দুর্নীতির তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে প্রশাসকের কর্মকাণ্ডে বাধা, আরো ১৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ আর্থিক সুবিধার দাবিতে আন্দোলন এবং দুর্নীতির তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে প্রশাসকের কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ায় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ের আরো ১৩ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) কোম্পানিটির প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পৃথক চিঠি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ৭ জুলাই আর্থিক অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সোনালী লাইফের উর্ধ্বতন ৫ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এই প্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই থেকে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে জমায়েত হয়ে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালসহ কোম্পানির আগের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার দাবি করে আসছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা। ।
সোনালী লাইফের বরখাস্ত হওয়া ১৩ কর্মকর্তা হলেন- কোম্পানিটির সিনিয়র ম্যানেজার সাহিদুর রহমান, সিনিয়র ম্যানেজার সঞ্জয় চক্রবর্তী, এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মৌসুমী রায়, ম্যানেজার আবদুল মালিক, এসিসটেন্ট ম্যানেজার আহমেদ সরোয়ার জনি, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মৌসুমী দাসগুপ্ত, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার কাউসার আহমেদ রাসেল, এক্সিকিউটিভ অফিসার সাব্বির হোসেন, সিনিয়র অফিসার নাইমুর রহমান, সিনিয়র অফিসার পলি রানী সরকার, সিনিয়র অফিসার মিলন মাহমুদ, সিনিয়র অফিসার মাহবুবা জিন্নাত এবং অফিসার মিজানুর রহমান।
বরখাস্তকৃত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে নিয়োগের শর্তাবলী লঙ্ঘন এবং গ্রাহকসেবা বন্ধসহ কোম্পানিকে কোনরূপ সার্ভিস প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও সাধারণ এমপ্লয়িদের কর্মবিরতি পালনসহ আন্দোলনে যেতে উস্কানি দেয়া এবং রীতিমত বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
একইসেঙ্গে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে কোম্পানি কোন পাওনা থাকলে তা কোম্পানিকে ফেরত প্রদান করে তাদের দেনা-পাওনা ব্যাপারে এইচআর এবং একাউন্টস বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের দ্বারা সংগঠিত কোন কার্যের জন্য ভবিষ্যতে কোম্পানি ও কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হলে তার দায়ভার তাদের ওপর বর্তাবে বলে চিঠতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্দোলনকারিরা গত রোববার (৭ জুলাই) দাবি করেন, কোম্পানি তাদের কমিশন দিচ্ছে ব্যবসার বিপরীতে। এই কমিশনের টাকা তাদের নিজেদের ন্যায্য পাওনা। কিন্তু ব্যবসা হওয়ার জন্য যে ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন সেটার জন্য অ্যালাওয়েন্স কে দিবে! মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করবেন তাদেরকে ইনসেনটিভ-অ্যালাওয়েন্স কেন দেয়া হবে না।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিয়মের মধ্যে যা পাওনা সেটা দিয়ে দেয়া হয়েছে। কর্মীদের কোন পাওনা বকেয়া নেই। কিন্তু বেআইনিভাবে যে আর্থিক সুবিধা চাওয়া হয়েছে সেটা আইনগতভাবে দেয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বোনাস, ইনসেনটিভ, মার্কেটিং এক্সপেন্সসহ বিভিন্ন নামে পলিসি খুলে রেখেছে কোম্পানি; যা সরকারী বা আইডিআরএ’র পলিসির সাথে সাংঘর্ষিক- সেটা আমি দিতে পারি না।
সূত্র মতে, গত ২ জুলাই সোনালী লাইফ কর্মকর্তাদের নিয়ম বহির্ভুতভাবে নেয়া আর্থিক সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ৭ জুলাই নিয়মবহির্ভূতভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের জন্য কোম্পানির উর্ধ্বতন ৫ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর ৯ জুলাই দাবি-দাওয়া আদায়ে জমায়েত হন সোনালী লাইফের কর্মকর্তারা।
এ সময় তারা বরখাস্তকৃত ৫ কর্মকর্তাকে পুনর্বহালসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ড পরিচালনা পর্ষদের হাতে সোনালী লাইফের দায়িত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানান। সেই সাথে তারা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নিযুক্ত কোম্পানির প্রশাসককে অপসারণের দাবি জানান।
সোনালী লাইফের প্রধান কার্যালয়ে জমায়েত হয়ে দাবি-দাওয়া আদায়ে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোম্পানিটির সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও এসব কর্মকর্তার নেপথ্যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাসপেন্ড পরিচালনা পর্ষদের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
সোনালী লাইফের আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত ১০ বছরের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অধিকতর তদন্তের জন্য গত জুন মাসে হুদাভাসী এন্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিরীক্ষার জন্য সময় দেয়া হয় ৩ মাস।
কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক তথ্য প্রদানে নানাভাবেই বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ ওঠে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও কোম্পানি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রশাসককে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করারও অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।