রি-ইন্স্যুরেন্স হিসাব বিবরণী পরিবর্তন করে ৪১ কোটি টাকার বীমা দাবি অনুমোদন
বিশেষ প্রতিবেদক: বিদেশী রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি টাকা দেবে –এই অজুহাতে ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৭৯৩ টাকার পুনর্বীমা দাবি পরিশোধের অনুমোদন দিয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) । এই অনুমোদন দেয়া হয় গত মে মাসে। অথচ এর এক মাস আগেই প্রিমিয়াম প্রদান না করায় ফ্যাকাল্টেটিভ অংশের পুনর্বীমার এই দাবিটি রিকভারি অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবসা উন্নয়ন ও গ্রাহকসেবা কমিটির সভায়।
আর পুনর্বীমা দাবিটি পরিশোধ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বৈধতা দিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ দেখানো হয় পুনর্বীমা প্রিমিয়াম কালেকশনের হিসাব বিবরণী পরিবর্তন করে। সেই সাথে পুনর্বীমা করার নিয়ম-নীতির বিষয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৭৯৩ টাকার পুনর্বীমা দাবি পরিশোধের অনুমোদন দেয় সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) । এই অনুমোদন দেয়া হয় মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র একটি অগ্নি বীমা পলিসির ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার বিপরীতে।
কেন, কীভাবে দাবি অনুমোদন করা হলো তা নিয়ে বীমা খাতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কীভাবে পুনর্বীমা দাবিটি অনুমোদন দিয়েছে সাধারণ বীমা করপোরশন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ টাকার পুনর্বীমা দাবি উত্থাপান করে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স। যার মধ্যে সারপ্লাস ট্রিটি অংশের ৪১ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৫ টাকা এবং ফ্যাকাল্টেটিভ অংশের ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৭৯৩ টাকা।
২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে নামে ১০০ কোটি টাকার একটি অগ্নি বীমা পলিসির বিপরীতে এই পুনর্বীমা দাবি উত্থাপন করে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স। ২০২১ সালে ৩ জানুয়ারি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে আগুণে পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় জরীপকারিরা ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের দাবি ১০০ কোটি টাকার এই অগ্নি বীমা পলিসির মধ্যে ১ কোটি টাকার ঝুঁকি নিজে রেখে বাকি ৯৯ কোটি টাকার-ই পুনর্বীমা করে সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি)’র কাছে। যার মধ্যে ৫০ কোটি টাকা পুনর্বীমা করেছে সারপ্লাস ট্রিটিরি আওতায়। আর ফ্যাকাল্টেটিভ এর আওতায় বাকি ৪৯ কোটি টাকা পুনর্বীমা করা হয়।
উল্লেখ্য, সারপ্লাস ট্রিটি সাধারণ বীমা করপোরেশনের একটি বার্ষিক চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় প্রতি ৩ মাস অন্তর প্রিমিয়াম দিতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ বীমা করপোরেশন সারপ্লাস ট্রিট্রির প্রিমিয়াম বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সরকারি সম্পত্তির বীমা বাবদ পাওনা টাকার সাথে সমন্বয় করে থাকে।
সারপ্লাস ট্রিট্রির আওতায় কোন পলিসি পুনর্বীমা নেয়ার পরও ওই পলিসির ঝুঁকি অতিরিক্ত থাকলে তার পুনর্বীমা করা হয় ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার আওতায়। বিশ্বব্যাপী ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বকেয়া রাখা হয় না। যেদিন ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা করা হয় সেদিন-ই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা হয়। ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়ামের টাকা সমন্বয়ও করা হয় না।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের পুনর্বীমা দাবির মধ্যে সারপ্লাস ট্রিটি অংশের ৪১ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৫ টাকা পুনর্বীমা দাবির রিকভারি অনুমোদন করা হয় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবসা উন্নয়ন ও গ্রাহকসেবা কমিটির ১৭৮তম সভায়। তবে এই সভাতেই প্রিমিয়াম প্রদান না করার কারণে ফ্যাকাল্টেটিভ অংশের ৪৯ কোটি টাকার পুনর্বীমার বিপরীতে কোন রিকভারি অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত দেয়। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬৬১তম বোর্ড সভায় সারপ্লাস ট্রিট্রির অংশ রিকভারির অনুমোদন দিয়ে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম প্রদান না করার বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ দেখাতে যেভাবে পরিবর্তন করা হয় পুনর্বীমা প্রিমিয়াম কালেকশন হিসাব বিবরণী
