অর্থ আত্মসাতকারীদের শাস্তি প্রদানের দাবি

ফারইস্ট লাইফে নতুন পর্ষদ গঠন ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালে মানববন্ধন-স্মারকলিপি প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অর্থ আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান, বর্তমান পর্ষদ ভেঙ্গে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিয়ে পর্ষদ গঠন, গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা দ্রুত পরিশোধ এবং চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহালের দাবিতে গত দু’দিন ধরে আন্দোলন করছেন বীমা কোম্পানিটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকেই তারা রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। পরে তারা সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে ৯ দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেন।

আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। বঞ্চিত গ্রাহকদের মেয়াদপূর্তির টাকা ও মরনোত্তর বীমা দাবি দ্রুত পরিশোধ করা।

পলায়নকারী হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট জবরদখলকারী সালমান এফ রহমানের গঠনকৃত পরিচালনা পর্যদের পদত্যাগ এবং আত্মসাতকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা উদ্ধার ও অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে বোর্ড পুনর্গঠন ও দায়িত্ব হস্তান্তর করা।

কোম্পানির হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় এনে অর্থ উদ্ধারসহ তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের পদত্যাগসহ কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করা।

ভাইস চেয়ারম্যান ড. মো. ইব্রাহিম হোসেন খানের পদত্যাগসহ কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করা। দুর্নীতিবাজ ও অনৈতিক কাজের সহযোগী, অদক্ষ, অযোগ্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আপেল মাহমুদকে বহিষ্কার করা।

এ ছাড়াও সালমান এফ রহমান ও শেখ কবির হোসেনের নিয়োগকৃত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে চাকরি থেকে বহিস্কার করার দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বঞ্চিত গ্রাহকদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের অন্যতম একজন নুরুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করার পাশাপাশি তাদের পছন্দের লোকজন নিয়োগ দিতে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে যারা নিবেদিত ছিলেন তাদের চাকরিচ্যুত করেছে।

তিনি বলেন, একদিকে হঠাৎ করে চাকরি হারিয়ে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মানবেতন জীবন-যাপন করতে হয়েছে। অপরদিকে কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করায় হাজার হাজার গ্রাহকের পাওনা টাকা বকেয়া রয়েছে। বহু কষ্টে জমানো এসব টাকা ফেরত পেতে বীমা গ্রাহকদের বছরের পর বছর কোম্পানির কাছে ধর্না দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখনও তারা বীমার টাকা পাচ্ছেন না।

এ কারণে আমরা কোম্পানির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে যারা কোম্পানির উদ্যোক্তা ছিলেন তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার দাবি জানিয়েছি। একইসঙ্গে অর্থ আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান, গ্রাহকদের দাবি দ্রুত পরিশোধসহ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছি, বলেন নুরুল্লাহ সিদ্দিকী।

উল্লেখ্য, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার তহবিল তসরুফ হয়েছে। যার মধ্যে ২ হাজার ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা তসরুফ করা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে জমি ক্রয় ও উন্নয়ন দেখিয়ে, এমটিডিআর বন্ধক রেখে পরিচালক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া এবং ক্ষতিকর বিনিয়োগ করে। বাকি ৪৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা তসরুফ করা হয়েছে পরিচালনাগত ত্রুটি ও অনিয়ম করে। 

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই তদন্তের জন্য গত ২৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে তদন্তকারী হিসেবে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. কে নিয়োগ করে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১৮ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।