বীমা জরিপকারীর আচরণবিধি প্রবিধানমালা করছে আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা জরিপকারীর দায়িত্ব, কর্তব্য ও আচরণবিধি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার একটি খসড়াও প্রস্তুত করেছে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। খসড়া প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করতে এরইমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মতামত আহবান করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও মুখপাত্র (উপসচিব) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্রে জরিপকারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও আচরণবিধি নিয়ে এতো দিন কোন প্রবিধানমালা ছিল না। সেই শূন্যতা এবার পূরণ হতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার খসড়া প্রস্তুত করে স্টেকহোল্ডারদের মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামত পেলেই এটি চূড়ান্ত করা হবে।

বীমা জরিপকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চুক্তির অধীনে বীমাকৃত কোন পণ্য, সম্পত্তি বা স্বার্থের উদ্ভূত ক্ষতি নির্ধারণের লক্ষ্যে তদন্ত, পরিমাপ ও যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় সময় প্রদানসহ কর্মদক্ষতা, বাস্তবতা এবং পেশাদারিত্ব ও আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণপূর্বক সততার সাথে জরিপকার্য সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

জরিপ কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে জরিপকারী যেসব কার্তব্য এবং দায়িত্ব পালন করবে-

জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারকের সাথে বীমাকারী বা বীমাগ্রহীতার কোন ধরনের সম্পর্ক যেমন- আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা ব্যবসায়িক অংশীদার ইত্যাদি থাকলে জরিপ প্রতিবেদনে তা প্রকাশ করতে হবে; বীমাকারীর দায় এবং বীমাগ্রহীতার দাবির বিষয়ে গোপনীয়তা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে;

বীমাকৃত সম্পত্তির ক্ষতি নিরূপনে কোন ধরণের প্রশ্ন বা সন্দেহের উদ্রেক হলে তা সমাধানের লক্ষ্যে জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারককে সরেজমিনে সম্পত্তি পরিদর্শন ও প্রয়োজনে একাধিকবার পরিদর্শন কার্য পরিচালনা করতে হবে; বীমার অধীনে দাবীর অধিকার এবং এ সম্পর্কিত অন্য কোন বিষয়ের উপর মন্তব্যের জন্য এক বা একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শনসহ চূড়ান্ত জরিপ পরিচালনা করতে হবে;

যথাযথ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ পূর্বক বিবরণ প্রদান করতে হবে; সহবীমার ক্ষেত্রে ক্ষতি নিরুপনের হার এবং উদ্ধারকৃত সম্পদ সম্পর্কে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে; ক্ষতি পূরণের হার, ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাক জরিপ বা প্রি-রিস্ক সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে; পলিসি দলিলের শব্দ ভান্ডারে কোন বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে তা উল্লেখ করতে হবে;

অবচয়ের প্রযোজ্যতা, শতাংশ বা শতকরা হার এবং অনুমিত পরিমাণের বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে; বীমা দাবীটি যদি বীমার শর্তাবলীর দ্বারা আবরিত না হয় সেক্ষেত্রে দাবী নাকোচের কারণ উল্লেখ করতে হবে; বীমা দাবির ক্ষতি নিরূপনে বিশেষজ্ঞের মতামত প্রয়োজন হলে, বীমাকারীর সম্মতিক্রমে জরিপকারী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে পারবে; মূল্য নির্ধারণ এবং এর বিক্রয় সম্পর্কে কোন মন্তব্য প্রদান করতে হবে;

জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক প্রয়োজনীয় দলিলাদি প্রাপ্তি সাপেক্ষে জরিপকার্য সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বীমাকারীর নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবে। জরিপ প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব হলে বিলম্বের কারণসহ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। কর্তৃপক্ষ বিলম্বের কারণ বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত ৩০ দিন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করতে পারবে।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্পদের জরীপ কাজের জন্য বীমা গ্রহীতা তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের স্টক রেজিস্ট্রার সরবরাহ করবে। পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অন্যান্য দলিলাদি দাখিল করবে। জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক জরিপ কাজ শুরু করার যথাসম্ভব ৩০ দিনের মধ্যে জরিপ কাজ সম্পন্ন করবে। জরিপকারীর জরিপ কাজের জন্য সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলে দফা ১০ এ উল্লেখিত বিধান মোতাবেক সময় বাড়ানো যাবে।

জরিপ কার্য যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে বীমাকারী নিম্মোক্ত বিষয়াবলী নিশ্চিত করবে-

বীমা দাবীর ক্ষতি নিরুপণের জন্য জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক নিয়োগের সময় বীমাকারী জরিপের কার্যকাল নির্দিষ্ট করে দেবে এবং ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলিলাদি প্রাপ্তি সাপেক্ষে জরিপকাজ সম্পন্ন করতে হবে; বীমাকারী উক্ত জরিপ প্রতিবেদন দাখিলে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বিলম্ব মার্জনা করতে পারবে, ৩০ দিনের অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে যুক্তিস শত সময় বাড়ানো যাবে।

বীমা জরীপকারীকে যেসব আচরণবিধি মেনে চলতে হবে-

নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং এর দাবীর প্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রেখে সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে জরিপ ও ক্ষতি নিরূপণ নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করা; নৈতিকতা এবং সততার সাথে জরিপ ও ক্ষতি নির্ধারণের কার্যক্রম পরিচালনা করা;

জরিপকারী কাজের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে সৌজন্য ও সদাচরণের দিকে লক্ষ্য রেখে দায়িত্বশীলতার সাথে জরিপকাজ পরিচালনা করা: কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিত জরিপ কার্য সম্পাদন করা যাবে না;

জরিপকারীর পক্ষে কোন জরিপ কাজ করার সক্ষমতা বা সামর্থ্য না থাকলে তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করা; জরিপকারী হিসেবে পেশাদার অনুশীলন সম্পর্কিত আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত থেকে নিজেকে সময়োপযোগী করা;

জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক কর্তৃক সম্পাদিত কাজের যথাযথ রেকর্ড সংরক্ষণ করা এবং এই সংক্রান্ত সকল আইন পরিপালন করা; জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারকের সহকর্মীদের পেশাদারিত্ব লাভের জন্য সহায়তা ও উৎসাহিত করা এবং এই ক্ষেত্রে আর্টিকেলশীপ প্রদান ও বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে চৌকষ করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক জরিপকাজের তথ্য সম্বলিত একটি রেজিষ্টার সংরক্ষণ করা এবং দাবী নিষ্পত্তির পর ৩ বছরের জন্য জরিপ প্রতিবেদন, ফটোগ্রাফস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি ও রেকর্ড সংরক্ষণ করা; জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারকের নিয়োগ ও পরহণ সম্পর্কিত তথ্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অবহিত করা;

বীমাগ্রহীতা বা বীমাকারীর সম্মতি ব্যতিরেকে জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট জরিপকাজের তথ্যাদি প্রকাশ না করা; জরিপকারী বা ক্ষতি নির্ধারকের ব্যক্তিগত লাভের জন্য বা কোন তৃতীয় পক্ষের লাভের জন্য তার পেশাদারীত্বের মাধ্যমে অর্জিত বা গৃহীত কোনো তথ্য ব্যবহার বা প্রকাশ না করা এবং জরিপকারী কর্তৃক সময়ে সময়ে কর্তৃপক্ষের জারিকৃত নির্দেশনা পরিপালন নিশ্চিত করা।

বর্ণিত আচরণবিধি লংঘন করলে জরিপকারীর বিরুদ্ধে আইনের বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বীমা জরিপকারীর দায়িত্ব, কর্তব্য ও আচরণবিধি প্রবিধানমালা।