বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন একটি গাইডলাইন জারি করেছে খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ‘বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন্স, ২০২৪’ নামে এটি জারি করা হয়েছে। গাইডলাইনটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বীমা কোম্পানি, বীমা এজেন্ট বা ব্রোকার অথবা এজেন্ট নিয়োগকারী বা জরিপকারী বা বীমা গ্রাহকসহ পরিষেবা প্রদানকারী অথবা বীমা পলিসির আবেদন, বিক্রয় বা প্রশাসনের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বীমা গ্রাহক সুরক্ষার এই গাইডলাইন প্রযোজ্য হবে।

নতুন এই গাইডলাইনে- গ্রাহক সুরক্ষা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিটি; বীমা দাবি পরিশোধ সংক্রান্ত নীতিমালা; বীমা পরিকল্প বা পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি; বীমাকারী বা এজেন্ট বা ব্রোকার বা জরিপকারী বা এজেন্ট নিয়োগকারীর দায়িত্ব ও কর্মপরিধি;

বীমা গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা; বীমা গ্রাহকের দায়িত্ব ও কর্তব্য; গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে গ্রাহকের সচেতনতা বৃদ্ধিতে করণীয়; অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা; অভিযোগ/সংক্ষুব্ধির অবসান; অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বীমাকারীর ব্যর্থতা এবং বীমা দাবি নিষ্পত্তি বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা ইত্যাদির বিষয়ে বলা হয়েছে।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বীমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন, ২০২৩ অনুযায়ী বীমা দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ যথাসময়ে নিষ্পত্তি ও গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষার জনা উপযুক্ত প্রক্রিয়া ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের একটি গ্রাহক সুরক্ষা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিটি থাকবে।

এই কমিটি করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনে এ উল্লেখিত কমিটির ভূমিকা পালন করবে যাতে গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত ও অভিযোগ দ্রুত প্রতিকার সম্ভব হয়। এছাড়া, বীমা আইনসহ বাংলাদেশের প্রচলিত অন্যান্য আইনে উল্লেখিত গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিতে উক্ত কমিটি প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। পরিচালনা পর্ষদ উক্ত বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি নিশ্চিত করবে।

গাইডলাইনটিতে বীমা দাবি পরিশোধ সংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়ে বলা হয়েছে, বীমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন, ২০২৩ অনুযায়ী গ্রাহক সুরক্ষা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিটি গ্রাহকের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

বীমা গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে গাইডলাইনে বলা হয়েছে, একজন বীমাকারী অথবা এজেন্ট বা ব্রোকার বা এজেন্ট নিয়োগকারী গ্রাহকের সংবেদনশীল তথ্য সংরক্ষণে উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। তবে আদালতের আদেশ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আইনানুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা যাবে।

বীমা গ্রাহকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়ে গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বীমা গ্রাহক কর্তৃক বীমা চুক্তিতে বর্ণিত কোন বিষয়ের ব্যত্যয় ঘটালে বীমা গ্রাহক উক্ত ব্যত্যায় ব্যতিত বাকী অংশের ক্ষেত্রে এ গাইডলাইনের আওতায় সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, চোট কারণিক ভুল যার কারণে চুক্তির মৌলিক শর্তাদিতে কোনরূপ বাস্তব পরিবর্তন না হলে, সেক্ষেত্রে বীমা গ্রাহক এ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী হবেন।

বীমা গ্রহীতা বীমা চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর পরবর্তীতে কোন তথ্য পরিবর্তন বা তথ্য প্রকাশ করা প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা থাকলে তা আবশ্যিকভাবে বীমাকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। বীমা পরিকল্প/পলিসি সংক্রান্ত রশিদসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক দলিলাদি আবশ্যিকভাবে বুঝে নিবেন এবং সংরক্ষণ করবেন।

গাইডলাইনটিতে বলা হয়েছে, বীমাকারীর প্রধান কার্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাসহ অভিযোগ গ্রহণ, নথিভুক্তি এবং নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকবে। এতে যেকোন অভিযোগ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

বীমা কোম্পানিগুলোকে নিজ নিজ অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া এবং এ সংক্রান্ত গৃহীত কার্যক্রম বীমা গ্রাহকসহ জনসাধারণের অবগতির জন্য পঠনযোগ্য মুদ্রিত বুকলেটে বা গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে প্রচার এবং ওয়েবসাইটে বিশেষভাবে প্রদর্শন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বীমাকারীর ব্যর্থতার বিষয়ে গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বীমাকারী কোন বীমা গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হলে, সংশ্লিষ্ট বীমা গ্রাহক অভিযোগটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইন মোতাবেক কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির নিকট আবেদন/অভিযোগ করতে পারবে।

এই গাইডলাইন্সের কোন কিছুই একজন গ্রাহকেকে বীমা দাবি বিষয়ে আইনের বিধানমতে কর্তৃপক্ষ বা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির নিকট আবেদন করা থেকে বাধাগ্রস্ত করবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গ্রাহক সুরক্ষার এই গাইডলাইনে।

বীমা পরিকল্প বা পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ পদ্ধতির বিষয়ে বলা হয়েছে, বীমা পরিকল্প বা পলিসি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে এবং বিক্রির ক্ষেত্রে অনুমোদিত পরিকল্প/পলিসির কোনরূপ ব্যতয় করা যাবে না।

বীমা পরিকল্প বা পলিসির দলিলে বীমাকারীর নাম এবং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নম্বর, বীমাকারীর যোগাযোগের বিবরণ এবং প্রকৃত ঠিকানা, পলিসির নাম, শ্রেণী এবং প্রকার প্রভৃতির বর্ণনা এবং কর্তৃপক্ষের নাম ও ঠিকানা থাকতে হবে।

বীমা পরিকল্প/পলিসি বিক্রয় পর্যায়ে প্রস্তাবিত পণ্যের গ্রাহক কর্তৃক প্রাপ্য পরিকল্প/পলিসির প্রকৃত সুবিধা ও শর্তাদি সুস্পষ্টভাবে গ্রাহককে বোধগম্য ও সহজ ভাষায় অবহিত করতে হবে। গ্রাহককে এরূপ কোন ধারণা বা আশ্বাস মৌখিক বা লিখিত বা অন্য কোনভাবে প্রদান করা যাবে না যা বীমা পরিকল্পে নেই।

গ্রাহকের প্রয়োজন বা চাহিদার প্রেক্ষিতে উপযুক্ত বীমা পরিকল্প/পলিসি গ্রাহকের নিকট উপস্থাপন করবেন। গ্রাহকের নিকট কোন বীমা পরিকল্প/পলিসি প্রভাবিত বা প্ররোচিত করে বিক্রি করা যাবে না। কোন বীমা পরিকল্প/পলিসি বিনিয়োগের ভিত্তিতে রিটার্ন প্রাপ্তি থাকলে, রিটার্ন প্রাপ্তির কোনরূপ নিশ্চয়তা প্রদান করা যাবে না।

বীমা পরিকল্প/পলিসি অন্য কোন নাম বা অন্য কোন পণ্য হিসেবে বিক্রি করা যাবে না, বীমা পরিকল্প/পলিসি হিসেবে বিক্রি করতে হবে। কোন অবস্থায় মিথ্যা বা জাল তথ্যাদি বা দলিলাদি উপস্থাপন করা যাবে না।

পলিসি মেয়াদপূর্তি বা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ বা জরিমানা অথবা কোন বিনিয়োগ বা বীমা পলিসির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ঝুঁকি থাকলে তা বীমা গ্রাহককে বীমা পরিকল্প বিক্রয়ের পূর্বে অবহিত করতে হবে।

বীমাগ্রাহকের লিখিত সম্মতি ব্যতিরেকে বীমা চুক্তিতে কোনরূপ পরিবর্তন করা যাবে না। বীমাকারী এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ উভয়ের কাছে বীমা দাবিসহ এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ দায়ের করার পদ্ধতির বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে।

বীমাকারী বা এজেন্ট বা ব্রোকার বা জরিপকারী বা এজেন্ট নিয়োগকারীর দায়িত্ব ও কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, সর্বদা সাততা, ন্যায্যতা এবং যথাযথ দক্ষতা, যত্ন এবং পরিশ্রমের সাথে পরিষেবা প্রদান করবে। সম্ভাব্য গ্রাহক বা বীমা গ্রহীতার সাথে কোনরুপ ছলচাতুরি বা জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করবে না।

‘বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন্স, ২০২৪’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন