অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা দশ বছর ধরে একই স্বাস্থ্যবীমায় অনড়: আর্থিক ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা গড়ে এক দশক ধরে একই স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন- এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণা সংস্থা মানি.কম.এইউ-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। ফলাফল বলছে, দেশের অধিকাংশ বীমাগ্রহীতা কখনও তাদের স্বাস্থ্যবীমা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেননি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনড়তা শুধু ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং দেশের স্বাস্থ্যবীমা খাতে প্রতিযোগিতার ভারসাম্যকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশটির বেশির ভাগ নাগরিকই পুরনো পলিসিতে আটকে থাকায় সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া চিকিৎসা ব্যয়, কাভারেজ সীমা এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখছেন না। ফলস্বরূপ, তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রিমিয়াম দিচ্ছেন, অথচ কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাচ্ছেন না।

মানি.কম.এইউ- এর স্বাস্থ্যবীমা বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ক্রিস হুইটলো বলেন- “স্বাস্থ্যবীমাকে একবারের সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা ভুল। জীবন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বীমার চাহিদাও বদলায়। তাই প্রতি বছর নিজের কাভারেজ তুলনা করা উচিত- বর্তমান পলিসি প্রতিযোগিতামূলক কি না, তা যাচাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ।”

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্ম স্বাস্থ্যবীমা পরিবর্তনে সবচেয়ে কম আগ্রহী। অধিকাংশ জেনারেশন জেড এবং মিলেনিয়াল বীমাগ্রহীতা একবার প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় সেটিই বজায় রাখছেন। তুলনামূলকভাবে জেনারেশন এক্স এবং বেবি বুমাররা আরও দীর্ঘ সময় ধরে একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে একধরনের আর্থিক নিরাপত্তা অনুভব করছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মানসিক নিরাপত্তাই বাস্তবে আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ অনেক বীমাগ্রহীতা আধুনিক ও সাশ্রয়ী কাভারেজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বীমাগ্রহীতারা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে অনীহা দেখালে বাজারে প্রতিযোগিতা কমে যায়। ফলে বীমা কোম্পানিগুলো দাম কমানো বা নতুন সুবিধা দেওয়ার তাগিদ অনুভব করে না। এই অবস্থায় প্রিমিয়াম বাড়তে থাকে, আর সাধারণ মানুষ অজান্তেই বেশি অর্থ ব্যয় করতে থাকেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তুলনামূলক মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত নিয়মিত পলিসি তুলনা ও পর্যালোচনাকে সহজ করা, যাতে মানুষ সঠিকভাবে জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

২০২৫ সালে মানি.কম.এইউ দ্বারা পরিচালিত এই জাতীয় সমীক্ষায় এক হাজারেরও বেশি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অংশ নেন। তাদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, অনেকেই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনকে জটিল মনে করেন বা নতুন পলিসির শর্তাবলী বুঝতে না পারায় পরিবর্তন থেকে বিরত থাকেন।

গবেষকরা বলছেন, যদি এই অনড়তা না বদলায়, তাহলে ভবিষ্যতে বীমা খাতে উদ্ভাবন কমে যাবে, প্রতিযোগিতা দুর্বল হবে এবং প্রিমিয়াম আরও বাড়বে- যা শেষ পর্যন্ত নাগরিকদের আর্থিক চাপ বাড়িয়ে তুলবে। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)