আইডিআরএ'র পরামর্শে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ

যেভাবে চলছে হোমল্যান্ড লাইফ

আবদুর রহমান আবির: হোমল্যান্ড লাইফে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আত্মসাৎ হয়েছে ১০৪ কোটি টাকা। এই টাকা আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কোম্পানির ফান্ডে টাকা ফেরত আনার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ'র কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

হোমল্যান্ড লাইফের কাছে গ্রাহকের পাওনা প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। এই টাকা পরিশোধেও নেই কোন উদ্যোগ। ফলে হয়রানির শিকার গ্রাহকরা আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার আদালতে অহরহই মামলা দায়ের করছেন। এসব মামলায় আসামি হচ্ছেন কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিচালকরা।

অপর দিকে লন্ডন প্রবাসী পরিচালকদের অভিযোগ তাদের বিপাকে ফেলতে গ্রাহকদের দিয়ে এসব মামলা করা হচ্ছে। সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী পরিচালকরা লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন- তারা যাতে দেশে আসতে না পারেন এ কারণেই গ্রাহকদের দিয়ে এসব মামলা করা হচ্ছে। তাদের এমন বক্তব্য বহির্বিশ্বে দেশের বীমা খাতের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রবাসী পরিচালকরা আইডিআরএ’র কাছেও এমন অভিযোগ করেছেন।

এর আগে আইডিআরএ’র নির্দেশে এফডিআর’র টাকা থেকে গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করায় কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন প্রবাসী পরিচালকরা। একইসাথে মুখ্য নির্বাহীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অপরদিকে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য কোম্পানির রয়েছে। কিন্তু  প্রবাসী পরিচালকরা অনুমোদন না দেয়ায় গ্রাহকদের বকেয়া বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তিনি এফডিআরএ ভেঙ্গে গ্রাহকের পাওনা টাকা পরিশোধের নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  

অন্যদিকে গ্রাহকের পাওনা টাকা পরিশোধ, আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার, পরিচালকদের মধ্যে সমঝোতা করতেই গেলো প্রায় ১ বছর আগে আইডিআরএ’র সমঝোতায় পর্যটন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব হান্নান মিয়াকে নিরপেক্ষ পরিচালক নিয়োগ দিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়।

কিন্তু নতুন চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড নিয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে বেনামে অভিযোগও দাখিল হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান হান্নান মিয়ার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বোর্ড সভায় বিনা নোটিশে আইন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মাঝে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে হোমল্যান্ড লাইফ। বীমার টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা- এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে কোম্পানিটির গ্রাহকদের মাঝেও।

উল্লেখ্য, লন্ডন প্রবাসী ৭ পরিচালককে গ্রেফতারের পরই প্রকাশ্যে আসে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকদের দ্বন্দ্ব। এরই প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সমঝোতায় হোমল্যান্ড লাইফে নিরপেক্ষ পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান হান্নান মিয়া।

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক হয়রানি, আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধারসহ নানা দিক নিয়ে পাঠকদের জন্য সাজানো হয়েছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র এই প্রতিবেদন।

বীমা দাবি পরিশোধ করায় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ

২০২২ সালের ২৪ মে থেকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করেছে হোমল্যান্ড লাইফ। এর মধ্যে ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ থেকে এবং ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কোম্পানির মেয়াদ উত্তীর্ণ এফডিআর নগদায়নের অর্থ দিয়ে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র কাছে বীমা দাবি পরিশোধের এমনটাই হিসাব দিয়েছে কোম্পানিটি।

তবে এফডিআর নগদায়নের অর্থ দিয়ে বীমা দাবি পরিশোধ করায় কোম্পানির ১৩৬তম পর্ষদ সভায় ব্যাখ্যা চাওয়া হয় এবং বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন পরিচালক। কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে বীমা দাবি পরিশোধে আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আদালতে গ্রাহকদের মামলা, আইডিআরএ’র নির্দেশের বিষয়টি তুলে ধরে এফডিআরএ থেকে গ্রাহকের দাবি পরিশোধের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হলেও তা আমলে নেয়নি লন্ডন প্রবাসী কয়েকজন পরিচালক। উল্টো এফডিআর থেকে বীমা দাবি পরিশোধ করায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগকারীরাই তদন্ত কমিটির সদস্য

