একাডেমী অব লার্নিংয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধে আইডিআরএ’র নির্দেশ হাইকোর্টে স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের বীমা এজেন্ট প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র দেয়া নির্দেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেন।

একইসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র এই নির্দেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র মতে, একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডসহ ৫টি বীমা এজেন্ট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে তদন্ত পরিচালনা করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। তদন্ত দল গত ১১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

তবে তদন্তের প্রেক্ষিতে আয়োজিত শুনানিতে বিষয়টি পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। সেই সাথে পুনঃতদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডকে বীমা এজেন্ট প্রশিক্ষণ প্রদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। এই নির্দেশ দেয়া হয় গত ১ আগস্ট।

এরই ধারাবাহিকতায় কর্তৃপক্ষের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ২ সদস্যের পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তবে পুনঃতদন্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হলেও অদ্যবধি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি আইডিআরএ।

তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৪ মাসেরও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত না পেয়ে গত ৭ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে আইডিআরএ’র নিদের্শকে চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা দায়ের করেন একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা।

সূত্র মতে, চলতি বছরের মার্চে বীমা এজেন্ট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, অপ্রতুল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষকের অভাব, মানহীন প্রশিক্ষণ প্রদানসহ টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণবিহীন সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সেই প্রেক্ষিতে গত ২৩ মার্চ একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেড পরিদর্শন করেন কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও পরিদর্শন কর্মকর্তা সুবীর চৌধুরী। এরপর একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় গত ১১ এপ্রিল।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ‘একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের অফিস এবং প্রশিক্ষণ সুবিধাদি পরিদর্শন করে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি যাচাই করে সন্তোষজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে’ বলে মতামত দেন আইডিআরএ’র পরিদর্শন কর্মকর্তা।

কর্তৃপক্ষের পরিচালিত প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনে একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের বিষয়ে সন্তোষজনক মতামত দেয়া হলেও শুনানিতে পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। গত ১ আগস্ট এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে পুনঃতদন্ত করা হবে। পুনঃতদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেড বীমা এজেন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান বন্ধ রাখবে।

এসব বিষয়ে একাডেমী অব লার্নিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, দেশের বীমা খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে আমরাই প্রথম ২০১৪ সাল থেকে বীমা এজেন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছি। এই সময়ে আমরা প্রায় ৮০ হাজার এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, দেশের বাইরেও আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সুনাম রয়েছে। আর এ জন্যই আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও আমাদের সাথে পার্টনারশিপ চুক্তি করেছে।

সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, আইডিআরএ’র নিষেধাজ্ঞার ফলে এরইমধ্যে আমরা আমাদের অনেক গ্রাহক হারিয়েছি। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৪ মাসে আমাদের অফিসের অবস্থা এখন ভঙ্গুর। আর্থিক সংকটে পড়েছেন আমাদের কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, বীমা এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কোন সাড়া পাইনি আমরা। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে আদালতের কাছে যেতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মহামান্য আদালত আমাদের আবেদন শুনে আইডিআরএ’র নির্দেশকে স্থগিত করেছেন। এখন আমরা আবারও আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদি, দেশের বীমা খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারব।