যমুনা লাইফের মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে স্থিতাবস্থা, আইডিআরএ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক: যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগে স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাস-কো) বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই স্ট্যাটাস-কো বহাল থাকবে। সেইসঙ্গে আদালতকে অবজ্ঞা করে যমুনা লাইফে নতুন মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের চিঠি ইস্যুকারী আইডিআরএ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই এই আদেশ দেন।

ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের পরিবর্তে নতুন কাউকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে গত ৩ জুলাই ২০২৫ যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

ওই চিঠিতে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের দেয়া অন্তর্বর্তী আদেশের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে আদালতের কাছে দাবি করে পিটিশন দাখিল করেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের আইনজীবী।

ওই পিটিশনে বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের আইনজীবী দাবি করেন, যমুনা লাইফের নতুন মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের চিঠি দিয়ে আইডিআরএ আদালতের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। সেইসাথে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় যমুনা লাইফের মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে স্থিতাবস্থা বজার রাখারও দাবি করা হয় পিটিশনে।

এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই শুনানি শেষে হাইকোর্ট এমন আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ সম্পর্কে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী তনয় কুমার সাহা বলেন, রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বীমা কোম্পানিটিতে নতুন মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কারণ, আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বেঞ্চকে রিট পিটিশনদ্বয় অনমেরিটে দ্রুত শুনানি নিষ্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে।

বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের দায়ের করা এ সংক্রান্ত রিট পিটিশনদ্বয় বর্তমানে শুনানির তালিকায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

তনয় কুমার সাহা আরো বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও সম্মানকে অবমূল্যায়ন করে ২০২৫ সালের ৩ জুলাই প্রশ্নবিদ্ধ চিঠি ইস্যু করা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলকে যুমনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের অনুমোদন দিতে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান। কিন্তু এই আবেদন চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ২০২৫ না-মঞ্জুর করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এই নিয়োগ প্রস্তাব না-মঞ্জুরের ক্ষেত্রে দু’দফা চিঠি ইস্যু করে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

৬ এপ্রিল ২০২৫ এর প্রথম দফার চিঠিতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের অপসারণ সংক্রান্ত মামলাকে বিচারাধীন উল্লেখ করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানামালা-২০১২ এর ৭(৬) অনুযায়ী না-মঞ্জুর করা হয়।

প্রবিধানমালার ৭(৬)-এ বলা হয়েছে, “এই ধারার অধীন অপসারিত কোন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বীমা কোম্পানির অন্য কোন পদে নিয়োজিত বা পুনঃনিয়োজিত হইতে পারিবেন না।”

পরবর্তীতে নিয়োগ না-মঞ্জুরের এই চিঠি সংশোধন করে আইডিআরএ। এই চিঠিটি সংশোধনী না বলে ‘একই স্মারকে প্রতিস্থাপিত’ উল্লেখ করে দ্বিতীয় দফায় চিঠিটি দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে। প্রথম চিঠি ইস্যু করার ১৭ দিন পর এই প্রথম চিঠির ভুল সংশোধন করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় দেয়া এই চিঠিতে না-মঞ্জুরের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, মামলাটি বর্তমানে চলমান এবং শুনানির জন্য অপেক্ষমান বিধায় বিষয়টি বিচারাধীন আছে। সেহেতু ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলকে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে বা অন্য কোন বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা সমীচীন নয় মর্মে প্রস্তাবটি না-মঞ্জুর করা হলো।

আইডিআরএ’র এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল রিট মামলা (নং-৬৬৫৭/২০২৫) দায়ের করেন। এই রিট মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশকে স্থগিত করার পাশাপাশি শুনানি করে মামলাটি ৮ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন চেম্বার জজ আদালত।