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহার করে বীমা দাবি পরিশোধ করার অভিযোগে হোমল্যান্ড লাইফের ১৩৬তম পর্ষদ সভায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয় কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরীকে এবং সদস্য হিসেবে রাখা হয় আরেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আখতার হোসেন এবং পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আহমদকে।

অথচ এই কমিটি গঠন করার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তারা একই অভিযোগ দাখিল করে তদন্তের সুপারিশ করেন। ওই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন কোম্পানিটির ১২ পরিচালক। অভিযোগকারী ওই ১২ পরিচালকের মধ্যে  বোর্ডের গঠন করা তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী, যিনি এই তদন্ত কমিটির আহবায়ক এবং পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আহমদ।

অভিযোগকারিদের তদন্ত কমিটির সদস্য করায় এমন তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ধরণের তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত- এমন অভিযোগ তুলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’কে ইতোমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল।

অপরদিকে তদন্ত কমিটির সদস্য শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে কোম্পানির টাকায় কেনা গাড়ি নিজের নামে রেজিস্ট্রিসহ কোম্পানিতে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে হোমল্যান্ড লাইফের আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে একাধিক বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।  ফলে তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোম্পানিটির একাধিক কর্মকর্তা ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেছেন, এ ধরণের তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা কখনো তদন্ত কমিটির সদস্য হতে পারে না। এতে করে হোমল্যান্ড লাইফের বিদ্যমান সংকট আরো বাড়বে।

আইন কর্মকর্তা জুবায়েরকে অবৈধভাবে বহিষ্কার

সিলেটের টুকেরবাজার ও জল্লারপাড়ের জমি ক্রয় এবং জমি ক্রয়ের নামে অগ্রিম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, শেয়ার সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ নানাভাবে দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা পরিচালনা করতেন কোম্পানিটির আইন কর্মকর্তা জুবায়ের আহমেদ। কিন্তু গত বোর্ডসভায় তার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে বিনা নোটিশে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে আইন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করায় ইতোমধ্যেই কোম্পানিটির অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

আইন কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। এসময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রবাসী পরিচালকরা যখন বোর্ডসভা করতে দেশে আসেন তখনই সবার মাঝে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এটা নতুন কিছ নয়। বছরের পর বছর ধরে এমনটাই চলছে। প্রবাসী এসব পরিচালক কখনো কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী, কখনো কোম্পানি সেক্রেটারি, কখনো সিএফও’র মতো কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করার দাবি নিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, হোমল্যান্ড লাইফের বীমা গ্রাহকদের টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে যেসব মামলা করা হয় সেসব মামলা যাতে সঠিকভাবে পরিচালনা না হয় এ কারণেই আইন কর্মকর্তা জুবায়েরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

৪০ হাজার টাকা বোর্ড মিটিং ফি নেন হোমল্যান্ডের পরিচালকরা

বীমা কোম্পানির পরিচালকদের বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বোর্ড মিটিং ফি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তবে আইডিআরএ’র নির্দেশ অমান্য করে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকরা প্রতিটি মিটিংয়ে কোম্পানিটি থেকে নিতেন ৪০ হাজার টাকা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই বোর্ড মিটিং ফি বাবদ ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকরা।

তবে গেল বছর থেকে ৮ হাজার টাকাই বোর্ড মিটিং ফি পরিশোধ করা হচ্ছে। হোমল্যান্ড লাইফের একাধিক কর্মকতা জানান, প্রবাসী পরিচালকরা ৪০ হাজার টাকা বোর্ড মিটিং ফি না পাওয়ায় কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। বিভিন্নভাবে তারা কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