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করেনি। এই কারণে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবসা উন্নয়ন ও গ্রাহক সেবা কমিটির ১৭৮তম সভায় দাবি রিকভারি না করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
পরে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ৬৬১তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে পুনর্বীমা হিসাব বিভাগ গত ১০ এপ্রিল একটি মতামত প্রদান করে। মতামতের সাথে সংযুক্তি আকারে পুনর্বীমা প্রিমিয়াম কালেকশনের হিসাব বিবরণীও দেয়া হয়।
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে পুনরায় পরীক্ষানিরীক্ষা সংক্রান্ত পুনর্বীমা হিসাব বিভাগের দেয়া মতামত ও পুনর্বীমা প্রিমিয়াম কালেকশন হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়।
পুনর্বীমা হিসাব বিভাগের মতামত অনুসারে ২০২০ সালে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ২০ লাখ টাকা পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করেছে। যা পরিশোধ করা হয়েছে মার্কেন্টইল ইন্স্যুরেন্সের ৭টি ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বাবদ।
এটা প্রমাণ করতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের সাধারণ বীমা করপোরেশনের পুনর্বীমা প্রিমিয়াম কালেকশনের ওই হিসাব বিবরণীর ৭ ও ৮ নং কলামের মাঝে নাম্বারবিহীন একটি কলাম তৈরি করা হয়। নাম্বারবিহীন ওই কলামে ৭টি ফ্যাক স্লিপের বিপরীতে মোট প্রিমিয়াম পরিশোধ দেখানো হয় ১৮ লাখ ৮১ হাজার ২২৫ টাকা। যার মধ্যে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের পলিসির বিপরীতে ইস্যু করা ফ্যাকাল্টেটিভ প্রিমিয়ামের ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকার প্রিমিয়াম রয়েছে (ফ্যাক স্লিপ নং ০৭/২০২০) ।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্যাকাল্টেটিভ প্রিমিয়াম ১৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা হলে এই টাকাই বীমা কোম্পানির পরিশোধ করবে। এটাই নিয়ম। সেই হিসেবে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ সন্দেহজনক।
এছাড়া সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে ৩১ ডিসেম্বর পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ সংক্রান্ত ১২ কলামের যে হিসাব বিবরণী দেয়া হয় তা একটি আইনগত দলিল। তা পরিবর্তন করে নাম্বারবিহীন একটি কলাম তৈরি করে হিসাব বিবরণী পরিবর্তন জালিয়াতির সামিল।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, হিসাব বিবরণীর নাম্বারবিহীন ওই কলামে ৭টি ফ্যাক স্লিপের মধ্যে ২টি স্লিপ ২০১৯ সালের। ২০২০ সালের হিসাব বিবরণীতে ২০১৯ সালের ফ্যাক স্লিপের হিসাব থাকার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা।
হিসাব বিবরণীটি পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায়, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল পলিসির বিপরীতে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার সেশন ২০২০ সালের ২য় কোয়ার্টার। সেই হিসেবে হিসাব বিবরণীর ২য় কোয়ার্টারে ৪ লাখ ৪ হাজার টাকার প্রিমিয়ামের বিবরণ থাকার কথা। কিন্তু হিসাব বিবরণীটির ২য় কোয়ার্টারে প্রিমিয়াম দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২২৫ টাকা।
তবে এসব বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুনর্বীমা বিশেষজ্ঞ জানান, সাধারণ বীমা করপোরেশনের অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পেমেন্ট ওয়ারেন্টি দেয়া থাকে। ওয়ারেন্টিতে উল্লেখিত নির্ধারিত দিনের মধ্যেই প্রিমিয়াম দিতে হয়। না হলে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা কভারেজ অটোমেটিক বাতিল হয়ে যায়। সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে প্রিমিয়াম পরিশোধ বা ফ্যাক স্লিপ বাতিলের কোন চিঠি না দিলেও বীমা কোম্পানির নিজ দায়িত্ব থেকেই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা উচিত।
তার মতে, বেসরাকরি বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছ থেকে সরকারি সম্পত্তির বীমার বিপরীতে যে প্রিমিয়াম পায় তার সাথে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বাবদ পাওনা টাকার সমন্বয় করা হয়। তারপরও বছর শেষে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর সারপ্লাস ট্রিটির বিপরীতে পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের টাকা বাকি রাখে। প্রতি বছর সাধারণ বীমা করপোরেশন সারপ্লাস ট্রিটি চুক্তি করার সময় বেসরকারি বীমা কোম্পানির কাছে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তখন বীমা কোম্পানিগুলো মোটা অংকের একটি টাকা পরিশোধ করে। কোম্পানিটির ২০ লাখ টাকা মূলত ট্রিট্রি চুক্তির সময় দেয়া থোক টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা ফ্যাকাল্টেটিভ প্রিমিয়ামের টাকা কিনা তা বিশেষভাবে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
দাবি পরিশোধে মনগড়া যতো কথা
গত ১০ এপ্রিল পুনর্বীমা হিসাব বিভাগ মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের পুনর্বীমা দাবির পুরো অংশ রিকভারির বিষয়ে মতামত দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটিতে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ফ্যাকাল্টেটিভ অংশের ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৭৯৩ টাকা রিকভারিসহ পুনর্বীমা দাবির পুরো টাকাই পরিশোধের সুপারিশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফ্যাকাল্টেটি অংশের পুনর্বীমা দাবির এ টাকা পরিশোধের (রিকভারির) অনুমোদন দেয় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ৬৬৪ তম বোর্ড সভা। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ মে।
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনটি দাখিল করেন পুনর্বীমা হিসাব বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুধাংশু কুমার ঘোষ। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন পুনর্বীমা (অগ্নি) বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শিপন আলী; ম্যানেজার মো. শামীম হোসেন; এসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার এএফএম ফয়সাল ইসলাম; পুনর্বীমা বিভাগের ডিজিএম মো. আমিনুল হক ভুইয়া এবং জিএম ওয়াসিফুল হক।
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার ফ্যাকাল্টেটিভ স্লিপ কনফার্ম করা হয় ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট (ফ্যাকাল্টেটিভ স্লিপ নং-০৭/২০২০) । কিন্তু প্রিমিয়াম প্রদান না করার কারণে ফ্যাকাল্টেটিভ স্লিপটি বাতিল করা হয় নাই। ফলে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা কভারেজটিও বাতিল হয় নাই। এ কারণে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের এই পুনর্বীমা দাবির রিকভারি অনুমোদন করা যায়।
বীমা খাতে সংশ্লিষ্টদের সাথে এ বিষয়ে আলাপকালে তারা বলেন, ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধের তারিখ উল্লেখ করা থাকে ফ্যাকাল্টেটিভ স্লিপে। প্রিমিয়াম পরিশোধের যে শর্ত দেয়া হয় তাকে বলা হয় প্রিমিয়াম পেমেন্ট ওয়ারেন্টি (পিপিডাব্লিও)। বীমা নীতিমালা অনুসারে ওয়ারেন্টি ভঙ্গ করলে পুনর্বীমার চুক্তি ভঙ্গ করা হয়। কোন কোম্পানি পুনর্বীমার এই চুক্তি ভঙ্গ করলে স্বাভাবিকভাবেই তা বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে নিয়ম অনুসারে নির্ধারিত সময়ে প্রিমিয়াম পরিশোধ না করলে পুনর্বীমা কোম্পানিতে প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে চিঠি দেয়া হয়। অথবা চিঠি দিয়ে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা কভারেজ বাতিল করতে হয়।
তবে কেউ কেউ বলেন, যেহেতু ফ্যাকাল্টেটিভ স্লিপ বাতিল করা হয়নি; তাই এর দায় সাধারণ বীমা করপোরেশনকেই নিতে হবে। তাদের মতে, ফ্যাক স্লিপ বাতিল না করা হলে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার কভারেজ বৈধতা পায়। সেক্ষেত্রে পুনর্বীমা বীমা দাবিটি নাকোচ করার সুযোগ নেই।
তবে মার্কেটাইল ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম প্রদানে বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেয়া ওই প্রতিবেদনে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সকে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করার কোন নির্ধারিত সময় দেয়া হয়েছিল কি না তা উল্লেখ না করে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো দাবি করা হয় পুনর্বীমা বিভাগ ও পুনর্বীমা হিসাব বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ফ্যাকাল্টেটিভ প্রিমিয়াম বকেয়া থেকেছে।
