মামলা করেই বীমা দাবি পেলেন গোল্ডেন লাইফের ৫১ গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাভাবিক নিয়মে না পেয়ে মামলা করেই বীমা দাবি আদায় করলেন বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি গোল্ডেন লাইফের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ৫১ বীমা গ্রাহক। সংশ্লিষ্ট সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মেয়াদ শেষে ৯০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের বিধান থাকলেও তা না করে ৫১ জন বীমা গ্রাহকের টাকা পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা শুরু করে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এতে গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা আদায়ে গোল্ডেন লাইফের ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে। এ মামলা পরিচালনায় আম মোক্তার নিযুক্ত হন গোল্ডেন লাইফেরই সাবেক কর্মকর্তা ভেড়ামারা উপজেলার ব্রাঞ্চ ইনচার্জ আবদুল গনি।

পরবর্তীতে আদালত তদন্ত শেষে প্রতারণার অভিযোগ পেলে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সর মুখ্য নির্বাহীসহ উর্ধ্বতন ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার এড়াতে আপোষের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয় কোম্পানিটি। এতে ৪৭ জন গ্রাহক তাদের বীমা দাবির সমুদয় অর্থ বুঝে পায়। বাকি ৫ জনের পাওনা টাকার চেক দেয়া হয়েছে।

মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, ৫১ জন গ্রাহকের কাছ থেকে মামলা পরিচালনার ক্ষমতা নিয়ে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে দণ্ডবিধি ৪০৬ও ৪১৮ ধারায় ২টি মামলা দায়ের করেন পাবনা জোন (ঈশ্বরদী, ভেড়ামারা, দৌলতপুর) ইনচার্জ আব্দুল গনি। মামলা নং- ৬৩/১৫ এবং ৬৪/১৫।

মামলার আরজিতে উল্লেখ্য করা হয়, গ্রাহকরা গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বন্ধু বীমা প্রকল্পের ভেড়ামারা অফিসে পলিসি করেন। পলিসির বিপরীতে মাসিক ভিত্তিতে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম জমা করেন। পরবর্তীতে বীমার মেয়াদ শেষে গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা শুরু করে কোম্পানিটি।

জোন ইনচার্জ আব্দুল গনি নিরুপায় হয়ে কোম্পানির উর্দ্ধতন ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এরপরও কর্মকর্তারা ভেড়ামারা অফিসে উপস্থিত হয়ে বীমা গ্রহীতাদের টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর বীমা গ্রাহকদের স্বার্থে আব্দুল গণি বাদী হয়ে উপরোক্ত দুটি মামলা দায়ের করেন কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে। আদালত সমন জারি করলেও আসামীরা সময়মতো হাজির না হওয়ায় কোম্পানির মূখ্য নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) সুসান্ত প্রামাণিক, বন্ধু বীমা প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ আজাদী, ডিএমডি আমজাদ হোসেন এবং অর্থ ও হিসাব পরিচালক ফিরোজ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় প্রেরণ করা হয়।

কোম্পানির সিইও গ্রেফতার এড়াতে দ্রুত আপোষের প্রস্তাব দেন আব্দুল গনিকে। পরে কোম্পানির এমডি অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক প্রদান সাপেক্ষে আপোষের প্রস্তাব করলে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট আপোষ নামায় স্বাক্ষর করেন আব্দুল গনি। আপোষনামা আদালতে উপস্থাপিত হলে কোম্পানির এমডি গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন এবং গ্রাহকগণও তাদের সমুদয় অর্থ বুঝে পায়।

এ বিষয়ে আব্দুল গণি ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আমি ভেড়ামারার ব্রাঞ্চ ইনচার্জ ছিলাম। মেয়াদ শেষে কোম্পানির কাছে টাকা পরিশোধের কথা বললে তারা নানা টালবাহনা শুরু করে। কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ টাকা না দিয়ে ২ বছর ঘুরায়। পরে আমি আদালতের স্মরণাপন্ন হই। এসব গ্রাহককে আমি পলিসি করিয়েছিলাম। তাই দাবির টাকা আদায় করে দেয়ার দায়িত্বটিও আমারই পরে। তাই গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

প্রকাশের তারিখ- ৩ মার্চ, ২০১৭