প্রতিদিন সাড়ে ১৬শ’ টাকা তেল খরচ নেন হান্নান মিয়া

গাড়ির তেল খরচ বাবদ প্রতিদিন ১৬শ’ ৮৩ টাকা নেন হান্নান মিয়া। হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান হান্নান মিয়ার বাসা ধানমন্ডি। আর কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় মতিঝিল। ধানমন্ডি থেকে মতিঝিলের গড় দূরত্ব সাড়ে ৭ কিলোমিটার (তথ্য সূত্র: গুগল ম্যাপ) । অর্থাৎ এই সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে আসা এবং যাওয়ার জন্য জ্বালানী খরচ বাবদ এই টাকা নেন তিনি। হান্নান মিয়া দায়িত্ব নেয়ার পর কোম্পানিটির গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হান্নান মিয়া হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পর ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১০ দিনে ২১টি ভাউচারে তিনি মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৩০ টাকার জ্বালানী খরচের বিল গ্রহণ করেছেন।

এই হিসাব অনুসারে হান্নান মিয়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রতিদিন গড়ে ১৬শ’ ৮৩ টাকার জ্বালানী খরচ নিয়েছেন। অর্থাৎ লিটার প্রতি অকটেনের দাম ১৩৫ টাকা হিসেবে তিনি প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১২ লিটার জ্বালানী খরচ করেছেন। সাধারণভাবে একটি জিপ গাড়ি এই সাড়ে ১২ লিটার জ্বালানী খরচ করে শহরের মধ্যে (লিটার প্রতি ৫ কিলোমিটার হিসেবে) প্রায় ৬২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে পারে।

অপরদিকে কোম্পানির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে হান্নান মিয়া একটি গাড়ির সুবিধা পাবেন। কিন্তু তিনি বাসার নিজস্ব গাড়ির ড্রাইভারের জন্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এই বেতন-ভাতা নিতে তিনি বাসার ড্রাইভারকে নিয়োগ দেখিয়েছেন হোমল্যান্ড লাইফের ড্রাইভার হিসেবে।

এছাড়াও তেল খরচের স্লিপ ঘষা-মাজা এবং ওভারটাইম না করেই ওভারটাইমের বিল নেয়ার অভিযোগ রয়েছে হান্নান মিয়ার ড্রাইভারের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান হান্নান মিয়াকে জানানো হলেও তিনি তার ড্রাইভারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।

আরো অভিযোগ রয়েছে, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হোমল্যান্ড লাইফ কার্যালয়ে ব্যক্তিগতভাবে বসন্ত উৎসব আয়োজন করেছেন হান্নান মিয়া।  উৎসব উৎযাপনের খরচও তিনি নিয়েছেন কোম্পানি থেকে।

এছাড়াও হান্নান মিয়ার বিরুদ্ধে কোম্পানি থেকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে। গত ৬ এপ্রিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে এ অভিযোগ দাখিল করা হয়। তবে কারো নাম-পরিচয়, এমনকি স্বাক্ষরও দেয়া হয়নি ওই অভিযোগপত্রে।

এসব বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেন। এ সময়ে তিনি বলেন, কোম্পানিটির পরিচালকদের দ্বন্দ্বের কারণে গ্রাহক হয়রানি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রবাসী পরিচালকরা অনুমোদন না দেয়ায় বীমা দাবি দেয়া যাচ্ছে না। নতুন চেয়ার‍ম্যান নিয়োগ দেয়া হলেও সংকটের কোন সুরাহা হয় নাই।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আইন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়। এখন কোম্পানি সচিবকে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান অর্থ কর্মকর্তাসহ আমাকে চাকরিচ্যুত করার নানা অপচেষ্টা চলছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তাদেরকে দিয়েই আবার আমার বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগ বানিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ব্যয় কমেছে। এমন অবস্থায় বিদ্যমান সংকট দুর করা না গেলে গ্রাহক হয়রানি আরো বাড়বে। এদিকে কোম্পানির আত্মসাতকৃত ১০৪ কোটি টাকা উদ্ধারেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নাই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও হোমল্যান্ড লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া’র বক্তব্য জানতে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পক্ষ থেকে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে তার মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।