স্বাস্থ্য সেবায় যেসব সুবিধা দিচ্ছে বীমা কোম্পানি
জহুরুল ইসলাম: অনাকাঙ্খিত অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আর্থিক সুরক্ষা দেয় স্বাস্থ্য বীমা। একইসঙ্গে উন্নত চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত হয় স্বাস্থ্য বীমায়। বিশ্বের অনেক দেশেই নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠির জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি।
তবে এরইমধ্যে দেশের বেশ কিছু বেসরকারি বীমা কোম্পানি এই স্বাস্থ্য বীমা সেবা চালু করেছে। হাসপাতালে ভর্তি অথবা বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
গ্রুপ বীমা বা একক বীমার আওতায় সহযোগী বীমা হিসেবে এই স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিচ্ছে দেশের লাইফ বীমা কোম্পানি। আর নন-লাইফ বীমা কোম্পানি এই স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিচ্ছে স্ট্যান্ডালোন বা স্বতন্ত্রভাবে।
তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ২০২৩ সালের নির্দেশনা অনুসারে লাইফ বীমা কোম্পানিও এখন স্ট্যান্ডালোন হেলথ ইন্স্যুরেন্স পলিসি ইস্যু করতে পারে।
রোগ-ব্যাধী এবং চিকিৎসা নেয়ার ধরণের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম। এক্ষেত্রে প্রচলিত অন্যান্য বীমার মতো স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গ্রাহকের বয়স।
স্বাস্থ্য বীমা পলিসিতে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়
স্বাস্থ্য বীমা থাকলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব আর্থিক সুরক্ষা পাওয়া যায়, এরমধ্যে রয়েছে- ডাক্তার ভিজিট ফি, নার্সিং ফি, রোগ নির্ণয় পরীক্ষাসমুহের খরচ, আইসিইউ/সিসিইউ/এইচডিইউ খরচ, হাসপাতালে ভর্তি ফি, হাসপাতালের বেড ভাড়া, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া, অপারেশন কক্ষের ফি, সার্জন ফি, ঔষধের খরচ, ড্রেসিং ফি ইত্যাদি।
এছাড়াও স্বাস্থ্য বীমা থাকলে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির নেটওয়ার্কভুক্ত হাসপাতালে গ্রাহকের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়।
দেশে প্রচলিত স্বাস্থ্য বীমা পলিসি
বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমার মধ্যে হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি, হাসপাতাল ক্যাশ পলিসি এবং দুরারোগ্য ব্যাধির বীমা পলিসি অন্যতম। কোম্পানিগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব স্বাস্থ্য বীমা পলিসি বাজারজাত করে আসছে।
হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসির ক্ষেত্রে গ্রাহক তার বীমা অংকের সমপরিমাণ অর্থ চিকিৎসা খরচ বাবদ ফেরত পায়। এই বীমা পলিসিতে প্রিমিয়াম দিতে হয় বছরে একবার।
হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসিতে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তারমধ্যে জীবন বীমা এবং বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবা যেমন- আউটডোর ভিজিট, টেস্ট ইত্যাদি কাভারেজ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য এই বীমা পলিসি গ্রহণ করে থাকে।
হাসপাতাল ক্যাশ পলিসি আরেকটু সহজ ধরণের স্বাস্থ্য বীমা, যার মাধ্যমে বীমা গ্রহীতা হাসপাতালে চিকিৎসার বিপরীতে দৈনিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন।
