আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারীর দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদের প্রতিবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘লাগামহীন দুর্নীতি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের, ধ্বংস করে দিচ্ছেন একের পর এক বিমা প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে রোববার (২ জুন) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । একইসাথে প্রকৃত ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে কর্তৃপক্ষের পরিচালক (লাইফ) উপসচিব আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রতিবাদলিপিতে।
গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, দৈনিক যুগান্তর এর ২ জুন ২০২৪ তারিখের ১ম পৃষ্ঠার ২য় কলামে উল্লেখিত শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। দৈনিক যুগান্তর এর ১ম পৃষ্ঠার ২য় কলাম ও ১৫ পৃষ্ঠার ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম কলামে প্রকাশিত সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পাঠ করে প্রতিবেদনের কোনো তথ্য সূত্র পাওয়া যায়নি এবং এতে পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
প্রতিবেদনটি পাঠে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এটি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর একটি ফরমায়েশি প্রতিবেদন যা দৈনিক যুগান্তর এর মত একটি স্বনামধন্য পত্রিকা প্রচার করে কেবলমাত্র বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং তার পরিবারের সুদীর্ঘ সময়ের পেশাগত সুনাম ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্নের এবং মানহানির অপচেষ্টাই নয় একই সঙ্গে বীমা খাতের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। প্রতিবেদেনটি সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, দূরভিসন্ধিমূলক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, ষড়যন্ত্রমূলক ও মানহানিকর।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পাঠানো প্রতিবাদলিপিটি হুবহু প্রকাশ করা হলো:
“লাগামহীন দুর্নীতি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের, খধ্বংস করে দিচ্ছেন একের পর এক বীমা প্রতিষ্ঠান” শিরোনামে একটি খবর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ০২ জুন ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। খবরটিতে কথিত দুর্নীতির কোনো তথ্য উপাত্ত নেই অথচ শিরোনামে লাগামহীন দুর্নীতির উল্লেখ করা হয়েছে। এ খবরটিতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বোর্ড স্থগিত করে "প্রশাসক" নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিষয়ে প্রকৃত তথ্য নিম্নরূপ:
সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লি: এর পরিচালনা পর্ষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে একটি সরকারি সংস্থা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগসম্বলিত একটি প্রতিবেদন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করে। অভিযোগে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত থাকায় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান "হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানি"কে নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদনে নিম্নোক্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণাদি পাওয়া যায়:
১) জনাব মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যগণসহ কয়েকজন নিকট থেকে কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের নামে মোট ৯,১৬,৫০,০০০/- (নয় কোটি ষোল লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়। কোম্পানির এফডিআর এর বিপরীতে ব্যাংক হতে ঋন গ্রহণ করে ও সঞ্চয়ী হিসাব হতে টাকা উত্তোলন করে একই ব্যাংকে কোম্পানির হিসাবে জমা করে উল্লিখিত পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।
২) জনাব মোস্তফা গোলাম কুদ্দস তার স্ত্রী, পুত্র, ২ কন্যা, পুত্রবধূ ও জামাতা পরস্পরের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর করে প্রয়োজনীয় শেয়ার ধারণের মাধ্যমে বিধি বহির্ভূতভাবে পরিবারের ০৭ জন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক থেকে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অনিয়মের সুযোগ তৈরী করেন। উল্লেখ্য তার অপর জামাতাকে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করেন।
৩) বোর্ড সভার কার্যবিবরণীর জাল উদ্ধৃতাংশ দাখিল করে কোম্পানির এফডিআর এর বিপরীতে স্যোস্যাল ইসলামি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক হতে মোট ১৯৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৮১ হাজার ২ শত টাকা ঋন গ্রহণ এবং তন্মধ্যে ৮৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা কোম্পানির বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কয়েকবার স্থানান্তরের পর জনাব গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা করে আত্মসাৎ করেন এবং প্রতি মাসে ব্যাংক ঋনের সুদ পরিশোধ বাবদ (ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা) কোম্পানির ক্ষতি সাধন করেন।
