বীমা খাত ও ইমেজ সংকট; কারণ ও করণীয়: শেষ পর্ব

ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আরটিভি'র সাপ্তাহিক আয়োজন বিজনেস টক-এ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয় বীমা খাত ও ইমেজ সংকট; কারণ ও করণীয় শীর্ষক টক শো। সৈয়দ আশিক রহমানের উপস্থাপনায় এতে আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন এমপি, সিপিডি'র রিসার্চ ফেলো ডা. তৌফিকুল ইসলাম খান, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম এবং ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এম এ নাসের।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি'র বীমা খাত ও ইমেজ সংকট; কারণ ও করণীয় শীর্ষক টক শো'র ভিডিওটি ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের জন্য অনুলিখন করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে https://www.youtube.com/watch?v=Tqb5o7RqO1A&feature=youtu.be এই লিঙ্কে ঢুকে টক শো'র মূল ভিডিওটি দেখতে পারেন। টক শো'র দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশ করা হলো।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব জামাল নাসের, অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের বীমা করানো হয়। কিন্তু স্কিমের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন বীমা দাবি পূরণে গড়িমসি করা হয়। এই অভিযোগগুলো আসলে কতটুকু সত্য এবং এ ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য রয়েছে?

জামাল এম এ নাসের: আমি একমত-আস্থাহীনতা আছে। তবে এটার পাসেন্টেজ আমাকে দেখতে হবে। কোম্পানিভেদে আস্থাহীনতা কোথাও কম কোথাও বেশি। অ্যাজ এ হোল্ড, আমি মনে করব, হ্যাঁ- এটা আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা। বীমায় যে আস্থার বিষয়টা এখন কথায় আসছে, এটার সংকট অবশ্যই আছে এবং এই সংকট সমাধানের যে পথগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে সে পথগুলোর কিছু কিছু কার্যক্রম শুরুও হয়েছে।

আপনারা ইতোমধ্যেই দেখছেন যে, আমাদের আইডিআরএ'র নতুন যে চেয়ারম্যান সাহেব আসলেন। ওনার যে প্রশাসন, ইতোমধ্যে বীমা দাবির বিষয়ে আমাদেরকে অ্যাওয়ারনেস সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা এন্ড রেজাল্ট (শেষ ফলাফল) নয়। এটার কারণে যে আস্থা চলে আসছে তা নয়। কারণ, যারা আমরা বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে কাজ করি- বাংলাদেশ বেসিক্যালি অনেক বড় একটা জায়গা- এখানে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছাতে গেলে, ওই সঠিক তথ্য তো পৌঁছানোর মেকানিজম ডিজিটালাইজশন। আজকে ডিজিটালাইজশনের যুগে আমি মনে করবো বাংলাদেশের অনেকগুলো সেক্টর কিন্তু ডিজিটালাইজেশনে অলরেডি ডাইভারটেড।

এসডিজি ২০২১ এর যেগুলো প্যারামিটার মেজার আছে, সেখানে কিন্তু ইন্স্যুরেন্স একটা বড় পার্ট। যেখানে মানুষের নিরাপত্তা এবং এই মনিটরিংটাও একসময় হবে যে, আমরা বীমার মাধ্যমে মানুষকে কতটুকু সঠিক নিরাপত্তা দিতে পারলাম। ট্রাস্ট ক্রিয়েট করতে পারলাম। শুধু আইডিআরএ রেসপনসিবল অথবা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট বা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রেসপনসিবল তা নয়। আজকে এখানে আমাদের জনপ্রতিনিধি মাননীয় সদস্য আছেন- উনিও ওনার এলাকায় যখন যান এই প্রব্লেমগুলো ওনাকে টাচ করে যে,  আমার এই বীমার টাকা পাই নাই, এটা চিটিংবাজী হইছে, এটার প্রিমিয়াম নেয় নাই। এই যে, নেয় নাই- বেসিক সিস্টেমটার ওপর আমার মনে হয় প্রথমে আমাদের একটা...