এই ধরণের বীমা পলিসির ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় কত টাকা হয়েছে সেটা নয় বরং কত দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তার বিপরীতে প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ বীমা দাবি বাবদ পরিশোধ করা হয়।
হাসপাতাল ক্যাশ পলিসির সাথে জীবন বীমা ও বহির্বিভাগের চিকিৎসা ব্যয়ের কাভারেজ অন্তর্ভুক্ত থাকে। তুলনামূলক অল্প প্রিমিয়াম দিয়েই এই পলিসির আওতায় স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পায় গ্রাহক।
ক্যান্সার, হার্ট এটাক, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারিসহ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো কিছু সুনির্দিষ্ট দুরারোগ্য রোগের ক্ষেত্রে বড় অংকের আর্থিক সুবিধা দেয় ক্রিটিকাল ইলনেস বা দুরারোগ্য ব্যাধির বীমা পলিসি। চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি জীবন বীমা সুবিধাও দেয়া হয় এই বীমা পলিসিতে।
দুরারোগ্য ব্যাধির বীমা পলিসির ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি ভাগে বীমা দাবির টাকা দেয়া হয়। রোগ নির্ণয় হলে বীমা অংকের একটি অংশ দেয়া হয় এবং চিকিৎসা খরচের বিপরীতে দেয়া হয় বীমা অংকের বাকী টাকা। এই ধরণের বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের পরিমাণও সাধারণত খুব কম হয়।
অনেক সময় দুরারোগ্য ব্যাধির কাভারেজটি হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি বা হাসপাতাল ক্যাশ পলিসির সাথে যুক্ত থাকে যেন একটি পলিসিতেই সব ধরণের কাভারেজ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও অন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসির সাথে পৃথকভাবেও দুরারোগ্য ব্যাধির পলিসি গ্রহণ করা যায়।
দেশের বীমা খাতে মেটলাইফ ও চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুরুত্বের সাথে এই দুরারোগ্য ব্যাধির বীমা সেবা দিয়ে আসছে। মেটলাইফের এই বীমা পলিসির নাম ক্রিটিকাল ইলনেস ইন্স্যুরেন্স প্রোটেকশন প্লান (সিআইআইপিপি) । চার্টার্ড সুরক্ষা নামে এই বীমা সেবা দিচ্ছে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আর ক্যানসার কেয়ার নামে একটি বীমা পলিসি বিক্রি করছে গার্ডিয়ান লাইফ।
এ ছাড়াও ডেল্টা লাইফ, প্রগতি লাইফ, বেঙ্গল ইসলামী লাইফ, জেনিথ ইসলামী লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফসহ বেশ কিছু লাইফ বীমা কোম্পানি তাদের গ্রুপ টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাথে সাপ্লিমেন্টারি কাভারেজ হিসেবে এই দুরারোগ্য ব্যাধির বীমা এবং হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি ও হাসপাতাল ক্যাশ পলিসির মতো স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিয়ে আসছে।
গ্রুপ বীমার আওতায় যেভাবে স্বাস্থ্য বীমা সেবা দেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে মূখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বিআইএফ’র ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান বলেন, আমরা মনে করি স্বাস্থ্যসেবা একটি বিরাট সম্ভাবনার খাত। স্বাস্থ্য বীমাটা যদি আমরা জনপ্রিয় করতে পারি তাহলে এর মাধ্যমে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রোথ এবং জিডিপিতে এ খাতের কনট্রিবিউশন বাড়াতে পারব বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, আমাদের কোন গ্রাহক যদি ডাক্তার দেখায় তাহলে ডাক্তারের ভিজিট বিলটাও আমরা দিয়ে থাকি; এটা আমাদের আউটডোর সুবিধার একটি। গ্রাহক যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকে তাহলে আমরা আইসিইউ বিল দেই। বেড রেন্ট বিল দেই। মেডিসিনের বিল দেই। এর পাশাপাশি আমাদের নেটওয়ার্কভুক্ত ১২০টা হসপিটালে ডিসকাউন্ট সুবিধা পেয়ে থাকেন গ্রাহক; শুধু নিজের না তার পরিবারে সদস্যদেরও ডিসকাউন্ট সুবিধা দেয়া হয়।