৪) তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে কোম্পানির তহবিল বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সর্বমোট ১৮৭,৮৪,১৫,৯৬৬/- টাকা গ্রহণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তদন্ত কার্যক্রম কার্যপরিধির মধ্যে সীমিত রেখে ও নমুনাভিত্তিক যাচাইয়ের ফলে সকল অনিয়মের তথ্য এ প্রতিবেদনে আসেনি। ব্যাংক সিগনেটরি প্রায় সকলেই একই পরিবরের হওয়ায় কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের সহায়ক অবস্থা তৈরী করেছে।
৫) কোম্পানির অর্থ আত্নসাৎ প্রমাণিত হওয়ায় এবং কোম্পানি ও কয়েক লক্ষ বীমা গ্রাহকের স্বার্থে পূর্ণাঙ্গ অডিটসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত বীমা আইন, ২০১০ এর ৯৫ ধারা মোতাবেক কোম্পানীর বোর্ড "সাসপেন্ড” করে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীনে প্রশাসক কেন নিয়োগ করা হবে না এ বিষয়ে বোর্ডের লিখিত ব্যাখ্যা ও মৌখিক শুনানী গ্রহণ করা হয়।
৬) কোম্পানির বোর্ডের জবাবে জনাব গোলাম কুদ্দুস অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, জনাব মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস প্রতিবেদনে বর্ণিত ১৮৭,৮৪,৯৫,৯৬৬/- টাকার স্থলে ১৫৮,৩৭,২৩,৩০৫/- টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবী করেছেন যে, কোম্পানির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত তার ভবনের ভাড়াবাবদ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত পাওনা ১৯৫,৭৬,৫৮,৮০০/- টাকা ও ভাড়া প্রদানে বিলম্বের ফি বাবদ ২৩,১৩,৮৩,৫৭৬/- এবং কোম্পানিকে প্রদয় ঋণ ১০,৯৩,৩০,৯৪২/-টাকাসহ তার মোট প্রাপ্য ১৪৯,০৩,৭৩,৩১৮/- টাকা তিনি গ্রহণ/ সমন্বয় করেছেন। অবশিষ্ট ৯,৩৩,৪৯,৯৬৭ টাকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তার এ দাবীর সাথে কোম্পানির বুক অফ একাউন্টস, লেজার, কম্পিউটার সিস্টেম জেনারেটেড-ভাউচার, ব্যাংক এডভাইস, চেক ইত্যাদি ডক্যুমেন্টের মিল/সামঞ্জস্য নেই। কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতেও এ ব্যয় অফিস ভাড়া হিসাবে প্রদর্শিত হয়নি।
৭) অধিকন্তু ভবন সালিক হিসেবে জনাব গোলাম কুদ্দুস ও কোম্পানির পক্ষে তার মেয়ের জামাতা অপর পরিচালক জনাব ড্যানিয়েল ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে স্বাক্ষরিত অফিস ভাড়ার চুক্তিটি যে ১০০ টাকার যে ৪ টি ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেগুলো সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ১৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে ডাক বিভাগ গ্রহণ করে। কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের বিষয় উদঘাটিত হওয়ায় তা ভাড়া হিসবে গ্রহণের দাবী করার অপকৌশল হিসেবে জাল ভাড়াচুক্তিনামা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
৮) কোম্পানির জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় বীমা কোম্পানি ও কয়েক লক্ষ বীমা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত আইডিআরএ কর্তৃক বীমা আইন, ২০১০ এর ৯৫ ধারা মোতাবেক সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর বোর্ড গত ২১ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ০৬ (ছয়) মাসের জন্য "সাসপেন্ড” করা হয় এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসি, (অব:) কে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। প্রশাসককে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি যোগ্য দেশী/বিদেশী অডিট ফার্ম দ্বারা কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পাদনের নির্দেশনা দেয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন হলে আত্মসাতকৃত অর্থে পরিমাণ অনেক বেশি হবে মর্মে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
৯) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের আদেশের বিরুদ্ধে কোম্পানির বোর্ড মাননীয় হাইকোর্টে বিভাগে ৪৫১৯/২০২৪ নং রীট মামলা দায়ের করে এবং স্থগিতাদেশ লাভ করে। মাননীয় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আপীল করে এবং আপীল বিভাগের মাননীয় চেম্বার জজ ২৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন এবং মূল রীট মামলাটি ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন। সুতরাং বিষয়টি বর্তমানে মাননীয় আদালতের এখতিয়ারাধীন।
১০) কোম্পানির এই পরিচালকদের দুর্নীতির সহযোগী কর্মচারীদের মাধ্যমে বিশৃংখলা সৃষ্টিসহ নানাভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া আইডিআরএ ও প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে।
১১) তদন্তে সুনির্দিষ্টভাবে প্রায় ২ শত কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয় প্রমাণিত হওয়ার পর অভিযুক্ত বোর্ডকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইডিআরএ কর্তৃক আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেদনে তথ্য উপাত্ত যাচাই না করে বোর্ডকে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ না দিয়ে বোর্ড ভেঙ্গে দেয়ার মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আইডিআরএর চেয়ারম্যান বা কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রহণ না করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থি। বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ ও এ খাতের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আইডিআরএর পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এ রিপোর্ট প্রচার করা হয়েছে।