গ্রাহকদের প্রত্যক্ষ বিক্রয় মডেল ব্যবহার করে বিক্রয় প্রস্তাব করা যাবে। এ ছাড়াও ব্যাংকাস্যুরেন্স গ্রুপ-লাইফ এবং গ্রুপ-হেলথ পণ্যসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত কেওয়াইসি পরিপালনপূর্বক প্রত্যক্ষ বিক্রয় মডেল অনুসরণ করে করপোরেট সংস্থাসমূহকে বিক্রির প্রস্তাব করা যাবে।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও মুখপাত্র (উপসচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বীমা খাতের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করা হচ্ছে। শুধু একটা মাধ্যমে বীমা বিক্রি করে বীমার পেনিট্রেশন রেট বাড়ানো সম্ভব না। এ জন্য বীমা বিক্রির সবগুলো চ্যানেল আমাদের চালু করতে হবে। তাছাড়া বীমার প্রতি মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে সেটা দূর করতেও আমাদের ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করা প্রয়োজন।

ব্যাংকাস্যুরেন্স নিয়ে বীমা কর্মীদের শঙ্কার কোন কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি চালু হলে শুধু বীমার পেনিট্রেশনই বাড়বে না বরং বীমা কর্মীরাও লাভবান হবেন। কারণ, ব্যাংকের মাধ্যমে যখন বীমা বিক্রি শুরু হবে তখন বীমার প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে, সুনাম বাড়বে। এই সুনাম কাজে লাগিয়ে বীমা কর্মীরা খুব সহজেই আরো বেশি নতুন পলিসি বিক্রি করতে পারবেন।

জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলেও সব ধরণের গ্রাহকের কাছে ব্যাংক বীমা বিক্রি করতে পারবে না। ব্যাংক শুধু তাদের নিজস্ব গ্রাহকদের কাছেই বীমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে। ব্যাংকের বাইরে গিয়ে কোন গ্রাহকের কাছে বীমা বিক্রির প্রস্তাব করতে পারবে না। অন্যদিকে বীমা এজেন্টরা সবার কাছেই বীমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে। তাছাড়া করপোরেট ফায়ার, মেরিনসহ কয়েকটি বীমা পলিসি ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতার বাইরে থাকবে।