বীমা দাবি পরিশোধে এসবিসি’র বিশেষ শর্ত প্রসঙ্গে
এ কে এম মনিরুল হক: সম্প্রতি সাধারণ বীমা করপোরেশন হতে সকল নন-লাইফ কোম্পানির নিকট "Confirmation of settlement of claims money in full from Sadharan Bima Corporation (SBC) insured upon receipt of R/I claims from SBC" বিষয়ক একটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত বিষয়ে অভিমত নিম্নরূপ:
(১) বীমা ও পুনর্বীমা সম্পূর্ণ পৃথক দুইটি চুক্তি। বীমা চুক্তি সম্পাদিত হয় বীমাকারী ও বীমা গ্রহীতার মধ্যে। অন্যদিকে বীমা কোম্পানি নিজস্ব ঝুঁকি হ্রাসকরণের জন্য পুনর্বীমাকারীর সাথে পুনর্বীমা চুক্তি করে থাকে। সেই মোতাবেক বীমা গ্রহীতার সহিত পুনর্বীমাকারীর সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই বলে বিবেচিত হয়! তাই সম্প্রতি পুনর্বীমা দাবী নিষ্পত্তিতে সাধারণ বীমা করপোরেশন কর্তৃক "Special Condition" সংযুক্তিকরণ বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নন-লাইফ বীমাবিদরা ব্যাপক সন্দেহ পোষণ করেছেন। তাছাড়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৈদেশিক কোন পুনর্বীমাকারী এ রকম শর্ত আরোপ করে নাই/করে না।
(২) বীমা ও পুনর্বীমা চুক্তির মূল ভিত্তি হলো "Principle of Outmost good faith"। কিন্তু সাধারণ বীমা করপোরেশন কর্তৃক প্রেরিত উক্ত পত্রটি বীমার এই মূলনীতির পরিপন্থী। বীমা গ্রহীতা যদি তার দাবীকৃত ক্ষতিপূরণ পেতে ব্যর্থ হয় তাহলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বরাবর অভিযোগ করতে পারে এবং বীমা আইন বা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আরবিট্রেশনসহ যে কোনো আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু যথাযথ বীমা দাবী (claim) পরিশোধ সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশন কর্তৃক সমষ্টিগতভাবে সকল বীমা কোম্পানিকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ নীতিবিরুদ্ধ। বাংলাদেশের বীমা আইন দ্বারা অধিষ্ঠিত শতকরা পঞ্চাশভাগ বাধ্যতামূলক পুনর্বীমাকারী হিসেবে সাধারণ বীমা করপোরেশন নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অংশীদার, যাদের কাছ থেকে সাধারণ বীমা করপোরেশন বছরে মোট আয়ের শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি প্রিমিয়াম পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বীমা ব্যবসায়ের মূল ও বড় অংশীদারদের সাথে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক ক্ষুন্ন হয় এমন কোন পদক্ষেপ কাম্য নয়, যা বর্তমান সরকারের বীমা নীতিমালার পরিপন্থী হয়ে পুনর্বীমা ব্যবসায়ের আভ্যন্তরীণ ধারণ ক্ষমতাকে খর্ব করে।
(৩) বাংলাদেশের বিদ্যমান বীমা আইন অনুযায়ী নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণ বীমা করপোরেশনে বাধ্যতামূলকভাবে ৫০ শতাংশ পুনর্বীমা করে থাকে। অবশিষ্টাংশ সাধারণত বীমা করপোরেশন কিংবা অন্য এক বা একাধিক বৈদেশিক পুনর্বীমাকারীর সাথে চুক্তি করে থাকে। দেশীয় এবং বৈদেশিক পুনর্বীমাকারী কর্তৃক এই ধরণের "Special Condition" সংযুক্তকরণের কোন নজির নেই।
দেশের একমাত্র পেশাদার পুনর্বীমাকারী হিসেবে সাধারণ বীমা করপোরেশনের পুনর্বীমা চুক্তির শর্তাবলী স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক পুনর্বীমাকারীদের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ হওয়া আবশ্যক। তাই একতরফাভাবে কোন পুনর্বীমাকারী কর্তৃক এই ধরণের "Special Condition" সহ রীতিবহির্ভূত যেকোন শর্ত আরোপ করা হলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহের একমাত্র এপেক্সবডি হিসেবে কম্পালসারি পুনর্বীমা সেশন কমানো বা তুলে দেয়ার জন্য সরকারের নিকট প্রস্তাব বা আবেদন করতে পারে, যা কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট কারুরই কাম্য বা প্রত্যাশিত নয়!
এমতাবস্থায়, বীমা সেক্টরের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ বীমা করপোরেশন কর্তৃক আরোপিত কথিত "Special Condition" সংযোজন করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। আর সেই সাথে সাধারণ বীমা করপোরেশন পুনর্বীমা ব্যবস্থায় বৈদেশিক স্বনামধন্য পুনর্বীমাকারীদের ন্যয় দ্রুত R/I Claim Recovery প্রদানের মাধ্যমে তার পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবে, যা বীমা শিল্পের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা!
লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন এবং চেয়ারম্যান, নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।