পাসপোর্টের তথ্য দাখিলের নির্দেশে বীমা খাতে অস্বস্তি, বাধ্যতামূলক নয় বলছে আইডিআরএ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সেক্রেটারির জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের সত্যায়িত অনুলিপি চেয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই তথ্য চাওয়া হয়।
এর আগে পাসপোর্টের কোন তথ্য আইডিআরএ থেকে চাওয়া হয়নি। এমনকি আইন ও বিধি-প্রবিধানেও পাসপোর্টের তথ্য চাওয়ার নির্দেশনা নেই। ফলে কি উদ্দেশ্যে পাসপোর্টের তথ্য চাওয়া হলো তা নিয়ে যেমন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি নির্দেশনা মানতেও অস্বস্তিতে পড়েছে গোটা বীমা খাত।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে জানানো হয়েছে, পাসপোর্টের ফটোকপি দাখিল করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়।
বীমা আইন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ও বিধি-প্রবিধান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বীমা কোম্পানির উপদেষ্টা ও মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের পূর্ব অনুমোদন দেয় আইডিআরএ। এক্ষেত্রে নথিপত্র দাখিলের চেকলিস্টে পাসপোর্টের ফটোকপি দাখিল করতে হবে এমন কোন নির্দেশনা নেই। এ দু’টি পদ ছাড়া অন্য কোন পদে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয় না।
এ ছাড়াও প্রতি বছর পরিচালকদের সম্পদ বিবরণী ও হলফনামা দাখিল করতে হয়। তবে এই হলফনামা ও সম্পদ বিবরণীর সাথে পাসপোর্টের কপি চাওয়া হয় না। অপরদিকে শেয়ার হস্তান্তর, ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব নথিপত্র চাওয়া হয় সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দাখিলের নির্দেশনা থাকলেও পাসপোর্টের ফটোকপি দাখিলের কোন নির্দেশনা নেই।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাসপোর্টের তথ্য ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়। আইডিআরএ’কে তথ্য চাওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে। তবে পাসপোর্টের তথ্য চাওয়ার বিষয়টি বীমা ব্যবসার কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত নয়। পাসপোর্টের তথ্য দেয়া হলে তা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
এ বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তনয় কুমার সাহা, যিনি দেশের বীমা শিল্প নিয়ে এক দশক ধরে কাজ করছেন, তিনি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, বীমা খাত সুনিয়ন্ত্রণের স্বার্থে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চাওয়ার বিষয়টি যথার্থ। তবে পাসপোর্টের তথ্য চাওয়ার যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট নয়।
তিনি আরো বলেন, বীমা কোম্পানির উপদেষ্টা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয় না।
সেক্ষেত্রে সুনিয়ন্ত্রণের স্বার্থে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যন্ত তথ্য চাওয়ার বিষয়টি ঠিক আছে। তাছাড়া উপদেষ্টা ও মুখ্য নির্বাহীর তথ্য হালনাগাদ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য নিলেই যথেষ্ট।
কারণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়েই পাসপোর্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টের তথ্য নাও চাইতে পারত আইডিআরএ, বলেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তনয় কুমার সাহা।
এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র সোলাইমান বলেন, তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজেন পাসপোর্টের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি।