আর্থিক অনিয়মের দায়ে বরখাস্তকৃত সোনালী লাইফ কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: আর্থিক অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্তকৃত ৫ কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে জমায়েত হয়ে তারা এই দাবি জানান।
এ সময় তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ড পরিচালনা পর্ষদের হাতে সোনালী লাইফের দায়িত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানান। সেই সাথে তারা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নিযুক্ত কোম্পানির প্রশাসককে অপসারণের দাবি জানান।
সূত্র মতে, গত ২ জুলাই সোনালী লাইফ কর্মকর্তাদের নিয়ম বহির্ভুতভাবে নেয়া আর্থিক সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ৭ জুলাই নিয়মবহির্ভূতভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের জন্য কোম্পানির উর্ধ্বতন ৫ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার দাবি-দাওয়া আদায়ে জমায়েত হন সোনালী লাইফের কর্মকর্তারা।
দাবি-দাওয়া আদায়ে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সোনালী লাইফের সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের নেপথ্যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাসপেন্ড পরিচালনা পর্ষদের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
সোনালী লাইফের আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত ১০ বছরের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অধিকতর তদন্তের জন্য গত জুন মাসে হুদাভাসী এন্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিরীক্ষার জন্য সময় দেয়া হয় ৩ মাস। কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক তথ্য প্রদানে নানাভাবেই বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ ওঠে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও কোম্পানি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রশাসককে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করারও অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
সূত্র মতে, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকেই সোনালী লাইফের প্রধান কার্যালয়ের (বর্ধিত) সামনে জমায়েত হয় বীমা কোম্পানিটির ঢাকা ও এর আশপাশে কর্মরত মাঠকর্মী ও কর্মকর্তারা। এ সময় তারা প্রশাসকের অপসারণসহ সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের হাতে কোম্পানির দায়িত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানান।
জমায়েত মাঠকর্মীদের মাঝে বক্তব্য দেন সোনালী লাইফের এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এএমডি) সাহেল রহমান। তিনি বলেন, সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গ্রাহকের কোন অভিযোগ নেই। সঠিক সময়ে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। এই নিয়োগটাই ছিল অবৈধ। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের ১৮৭ কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়টি এড়িয়ে যান সাহেল রহমান।
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্ট যেখানে প্রশাসককে তদন্তের জন্য সময় দিয়েছিল ২ মাস। সেখানে ৩ মাস হয়ে গেলেও এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়াও সোনালী লাইফকে ধংস করার জন্য কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে, সেলস পলিসি বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসকের অদক্ষতার কারণে গত ৩ মাসে সোনালী লাইফের ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সাহেল রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করছি। প্রশাসককে অমান্য করার এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে আইন প্রশাসক নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি আইডিআরএ’র আইনের বাইরে গিয়ে আমাদেরকে ছাঁটাই করছেন। তিনি (প্রশাসক) নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করেছেন, সেলস পলিসি বন্ধ করেছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। এটা করা তার কোন এখতিয়ার নেই।
এসময় আরো বক্তব্য দেন বীমা কোম্পানিটির এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এএমডি) আরেফিন বাদল রনি। তিনি বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। সেলস পলিসি ও বেতন-ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে অবৈধভাবে। জুলাই মাসে এসে তিনি (প্রশাসক) মার্চ মাসে জারি করা সার্কুলার বাতিল করেছেন, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরেফিন বাদলও প্রশাসক অপসারণসহ সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের হাতে কোম্পানি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।