মূখ্য নির্বাহীরা বেতন না পাওয়া দুঃখজনক
লাইফ বীমাখাতের নতুন কোম্পানিগুলোর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না, বিষয়টাকে দুঃখজনক বলছেন মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
মূখ্য নির্বাহীদের বেতন ভাতা অনুমোদনে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার দাবী করেন তিনি।
সম্প্রতি লাইফ বীমাখাতের নতুন কয়েকটি কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না, গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ পায়।
এ বিষয়ে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, একটি লাইফ বীমা কোম্পানির সকল আর্থিক বিষয় পরিচালিত হয় একটি নিয়মের মধ্যে। এখানে পরিচালনা পর্ষদের মিটিং ফি অনুমোদন করেন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তাই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেতন দেয়া হয়নি বা মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বেতন পাচ্ছেন না, এটা স্বাভাবিক কোনো প্র্যাকটিস নয়।
মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক মন্তব্য করে দুটি বীমা কোম্পানির এই চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বীমা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার কোম্পানিতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বেতন পায়নি, এমনটা হয়নি।
এ অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আর্থিক অবস্থার তুলনায় বেতন ভাতা অনেক বেশি, লাইফ বীমাখাতে এমন অনেক কোম্পানি আছে। মূখ্য নির্বাহীর পিছনে কোনো কোনো কোম্পানি ১০/১২ লাখ টাকা ব্যয় করে। কোনো কোনো মূখ্য নির্বাহী কোম্পানির ২টি গাড়ি ব্যবহার করেন। তাদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে গিয়ে কোম্পানির অনেক টাকা খরচা হয়। কোম্পানি এ খরচ করে ব্যবসা বাড়াতে। যার মূল দায়িত্ব মূখ্য নির্বাহীর। আশানুরূপ ব্যবসা না হলে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কোম্পানির ব্যবসা, আর্থিক ভিত বিবেচনা করে মূখ্য নির্বাহীদের বেতন ভাতা অনুমোদন দিতে আইডিআরএ’কে অনুরোধ জানিয়ে বীমাখাতের শীর্ষ এ ব্যবসায়ী বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নাম প্রস্তাব করেন। তবে মূলত মূখ্য নির্বাহীকে নিয়োগ প্রদান করেন বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা মূখ্য নির্বাহীর যোগ্যতা দেখেই নিয়োগ অনুমোদন দেন। বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাও বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির প্রিমিয়াম সংগ্রহ, আর্থিক অবস্থা, বিনিয়োগ থেকে আয় সবকিছু বিবেচনা করেই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার আর্থিক সুবিধাদি নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, কোম্পানি পরিচালনা, কোম্পানির উন্নয়ন, আর্থিক লেনদেন, ব্যবসার প্রসার সবকিছুই আইন অনুসারে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়। কাজেই কোম্পানির আর্থিক ভিত মজবুত করা নির্ভর করে মূখ্য নির্বাহীর পারদর্শিতার ওপর। মূখ্য নির্বাহী পারদর্শী হলে কোম্পানি ব্যবসা ভাল করবে, আর্থিক উন্নতি হবে। এর সঙ্গে জড়িত মূখ্য নির্বাহীসহ অন্যান্যদের বেতন ভাতা পরিশোধ। কোম্পানিকে ভাল ব্যবসা এনে দিতে না পারলে বেতন তো বকেয়া পড়বেই। কোম্পানি এত টাকা বেতন পরিশোধ করবে কোন তহবিল থেকে- প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, এমন অভিযোগও শোনা যায় যে, পরিচালনা পর্ষদ মূখ্য নির্বাহীর কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। মূখ্য নির্বাহীর কাজে ডমিনেট করেন। এমন অভিযোগের বিষয় সঠিকভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
মূখ্য নির্বাহীকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া অপসারণ করার কোনো ক্ষমতা পরিচালনা পর্ষদের নেই। তাহলে একজন মূখ্য নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদকে কেন অবৈধ আর্থিক সুবিধা দেবে। তাহলে তার নিজের কি অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে? ওই ব্যক্তিটি কি নিজের যোগ্যতার চেয়ে বেশি আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন, বেতন ভাতা নিচ্ছেন, না অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, এসব বিষয় ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যারা মালিক পক্ষ কোম্পানির লাইসেন্স নিয়েছি, আমরা ব্যবসা করি লাভ করার জন্যই। আমরা চাইব লাভ করতে। আমরা ভাল ব্যবসার জন্য যোগ্য মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দিয়ে থাকি। মূখ্য নির্বাহীকে মোটা অংকের বেতন ভাতা দেয়া হয়। এখন কোনো মূখ্য নির্বাহী যদি নিজে অসৎ হয়ে পড়েন, অবৈধ আর্থিক সুবিধা, মোটা অংকের বেতন ভাতা নেয়ার জন্য পরিচালনা পর্ষদকে ঘুষ দেন, তাহলে এ দায় কার?
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কোনো অনৈতিক কাজ করলে তা মূখ্য নির্বাহীর মাধ্যমে করেন। তিনি কেন কোনো পর্ষদ সদস্যকে অনৈতিক কাজ করার সুযোগ দিবেন? নিশ্চয় তার স্বার্থ্য রয়েছে বা তিনি যোগ্য নন।
এখানে একটি বিষয়- আইডিআরএ মূখ্য নির্বাহীকে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সকল টাকাই গ্রাহক ও শেয়ার হোল্ডারদের আমানত। এ আমানত রক্ষার দায়িত্ব মূখ্য নির্বাহীর। এটি তিনি না করতে পারলে তিনি মূখ্য নির্বাহীর যোগ্য নন। তাই কোনো পর্ষদ সদস্য যদি অনৈতিক কাজ করে তা থেকে ফেরানোর দায়িত্ব মূখ্য নির্বাহীর। পর্ষদ মূখ্য নির্বাহীকে অনৈতিক কাজে চাপ সৃষ্টি করলে মূখ্য নির্বাহী আইডিআরএকে জানাতে পারেন।
বর্তমানে লাইফ বীমাখাতে অনেক কোম্পানি মেয়াদ শেষে টাকা দিতে পারছে না। এমন অবস্থা কেন সৃষ্টি হয়েছে? এ দায় কার? আসল কথা হচ্ছে বীমার প্রিন্সিপল অনুসারে কোম্পানি পরিচালিত হয়নি। মূখ্য নির্বাহী তা করতে পারেন নাই। অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। নিয়ন্ত্রণহীন পরিচালনার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ দায় মূখ্য নির্বাহীর। আপনি কোম্পানি সুষ্টভাবে পরিচালনা করবেন। এ জন্যই তো আপনাকে মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইডিআরএ আপনাকে অুনমোদন দিয়েছে। কিন্তু আপনি আপনার যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন নাই।
আজকে কথা উঠেছে মূখ্য নির্বাহী বেতন পাচ্ছেন না। এটা খুব ভাল কথা না। মূখ্য নির্বাহীকে বেতন কে দেন? তিনি নিজেই তো নিজের বেতনের সংস্থান করেন। কোম্পানির সকল বেতনই মূখ্য নির্বাহী অনুমোদন করেন। বোর্ডের সদস্যদের ফি ও তিনি অনুমোদন করেন। তার অর্থ হলো তিনি সঠিকভাবে কোম্পানি পরিচালনা করতে পারেন নাই। কোম্পানি ব্যবসা না হলে বেতন নিয়ে তো সমস্যা হবেই।
আমার কোম্পানির কথা বলতে পারেন। আমি দীর্ঘদিন থেকেই দু'টি কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। কর্মকর্তাদের বেতন নিয়ে আমার কোম্পানিতে কোনো সমস্যা হয়নি। বেতনের সংস্থান মূখ্য নির্বাহীরাই করেছেন। পরিচালনা পর্ষদ করেনি। তারা ভাল ব্যবসা করাতে কোম্পানির উন্নতি হয়েছে। বেতন নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নাই।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে বীমা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। একজন মূখ্য নির্বাহী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না- এ বার্তাটি বীমাখাতের জন্য ভালো না। এ দায় একা কোম্পানির না। মূখ্য নির্বাহীদের নিজেদেরও আত্মসমালোচনার সময় এসেছে। আমি একটি কোম্পানিকে কি দিচ্ছি, শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহকদের কি দিচ্ছি, নাকি শুধু নিজের বেতন ভাতা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছি- তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি লাইফ বীমা কোম্পানির একাধিক মূখ্য নির্বাহী বেতন পাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা মূখ্য নির্বাহীর কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগও উঠে আসে।