প্রিমিয়াম বকেয়া থাকার বিষয়ে ব্যাখা দিতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ৫ নভেম্বর ২০২০ সালে সাধারণ বীমা করপোরেশনকে ২০ লাখ টাকার প্রিমিয়াম পরিশোধ করে। তবে ২০ লাখ টাকা প্রিমিয়াম ফ্যাকাল্টেটিভ না সারপ্লাস ট্রিট্রির প্রিমিয়াম তা উল্লেখ ছিল না। কিন্ত এর ৩ দিন পর ৮ নভেম্বর মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স অপর একটি সংশোধনী পত্র দেয়। যাতে ২০ লাখ টাকা ৭টি ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার বিপরীতে প্রিমিয়াম হিসেবে পরিশোধ করেছে বলে দাবি করে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু পুনর্বীমা বিভাগ অসৎ উদ্দেশ্যে পুনর্বীমা হিসাব বিভাগকে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের দেয়া ২০ লাখ টাকা সারপ্লাস ট্রিট্রির প্রিমিয়াম হিসেবে জমার নির্দেশ দেয়। ফলে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বকেয়া থেকে যায়।
অথচ এই প্রতিবেদনটিতেই আবার দাবি করা হয়েছে পুনর্বীমা বিভাগ সারপ্লাস ট্রিট্রির প্রিমিয়াম হিসেবে ২০ লাখ টাকা জমার কথা উল্লেখ করলেও পুনর্বীমা হিসাব বিভাগ তা ফ্যাকাল্টেটিভ প্রিমিয়াম হিসেবেই জমা করেছে।
এমনটা সম্ভব কিনা তা নিয়ে আলাপ করা হয় নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পুনর্বীমা বিভাগে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের সাথে। তারা বলেন, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স সংশোধনী দিয়ে ৭টি ফ্যাকাল্টেটিভ স্লিপের বিপরীতে প্রিমিয়াম দিয়ে থাকলে গ্রাহকসেবা কমিটি তা বিবেচনা না করার কোন সুযোগ নেই।
তাই গ্রাহকসেবা কমিটি সংশোধীত পত্রটি কেন বিবেচনা করল না তা তদন্ত করা উচিত। সেই সাথে এ ধরণের সংশোধনী দেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতারণা বা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তারা।
এছাড়াও বৈদেশিক পুনর্বীমা কোম্পানি ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার পুরো টাকাই রিকভারি করবে বলে মতামত দিয়েছে উল্লেখ করে, বিদেশী পুনর্বীমা কোম্পানির কাছ থেকে রিকভারি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনের বৈদেশিক পুনর্বীমার এক্সেল ট্রিটি চুক্তির আওতায় মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা অংশের ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৭৯৩ টাকার পুরোটাই রিকভারি আনা যাবে।
এ বিষয়ে পুনর্বীমা বিশেষজ্ঞরা বলেন, নানা ধরণের পুনর্বীমা চুক্তি হয়ে থাকে। তবে সাধারণ বীমা করপোরেশন বৈদেশিক পুনর্বীমার কাছ থেকে রিকভারি আনলে তা সাধারণ বীমা করপারেশনের জন্য লাভজনক হবে মনে করার কোন কারণ নেই।
তাদের মতে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা ভূয়া পুনর্বীমা রিকভারি আনা হলে তার দায় সাধারণ বীমা করপোরেশনকেই নিতে হবে। কেননা, এতে করে সাধারণ বীমা করপোরেশনের রিকভারির হার বেড়ে যাবে। যার ফলে বৈদেশিক পুনর্বীমাকারি প্রতিষ্ঠান পরবর্তী চুক্তিগুলোতে প্রিমিয়াম হার যেমন বাড়িয়ে দিবে, তেমনি কমিশনও কমিয়ে দিবে। সেই সাথে পুনর্বীমা চুক্তির শর্ত আরো কঠিন করবে। যার খেসারত দিতে হবে সাধারণ বীমা করপোরেশনের পাশাপাশি গোটা বীমা খাতকেই।
নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো বলছে, পুনর্বীমা করা বা পুনর্বীমা দাবি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা করপোরেশনের সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী পুনর্বীমার যেসব নিয়ম-নীতির চর্চা রয়েছে তাও প্রতিষ্ঠানটি মানে না। ফলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা একেক কোম্পানির ক্ষেত্রে একেক রকম নিয়মে সিদ্ধান্ত প্রদান করে। ফলে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছে পুনর্বীমাকারি রাষ্ট্রায়ত্ব এ প্রতিষ্ঠানটি। ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বিদেশী পুনর্বীমা কোম্পানির কাছেও। অপরদিকে কোন কোন কোম্পানি এতে যেমন লাভবান হয়, তেমনি অনেক কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্তও হয়।
তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বললেন সাধারণ বীমার কর্মকর্তারা
এসব বিষয়ে মতামত নেয়ার জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুনর্বীমা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে পুনর্বীমা বিভাগ ও পুনর্বীমা হিসাব বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন মতামত দিতে রাজি হননি। তবে এসব বিষয়ে তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার পরামর্শ দেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকতা ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, আইন মেনেই তিনি পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করেছেন। নিয়ম অনুসারেই তিনি পুনর্বীমা দাবি উত্থাপন করেন। এক্ষেত্রে আইন বা নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।