সৈয়দ আশিক রহমান: বীমা কোম্পানিগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছে, এটা কতটুকু যৌক্তিক- যেখানে দক্ষ এজেন্ট আপনা তৈরি করতে পারছেন না। এজেন্ট নিলেই তো হবে না- তাদের দক্ষতা থাকতে হবে, তাদের জ্ঞান থাকতে হবে।

অধিকাংশ কোম্পানির কিন্তু স্থানীয় কার্যালয় নেই। এটার একটা বড় অভিযোগ পাওয়া যায় যে, কাউকে দিয়ে কোনভাবে ব্যবসাগুলো করে গেছে কিন্তু পরবর্তীতে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে প্রতিটা ব্যাংকের জন্য শহরে এবং গ্রামে পর্যন্ত শাখা খোলার একটা বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে।

জামাল এম এ নাসের: কার্যালয়ের বিষয়টা মনে হয় তত সঠিক নয়। কারণ, কার্যালয় ছাড়া কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অপারেশন চালানো সম্ভব নয়। কার্যালয় আছে কিন্তু দুর্বল অথবা সবল।

সৈয়দ আশিক রহমান: কিন্ত দুর্বলই বা থাকবে কেন? দু'দিন পর গুটিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

জামাল এম এ নাসের: আপনি যে মূল পয়েন্টাতে ধরলেন- এজেন্টের দক্ষতা। আপনি ভারতের এজেন্টদের কথাটা ধরেন। ভারতের এজেন্টদের ১০০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং ওই প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ইনস্টিটিউট আছে। ওই ইনস্টিটিউটের নির্দিষ্ট সিলেবাস আছে। ওই সিলেবাসের ভিত্তিতে ১০০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেয়ার পরে তাদের অনলাইনে আইআরডিএ'তে পরীক্ষা দিতে হয়। আইআরডিএ'তে পরীক্ষা দেয়ার পর, আইআরডিএ ওই এজেন্টকে সার্টিফিকেট দেয়। যেটা বাংলাদেশে এই মুহুর্তে টোটালি এবসেন্ট।

বিগত দু'বছর আগে পার্লামেন্ট থেকে ওনারা একটা বিল পাস করে দিয়েছেন যে, বীমা ওপর পড়ালেখার জন্য একটা ইউনিক সিলেবাস দরকার। ওই ইউনিক সিলেবাসের জন্য ৯জন মেম্বারকে দেয়া হয়েছিল মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স, ইউজিসি, আইডিআরএ এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো। এই ৯জন মেম্বারের লাইফ সেকশনে আমি একজন মেম্বার হিসেবে ছিলাম। আমি মনে করি, একটা ইউনিক সিলেবাস অলরেডি ইউজিসিতে অবস্থান করছে। আমরা পাস করে দিয়েছি। পার্লামেন্ট এপ্রুভড করে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিনিসটা এপ্রুভড করে দিয়েছেন।

এই সিলেবাসটাকে এখন কার্যকর করা জন্য আপনারা পদক্ষেপ নেন। কিন্তু কার্যকর করবেন কাকে দিয়ে? একটু আগে কথা হয়েছে যে, ইন্স্যুরেন্সের বেসিক রিসোর্সের যেটা অভাব- ইন্স্যুরেন্স যিনি শিখাবেন উনি ইন্স্যুরেন্স হতে প্রশিক্ষিত লোক হতে হবে। আপনারা জানেন যে, ইন্স্যুরেন্সে একচ্যুয়ারির অবস্থান সুদৃঢ়ভাবে প্রয়োজন আছে, ইন্স্যুরেন্সে প্রয়োজন আছে একজন সঠিক কম্পিউটার এনালিস্ট অথবা কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করার লোক এবং একাউন্টস- এই ৩টি সেক্টর যদি ইন্স্যুরেন্সে সঠিকভাবে থাকে... মার্কেটিংটাতো একটা প্রসেস, ডিমান্ডের ওপর মার্কেট জেনারেট করে।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান, বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু গুণগত মান বাড়েনি। দক্ষ জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এই খাতে। এই সংকট মোকাবেলায় আসলে কি করা যেতে পারে?

তৌফিকুল ইসলাম খান: এখানে কি করা যেতে পারে- একটা হচ্ছে প্রশিক্ষণের কথা আছে, ... আছে। বড় সমস্যা হলো যে, আমি একটু কনফিউজে থাকি আমি যেহেতু অতো ডিটেইলস জানি না- ওনারা যখন এজেন্ট বলেন তখন দু'ধরণের এজেন্ট আছে। একটা হলো যারা এজেন্সি আছে- র‌্যানডম ফ্রানচাইজি খুলে নেন, এটা কিন্তু আমেরিকায় ...ফ্রানচাইজ এজিডেন্সি আছে...বিভিন্ন জন নিতে পারেন এজেন্সি।  সেই এজেন্সির ভিতর একজন থাকেন তিনি হয়তো মোর নলেজেবল এবং ডিটেইল নলেজ আছে-  যেটার সাথে কোম্পানির সরাসরি যোগাযোগ আছে। ওনার কিন্তু আবার কিছু সাব-এজেন্ট থাকে। সমস্যাটা হয় ওখানে কিন্তু। এরা একচ্যুয়ালি ফিল্ডে কিন্তু বেশিরভাগই এভাবে অপারেট করে।

এই জায়গাটায়, বড় কিছু কোম্পানি বাদ দিয়ে আমি বলছি, অধিকংশ যায়গাতে আমি দেখেছি প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি আপনি ছড়াতে চান আসলে এই ব্যাপারটা...। এতগুলো কোম্পানি যে আছে তাদের প্রত্যেকের আবার মোড অফ অপারেটিভ একই রকম না, একেকজন একেকটা ক্লাসটারভাবে ব্যবসা করছে। যেটা মাননীয় এমপি সাহেবও বললেন। তাদের কিছু নিজস্ব এরিয়া আছে, ওই এরিয়াটার ভিতরে তারা কাজ করে।

ফলে এটা ঠিক- বেশি কোম্পানি থাকার ফলে প্রতিযোগিতা আছে। ভালো ইন্সট্রুমেন্ট আসছে। তার মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ছে। তাও না, বড় সমস্যা আমি যেটা দেখি- এটার মধ্যে একটা রেগুলেটরি বডির চরম একটা ঘাটতি আছে। হয় দক্ষতার অভাব আছে, না হয় একটা অনিহা আছে। কিছুটা সেখানে সুশাসনের সমস্যার কথাও বড়ভাবে এসেছিল। এখন তো একটা রেজিম চেঞ্জ হলো। হোপফুললি এটা কিছু ভালো হবে।    

দ্বিতীয়ত হলো- সিস্টেমেটিকভাবে অন্যান্য খাতগুলো, আর্থিক খাতগুলো যেভাবে বেড়ে উঠেছে। এখানে তথ্যেরও ঘাটতি আছে। আমি যেটা বলছিলাম যে, কেন্দ্রিয় ব্যাংক যেভাবে ব্যাংকগুলোকে দেখভাল করে। ...আমরা যেভাবে স্টক সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ যেভাবে একটা রেগুলেটরি বডি হিসেবে- হয়তো কিছু ব্যর্থতা আছে কিন্তু একটা বডি আছে, আমরা ব্লেইম করতে পারি। তাদেরকে নাড়া দিলে তারা নড়ে। এই খাতটা কেন জানি খুবই স্টেগনেন্টভাবে আছে। খুব একটা রেগুলেটরি বডির বড় গ্রিপও নাই কোম্পানিগুলোর ওপরে। এইটা একটা বড় সমস্যা। কিন্তু ওভারল ঝুঁকি কমানোর জন্য ইন্স্যুরেন্সের কিছু জায়গা আসবে না।

সৈয়দ আশিক রহমান: মানুষের কিন্তু মাথাপিছু আয় বাড়ছে। মানুষ এখন তার নিরাপত্তা চায়। আগে তো একটা সময় ইন্স্যুরেন্সের কথা চিন্তাও করত না।

তৌফিকুল ইসলাম খান: দেখেন দু'টো জায়গা থেকে আসে। একটা হলো সম্পদ আরেরকটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক ইকনোমি। এখানে কিছু আছে যে, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে কিছুটা বীমা হচ্ছে। এটা ওনারা এনজয় করছে যে, আপনার কারখানার একটা সার্টেইন সাইজ যদি হয় আপনাকে ই... (বীমা) করতে হবে। আপনার লেবার ল'এর অধীনে সেখানে কিছু হেলথ ইন্স্যুরেন্স, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স আস্তে আস্তে পপুলার হচ্ছে। সেই জায়গাটায় ওনারা ব্যবসা করছেন। আরেকটা যায়গা থাকবে হলো.. কিছু নিয়ম করে দেয়া আছে যে, আপনার ইন্স্যুরেন্স করতে হবে।

গভার্নমেন্টের যে দু'টো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে তার মধ্যে একটা কিন্তু সাধারণ বীমা। তার একটা বড় ব্যবসাই হলো যে, ইন্স্যুরেন্সকে ইন্স্যুরেন্স করা। এটাই তাদের মেজর এক্টিভিটি। সেগুলো হলো রেগুলেশন দিয়ে আপনি কিছুটা তুলে আনছেন। কিন্তু যেটা আমি বলছি যে, সার্বিকভাবে আপনি দেখেন আমাদের যে সম্পদ আছে, এগুলোকেও কিন্তু আমরা প্রপার্লি (যথাযথভাবে) সব সময় ইন্স্যুরেন্স করি না। ইন্স্যুরেন্স রেগুলেশনের ভিতরেও নাই। যেমন গাড়ির ক্ষেত্রে আমাদের যে থার্ডি পার্টি একটা ইন্স্যুরেন্স...। আসলে ইন্স্যুরেন্স প্রচলিত অর্থে অন্য কোন দেশে পাবেন না, আমার জানা মতে নাই। ওনারা ভালো বলতে পারবেন।  এই ধরণের ইন্স্যুরেন্স করে কিন্তু আপনি শেষ বিচারে, আপনি যখন ইন্স্যুরেন্স করেন এখান থেকে এক্সিডেন্ট হলে বেনিফিট পান না মালিকরা। এই স্ট্রাকচারাল একটা/ এক ধরণের চেঞ্জ আনতে হবে।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব এম জে আজিম, দেশের অধিকাংশ মানুষেরই বীমা সম্পর্কে বা এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। ফলে তারা বীমার আওতার বাইরে কিংবা বীমা সুবিধার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র ৪ জনের লাইফ ইন্স্যুরেন্স রয়েছে। অনেকে এটাকে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে মনে করে। এটা কি আপনাদের প্রচারণার যথেষ্ট ঘাটতি কিংবা আপনাদের বোঝানের ভুল কিংবা এই যে বিশাল বড় মার্কেটটা, আমি বলবো যে, এটি একটি উড্ডয়নগামী অর্থনীতির দেশ এবং এ দেশের মানুষের যে আর্থিক সচ্ছলতা, সক্ষমতা এসেছে সেটা আপনারা ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন?

এম জে আজিম: নিঃসন্দেহে আমি বলবো যে, এখন পর্যন্ত আমাদের যে অবস্থা তাতে আমরা এই উড্ডয়নশীল ইকনোমিতে আমরা ব্যর্থই। এখন কেন হচ্ছে না। আপনিই কিন্তু সুন্দরভাবে এখনো বললেন এ কথাগুলো। কারণ হলো- প্রথমত প্রচার-প্রচারণা নাই। আমরা কোম্পানিগুলো এখনো সেভাবে প্রচার করছি না। এখন যদি আপনি আমাকে প্রশ্ন করেন যে আপনার কোম্পানি কেন করে না? দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের এক্সপেন্সের একটা লিমিট আছে। যেহেতু আমরা মানুষের টাকার কাস্টোডিয়ান হিসেবে কাজ করি। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের প্রকিউরমেন্ট কস্ট এবং ম্যানেজমেন্ট কস্টটা সেই অ্যালাওএবল এক্সপেন্স থেকে অনেক বেশি ছিল আগে। ক্রমান্নয়ে আমরা কমিয়ে এনেছি, এখন লিমিটের ভিতর আসছি। এখন আমরা চেষ্টা করছি কমিয়ে ফারদার- এই জায়গাটায় আমাদের একটু কাজ করতে হবে। সো, আমাদের সব কোম্পানিকেই করতে হবে।

 

