শতকোটির উর্ধ্বে নন-লাইফ বীমার ১৫ কোম্পানির বিনিয়োগ

তাফহিমুল ইসলাম: আধুনিক অর্থনীতিতে বীমার গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। বীমা কোম্পানিগুলো সারা দেশে প্রিমিয়াম আকারে অর্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জাতীয় সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বও পালন করে বীমা খাত।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন বীমা কোম্পানি অনুমোদনের পর থেকে বর্তমানে ৪৬ টি সরকারি-বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানি দেশের বাজারে ব্যবসা করছে। এর মধ্যে বেসরকারি ৪৫ টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ২০২০ সালে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮শ’ ১৫ কোটি টাকা।

৪৫ টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ২০২০ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে মোট বিনিয়োগের এমন চিত্র পেয়েছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। 

নন-লাইফের ৪৫ কোম্পানির মধ্যে ১৫ কোম্পানির বিনিয়োগ ১০০ কোটি টাকার উপরে। এই ১৫ কোম্পানির বিনিয়োগ নন-লাইফ খাতের মোট বিনিয়োগের ৬১.৯০ শতাংশ। যা টাকার অংকে ২ হাজার ৯শ’ ৬৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর বাকি ২৫ টি কোম্পানির মোট বিনিয়োগ ১ হাজার ৮শ’ ২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ৫শ’ ৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যা নন-লাইফ খাতে মোট বিনিয়োগের ১২.১৪ শতাংশ। ১১.২৮ শতাংশ বিনিয়োগ নিয়ে পরের অবস্থানের রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ২০২০ সালে বিনিয়োগ ৫শ’ ৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।  এই হিসাবে কোম্পানি দুটির বিনিয়োগ পরিমাণ নন-লাইফ খাতের মোট বিনিয়োগের ২৩.৪২ শতাংশ।

রিলায়েন্স ও গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স বাদে ৩০০ কোটির উপরে বিনিয়োগ নেই আর কোন কোম্পানির। ২শ’ ৮৭ কোটি ২১ লাখ টাকা বিনিয়োগ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স। বিনিয়োগের পরিমাণের দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, কোম্পানিটির বিনিয়োগ ২শ’ কোটি ৭ লাখ টাকা।

এরপরে যথাক্রমে বিনিয়োগ রয়েছে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, সিকদার ইন্স্যুরেন্স ১শ’ ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১শ’ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এ ছাড়াও ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকা মধ্যে বিনিয়োগ রয়েছে আরো ৬ কোম্পানির। এর মধ্যে ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৯৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, ইষ্টার্ণ ইন্স্যুরেন্সের ৯৩ কোটি ৭ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং ৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে নিটল ইন্স্যুরেন্স।

৩০ কোটি টাকার নিচে বিনিয়োগ রয়েছে ৫ কোম্পানির। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্সের। কোম্পানিটির বিনিয়োগ ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের  ১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগ ২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

বিনিয়োগ নিয়ে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, আমাদের কোম্পানির বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণ যদি বলি তাহলে এর পুরো কৃতিত্ব ম্যানেজমেন্টের। তাদের সূদূর প্রসারী চিন্তার ফলে কোম্পানি লাভবান হচ্ছে। বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কিছু নির্দেশনা দিয়ে দেয়, এইসব স্থানে বিনেয়োগ করা যাবে এর বাহিরে যাবে না। অন্য কোম্পানি কি করে তা তো বলতে পারছি না। আমরা নির্দেশনা ফলো করি। এর ফলে আমাদের কোম্পানির বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিকদার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুর রফিক বলেন, একেক কোম্পানির বিনিয়োগ একেক ধরনের। আমাদের রি-ইন্স্যুরেন্স, ট্যাক্স ও ভ্যাট বাকি নেই। অল্প ব্যবসা করলেও আমাদেরে খরচও কম তাই আমাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বড় কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বেশি এর ফলে তাদের বিনিয়োগ সেইভাবে বাড়ছে না। যেখানে একটি পুরনো কোম্পানি আগে যা আয় করতো এখনো একই রকম আয় করে। কিন্তু তাদের আয় একই থাকলেও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে সেইভাবে আমাদের ব্যয় বৃদ্ধি হয়নি। তাই আমরা এই অবস্থানে এসেছি।   

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি) মহাপরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, শুধু নন-লাইফ কেন লাইফেরও একই অবস্থা। কিন্তু নন-লাইফের সব কোম্পানির বিনিয়োগ এক সাথে করলে আসলে বুঝা যাবে না কে কেমন করতেছে। নতুন বা ৪র্থ প্রজন্মের কোম্পানিগুলো স্বাভাবিকভাবে ভালো করবে না, কিন্তু ১ম প্রজন্মের কোম্পানিগুলো ভালো না করলে এটা তাদের ব্যার্থতা।