লাইফ বীমায় নির্বাহী রশিদ তুলে দেয়ার প্রস্তাব

বীমা খাতে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার দাবি অনিষ্পন্ন

আবদুর রহমান আবির: দেশের বীমা খাতে ৪ হাজার ৪২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে লাইফ বীমায় অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং নন-লাইফের ১ হাজার ৪২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।   

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে এই হিসাব প্রকাশ করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)’র অংশ হিসেবে সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আইডিআরএ’র তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের বীমা খাতে সরকারি বেসরকারি ৮১টি কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে লাইফ বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৩৫টি এবং নন-লাইফ বীমার সংখ্যা ৪৬টি। লাইফ ও নন-লাইফ উভয় খাতে একটি করে সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিষ্পন্ন বীমার দাবির বড় একটি অংশ মাত্র কয়েকটি বীমা কোম্পানির। এক্ষেত্রে ওই কোম্পানিগুলোর দাবি নিষ্পত্তি ত্বড়ান্বিত করার আহবান জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে বীমা কোম্পানিগুলোর সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

এ ছাড়াও লাইফ বীমার দাবি পরিশোধে প্রচলিত নির্বাহী রশিদ তুলে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন খাতটির নির্বাহীরা। তাদের মতে, বীমা গ্রাহকদের হয়রানির অন্যতম হাতিয়ার এই নির্বাহী রশিদ। একইসঙ্গে দ্রুত দাবি পরিশোধে ব্যাংক একাউন্টের পরিবর্তে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বীমা খাতে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ছিল ৪৫২৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর নতুন অর্থবছরের শুরুতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে নতুন করে ২২৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বীমা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সে হিসাবে মোট অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ছিল ৬৮০৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে সর্বমোট ২৩৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। লাইফ বীমা খাতে পরিশোধ করা হয়েছে ২০৫৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং নন-লাইফ বীমা খাতে পরিশোধ করা হয়েছে ৩৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বর্তমানে লাইফ বীমা খাতে ২৯৯৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশনের অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ৪১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতের ৩৪টি লাইফ বীমা কোম্পানির অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ ২৯৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

অপরদিকে নন-লাইফ বীমা খাতে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ ১৪২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাধারণ বীমা করপোরেশনের অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ২৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতের ৪৫টি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ১১৮৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) বীমা দাবি নিষ্পত্তির হার বেশ ভালো। এই সময়ে যে হারে বীমা দাবি নিষ্পত্তি হয়েছে সেটা আগে কখনো হয়নি। এটি মূলত আইডিআরএ’র বর্তমান প্রশাসনের প্রচেষ্টার সফলতাকে ইঙ্গিত করে।

জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, বীমা গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের বিষয়ে আইডিআরএ অতিমাত্রায় তৎপর এবং এই তৎপরতা উত্তোরত্তোর বাড়বে। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের নানামুখী চেষ্টা আরো বাড়ানো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি খাতের একাধিক বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী এ বিষয়ে বলেন, অনিষ্পন্ন বীমা দাবির বেশিরভাগই মাত্র ৭-৮টি লাইফ বীমা কোম্পানির। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এসব কোম্পানির দাবি নিষ্পত্তি ত্বড়ান্বিত করার আহবান জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে বীমা কোম্পানিগুলোর সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

লাইফ বীমার দাবি পরিশোধে প্রচলিত নির্বাহী রশিদ তুলে দেয়ার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা গ্রাহকদের হয়রানির অন্যতম হাতিয়ার এই নির্বাহী রশিদ।

এক্ষেত্রে দ্রুত বীমা দাবি পরিশোধে তিনি বীমা কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস (মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস) এবং বিইএফটিএন (বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক) ব্যবহারের পরামর্শ দেন।