এট দ্যা সেম টাইম; আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের যে উদাহরণটা দিলাম, এখানে যে রেগুলেটরি বডি- আইআরডিএআই'রও কিন্তু প্রচুর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আপনারা দেখবেন টিভিতে। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের এখন থেকে কিন্তু সেটা হচ্ছে না। তাদের তরফ থেকেও সচেতনতা বা অ্যাওয়ারনেস ক্রিয়েট করার ক্ষেত্রে যে ধরণের- এই যে প্রতারণার কথাগুলো বললেন, এগুলো কমবেশি সব কোম্পানিতেই কিন্তু আছে। সারাদেশে আমার হাজার হাজার লোক সেটআপ। একটা লোক, একটা লোককে ইন্স্যুরেন্স করাতে গিয়ে কি বলতেছে সেটা আমার পক্ষে কিন্তু এখান থেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব না; আমি তো পরে বুঝতে পারতেছি। তো, সচেতন করা, ইন্স্যুরেন্স নিডটা ক্রিয়েট করার ব্যাপারে- এ ধরণের প্রচার-প্রচারণা আমাদের অবশ্যই করতে হবে।

সৈয়দ আশিক রহমান: প্রচার ছাড়া কিভাবে আপনাদের ব্যবসার প্রসার ঘটবে? কারণ, আপনি যদি আগ্রহী-ই করতে না পারেন, আপনি যদি জানাতেই না পারেন আপনার ইমপরটেন্সটা; গ্রাহকদের যদি এটাই বুঝাতে না পারেন তবে কেন আসবে?

এম জে আজিম:  আসবে না। আর এই জন্যই এখানে যে ভূমিকাটা বেশি কাজ করবে আরো। এটা হলো যে, আমাদের এখন পর্যন্ত আমরা বেশিরভাগ নির্ভরশীল যে সিস্টেমটি আমরা এটাকে বলি ক্যাপটিভ এজেন্সি। অর্থাৎ আমরা একটা এজেন্সি নিচ্ছি ওটা এই কোম্পানির সাথেই থাকবে। অন্য কারো সাথে কাজ করতে পারবে না। এই ক্যাপটিভ এজেন্সি থেকে গুরুত্বটা কমিয়ে অলটারনেটিভ ডিসট্রিবিউশন আমাদের চিন্তা করতে হবে। এখন উন্নত দেশে যদি দেখেন ব্যাংকাস্যুরেন্স বলে একটা শব্দ আছে। আমাদের নতুন আইনেও কিন্তু এটা আছে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে, এটা আরেকটু বিধি-প্রবিধান দ্বারা সুন্দরভাবে হোক। এটাকে কাজে লাগাই।

যে গ্রুপ অব পিপল বিলো প্রপার্টিতে, তাদেরও কিন্তু বীমার আওতায় আনা সম্ভব। যদি সেখানে আমরা পার্টনারশিপ মডেলে কাজ করি। আমাদের যে এমএফআই (মাইক্রো ফিন্যান্স ইনস্টিটিউ)-গুলো আছে, এনজিও (নন-গভার্মেন্ট ইনস্টিটিউট)-গুলো আছে- সেখানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাদেরকে ইনভলব করে আমরা যদি করি, অনেক কম ডিস্ট্রিবিউশ কস্টে কিন্তু আমরা তাদের বীমার আওতায় আনতে পারবো। এট দ্যা সেম টাইম- মোরাল হেজারড থেকেও কিন্তু আমরা দূরে থাকতে পারি।  

সৈয়দ আশিক রহমান: আমাদের পার্লামেন্ট মেম্বর জনাব ফরহাদ হোসেন- উনিও কিন্তু বলছিলেন যে, পার্শ্ববর্তী ভারতে যে কয়টি বীমা কোম্পানি থাকুক কিন্তু তাদের এতো সুন্দর সুন্দর বিজ্ঞাপন রয়েছে যেগুলো মানুষকে আকৃষ্ট করে। একজন মানুষ ফিল করে যে, ওটা আমাদের বিপদে আশ্রয়স্থল। এটা আমরা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। সে জায়গা থেকে ... আপনারা উপলব্ধি করেন?