জেনিথ লাইফের মুখ্য নির্বাহী বলেন, আমাদের ক্যাশলেস সুবিধা আছে। ক্যাশলেস সুবিধা হচ্ছে- গ্রাহক চিকিৎসা নিয়ে আসবে আমরা হাসপাতালে তার বিল দিয়ে দিব, তার কোন টাকাও দিতে হবে না। এক্ষেত্রে গ্রাহকের লিমিটের বাইরে যে টাকাটা আসবে সে টাকাটা শুধু পে করবে।
এস এম নুরুজ্জামান আরো বলেন, শুধু বাংলাদেশে হসপিটালে চিকিৎসা খরচ নয়, সারাবিশ্বের যেকোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে আমরা গ্রাহকের চিকিৎসার খরচ দিব। অরিজিনাল রশিদ আমাদের দিতে হবে না; গ্রাহকরা অ্যাপসের মাধ্যমে কাগজগুলো দিয়ে দিবে আমরা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তার একাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা বীমার টাকা পরিশোধ করব।
নন-লাইফ বীমা খাতে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সসহ বেশ কিছু কোম্পানি স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিয়ে আসছে। হসপিটালাইজেশন, ওভারসীস মেডিক্লেইমসহ ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমেও স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিয়ে আসছে এ খাতের কোম্পানিগুলো।
নন-লাইফ বীমা কোম্পানি যেভাবে স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিয়ে আসছে সে বিষয়ে সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিক শামীম বলেন, কোন কোন দেশে যেটাকে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স বলে আমরা যেটাকে ওভারসিস মেডিক্লেইম বলি- এটা স্বাস্থ্য বীমার একটা উল্লেখযোগ্য স্থান; যেটাতে সেবা প্রদান করা সম্ভব খুব কম প্রিমিয়ামে। যখনই কোন লোক ভ্রমণে যাবে দেশে বা বিদেশে যেকোন যায়গায় ভ্রমণকালীন সময়ে যেকোন অসুস্থতার জন্য সেটা হসপিটালাইজেশন বা আউট পেশেন্ট হিসেবে বীমা কাভারেজ প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, এই যায়গাটায় আমরা ভালো কাজ করছি; দেশে-বিদেশে দুই যায়গায়। বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসি গ্রহণের একটা সনদ নিতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হয়ে কাজ করে বাংলাদেশে একটা অ্যাম্বাসির কাছ থেকে সনদ নিতে হয়। আমার জানা মতে, বাংলাদেশে অন্তত ১৫টি কোম্পানির এই সনদ আছে যারা এই ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স বা ওভারসিস মেডিক্লেইম পলিসি ইস্যু করতে পারে।
শফিক শামীম বলেন, কোভিডের পর থেকে মানুষের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। মানুষ এখন বিদেশ গেলে ওভারসিস মেডিক্লেইম পলিসিটা নেয়। এটা সর্বনিম্ন দুই সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্ছ ৩৬৫ দিন অথবা এক বছর পর্যন্ত এই পলিসি ইস্যু করা যায়। একেক দেশের জন্য ট্যারিফ রেট বা সেবার প্রকার একেক রকম। যেমন- সেনজেন দেশের জন্য এক রকম। আবার সেনজেন বহির্ভূত দেশের জন্য এক রকম। আমেরিকা, কানাডার জন্য এক রকম। অস্ট্রেলিয়ার জন্য এক রকম। এশিয়া দেশের জন্য ট্যারিফ মোটামুটি একই রকম।
তিনি আরো বলেন, আজকাল ওভারসিস মেডিক্লেইম একটা বড় ক্ষেত্র। যেকোন ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট করতে গেলেই তারা এই স্বাস্থ্য বীমা পলিসির কথা বলবে। আমাদের সাথে অনেক ট্রাভেল এজেন্সির ডিলিংস আছে, যখনই তাদের পলিসি দরকার আমরা তাদের পলিসি ইস্যু করে থাকি। বীমা গ্রহীতা যদি জানে ট্রাভেল এজেন্সি ছাড়াও সরাসরি বীমা কোম্পানির কাজ থেকে এই পলিসি নেয়া যায়, তাহলে তাদের খরচ অনেকটা কমে আসবে।
যেভাবে স্বাস্থ্য বীমা পলিসি করবেন
বীমা কোম্পানিগুলোর এজেন্টের মাধ্যমে অথবা তাদের ওয়েবসাইটে গিয়েও নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বীমা পলিসি গ্রহণ করা যায়। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের পাশাপাশি বিশেষ ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্য ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। স্বাস্থ্য বীমার ধরণের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা থাকে গ্রাহকের পলিসি গ্রহণের বয়সসীমা।
তবে স্বাস্থ্য বীমা নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পলিসির সুবিধা-অসুবিধা এবং এক্সক্লুশন তথা ঝুঁকি বহির্ভূত থাকার বিষয়টি ভালোভাবে জানা থাকা জরুরি।
এ বিষয়ে বেঙ্গল ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল আলম তপন বলেন, স্বাস্থ্য বীমা আসলে গ্রাহককে সচেতন করেই বিক্রি করা উচিৎ। সে ক্ষেত্রে আমাদের বেশি লক্ষ্য রাখতে হয় গ্রাহকের ডিকলারেশনে। যেখানে তার স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো বিশেষ করে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস হাইপারটেনশন পুরানো রোগের ইস্যু থাকে। গ্রাহকের এই পুরনো রোগ আছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা নিয়ে এই পলিসিগুলো উপস্থাপন করা দরকার।
মনিরুল আলম তপন বলেন, স্বাস্থ্য বীমা বা জীবন বীমা নেয়ার জন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হতে হয় এবং নিয়মিত প্রিমিয়াম দেয়ার সক্ষমতা থাকতে হয়। এটাকে লক্ষ্য রেখে যদি আমরা পলিসি বিক্রি করি তাহলে গ্রাহক উপকৃত হয় এবং সচেতনভাবে কোম্পানিগুলো পলিসি সেল করলে বীমা দাবিও সঠিক সময়ে পেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো সার্ভিসের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা যেটা করছি, ৩ থেকে ১৪ দিনের ভিতরে স্বাস্থ্য বীমা দাবি পরিশোধ করছি। কারণ, এটাই একমাত্র যায়গা যেখানে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা সম্ভব। আমরা খুবই আশাবাদি স্বাস্থ্য বীমা বাংলাদেশে আরো দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করবে।
স্বাস্থ্য বীমা দাবি পেতে করণীয়
বীমা গ্রাহকের জন্য দাবি নিষ্পত্তিকরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বীমার কোন গ্রাহক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে তা জানানো প্রয়োজন। একইসঙ্গে কোম্পানির নির্ধারিত ফরম পূরণ করে দাবি উত্থাপন করতে হয়।
এক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও বিলসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করতে হয় বীমা কোম্পানিতে।
স্বাস্থ্য বীমার দাবি তখনই পরিশোধযোগ্য হয়, যখন বীমার প্রিমিয়াম আপ-টু-ডেট থাকে এবং নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে দাবি উত্থাপন করা হয়। মৃত্যুদাবির ক্ষেত্রেও এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে
চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, বীমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের এবং আমাদের কোম্পানিগুলোর কিছু বিষয় সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন; বিশেষ করে যারা দাবি উত্থাপন করবেন। স্বাস্থ্য বীমা দাবি পেশ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। আমরা বলে থাকি- এক মাসের মধ্যে আমাদেরকে নটিফাই করা এবং কোম্পানিগুলো তিন মাসের মধ্যে ক্লেইম স্যাটেল করা দেয়ার নিয়ম আছে। যদিও আমাদের দেশে অনেক সময় আমাদের গ্রাহকরা দেরিতে জমা দেয়। সেক্ষেত্রে আমরা এক বছর পর্যন্ত বীমা দাবি এক্সসেপ্ট করে থাকি। এ ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার ফলে যেটা হয় বীমা দাবি নিষ্পত্তিতেও দেরি হওয়ার এক ধরনের সম্ভাবনা থাকে।
এস এম জিয়াউল হক বলেন, আমরা গ্রাহককে সচেতন করতে পারি এবং কোম্পানিগুলোর যায়গা থেকে এই বিষয়টা বীমা দাবির যে পলিসিগুলো আছে সে পলিসির সাথে যদি চেকলিস্ট দিয়ে দেয়া হয় যে কাগজপত্র প্রয়োজন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া থাকে তাহলে দ্রুত বীমা নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এখানে আমরা কিছু অসহযোগিতা দেখি বিশেষ করে হসপিটালগুলো যখন ক্লেইম সেটেল করে কাগজপত্র দেয়ার সময় ইনকমপ্লিট পেপারস দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের কিন্তু ভোগান্তি হয় এবং গ্রাহকদের ভোগান্তি হয় বলেই আমাদের এখানে সার্বিকভাবে সচেতনতাটা প্রয়োজন। গড়িমসির সাথে যদি আমরা আরো উন্নত সেবাটা দেয়ার ভাবনা নিয়ে আসতে পারি তাহলে কিন্তু গ্রাহকের সন্তুষ্টির মাধ্যমে স্বাস্থ্য বীমাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
চাটার্ড লাইফের এই মুখ্য নির্বাহী বলেন, স্বাস্থ্য বীমা সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরেকটি বিষয় সব সময় মনে রাখা উচিৎ। পলিসির ভিতরে কিছু নিয়ম-নীতি বা গাইডলাইন দেয়া থাকে সেই গাইডলাইনগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে ফলো করতে পারি তাহলে বীমা দাবি নিষ্পত্তি দ্রুত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, পলিসি করার সময় আমরা যে ডিক্লারেশনটা দেই সেই ডিক্লারেশনটাতে আমাদের কোন কিছু গোপন না করে সঠিক ডিক্লারেশন দিলে কিন্তু দাবি নিষ্পত্তিও সহজ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে প্রি-এক্সিস্টিং হয়ে যায় যেহেতু সঠিকভাবে তার ডিক্লারেশনটা না আসার কারণে।
তিনি বলেন, আরো একটি বিষয় থাকে- পলিসিতে কিছু এক্সক্লুশন থাকে স্পেসিফিকভাবে জানা থাকে- এই পলিসিতে এই এই বেনিফিট পাওয়া যাবে না। এই বিষয়টা আমরা বলব- যারা আমাদের বীমা কর্মী, বীমা বিপননের সময় আমাদের গ্রাহককে যদি সঠিকভাবে জানিয়ে রাখেন তাহলে গ্রাহকও কিন্তু সচেতনভাবে ওই দাবিগুলো করে থাকেন না। আবার অনেক সময় দাবি করে থাকলেও গ্রাহককে কিন্তু এই জিনিসটা বুঝতে হবে যে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে সেই সীমাবদ্ধতার কারণেই আমরা এইগুলোকে এক্সক্লুশন করে রেখেছি। যেগুলো এক্সক্লুডেট সেগুলোকে চিন্তা করেই পলিসি প্রিমিয়ামটা তৈরি করা।
এস এম জিয়াউল হক বলেন, সার্বিকভাবে আমি যদি বলি এখানে যারা বীমা কোম্পানি বিপনন করছে এবং গ্রাহক এবং সাথে সাথে এইখানে যে সহযোগিতা করছে সেই হসপিটালগুলো বা আমাদের চিকিৎক সমাজকে যদি আমরা বীমার সেবার ব্যাপারে আরো সচেতন করতে পারি তাহলে সার্বিকভাবে আমরা সবাই মিলে উন্নত ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকসেবা দিতে পারব এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।