এম জে আজিম: এ জায়গাটায় আমাদের আসতে হবে। অবশ্যই আমরা এটা উপলব্ধি করি।

সৈয়দ আশিক রহমান: ধন্যবাদ, আমরা আলোচনার একেবারে শেষ পর্যায়ে। জনাব ফরহাদ হোসেন এমপি, বিশ্লেষকদের অনেকেই বলবার চেষ্টা করেছেন- বীমাখাতে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান এবং ইমেজ সংকট রয়েছে। অর্থনীতির বড় খাত হিসেবে বীমাখাতের বিকাশে সরকারের কিংবা আপনাদের ভবিষ্যতে কি ধরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ফরহাদ হোসেন এমপি: আসলে আমাদের যে প্রব্লেম, যেটা আপনি বললেন...আমি একটি এক্সাম্পল দেই। বীমা কিন্তু এরকম না। বীমা জিনিসটা যদি আপনার ক্লিয়ার থাকে, কাস্টম বা ক্লায়েন্ট এবং বীমা কোম্পানি- দু'জনের মধ্যে যদি স্বচ্ছ কন্ট্রাক্ট থাকে তাহলে কিন্তু কোন সমস্যা হয় না। সারা বিশ্বে কিন্তু বীমা কোম্পানিগুলো এভাবে চলছে। আমাদের কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। উনি কিন্তু তার জীবনের সম্ভবত প্রথম জব, একটা বীমা কোম্পানির সঙ্গে উনি অ্যাটাচমেন্ট ছিলেন।

বাংলাদেশে যেমন মনে করেন, আমার গাড়িটা ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স ছিল প্রায় ৬৮ হাজার টাকার মতো। আমার গাড়িটা ছোটখাটো ক্ষতিগ্রস্ত হলো একটা এক্সিডেন্টে। আমাকে অনেকেই বললো যে, আমাকে বেশি চাইতে হবে; বীমা কোম্পানি একটা মাঝামাঝি দেবে। এই যে একটা বিষয়, সেখানে দেখা গেল যে, আমার যারা ই.. আছে। তারা একটা চাইল। দেখা গেল যে তারা চাইল ৪০ হাজার টাকার মতো। খরচ হলো ৩০ হাজার টাকা। ওনারা দিলেন ২০ হাজার টাকা। এরকম বিষয়গুলো কিন্তু আমি একজন সংসদ সদস্য তারপরও আমার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, এটা বিদ্যমান। তাহলে সাধারণ মানুষের জন্যও কিন্তু বিষয়গুলো এরকম হয়ে যায়। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

বীমা একটা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটা জায়গা। এখানে অনেক কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং এ বিজনেসটা একটা অত্যন্ত ভালো বিজনেস। আমাদের দেশের ইকনোমিকে যদি আমরা সেভাবে এগিয়ে নিতে চাই। তাহলে অপার সম্ভবনা আছে। বিশাল একটা বড় খাত হিসেবে তৈরি হতে পারে এটা। আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, আসলে এক্ষেত্রে আমাদের বীমা কোম্পানিগুলোকে আরো সিনসিয়ার হতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তাদেরকে সিনসিয়ারিটি দেখাতে হবে যে, আপনারা ক্লায়েন্টদের কাছাকাছি পৌঁছাতে গেলে যে ইমেজ সংকট, সেটা পুরোপুরি দূর করতে হবে এবং বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন পলিসি কিন্তু আমাদের আনতে হবে।

আমরা যে ফসলের ওপর বীমার কথা বলি, এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এটা বিশাল একটা খাত হতে পারে। দেখেন আমাদের বড় স্কেলে কোথাও- জুটের একটা ব্যাপার আছে, আমাদের ফার্মিসিং বেল্টে ধানের বিষয় আছে। বড় বড় একটা...। তারপর আমাদের বড় বড় যে ফিসারিজ ফার্মগুলো আছে- সেখানে এগুলো (বীমা) করলে কিন্তু আমাদের কৃষি...।

সৈয়দ আশিক রহমান: আসলে অনেক খাত আছে। এখানে আপনার স্কুল হতে পারে, বিদ্যালয় হতে পারে, এডুকেশন বীমা। অনেক কিছু খাত আছে... কিন্তু সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সামনে আনা প্রয়োজন এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। আমাদের আলোচনা শেষ করতে হচ্ছে- ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য।