চাহিদা বেড়েছে ৫০%

ভারতে ২০০ কোটি রুপির সাইবার বীমা

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ক্রমবর্ধমান সাইবার হামলার প্রেক্ষিতে ভারতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে সাইবার বীমার চাহিদা। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে প্রতিবেশি এ দেশে সাইবার বীমা গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সরকার পরিচালিত ব্যাংকসহ প্রায় ২৫০টি আর্থিক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে এ বীমা গ্রাহকের তালিকায়।

ইকোনমিক টাইমস'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে সাইবার ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ২০০ কোটি রুপি। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, আগামী দু'বছরে এই প্রিমিয়ামের পরিমাণ ৪০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে। টেলিকম বিপ্লব ও আর্থিকখাত ডিজিটালাইজেশনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পর সাইবার বীমার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

মুম্বাই ভিত্তিক ইন্স্যুরেন্স ব্রোকিং ফার্ম মার্শ ইন্ডিয়া ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ৫০ শতাংশ বেশি সাইবার বীমা পলিসি বিক্রি করেছে। সাইবার খাতের বড় একটি অংশ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির দখলে। দেশটিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক মণ্ডলির সভায় বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে সাইবার ঝুঁকি। আগামীতে সাইবার বীমার চাহিদা আরো দ্রুত বাড়বে বলে মনে করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।

মার্শ ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড সঞ্জয় কেডিয়া জানিয়েছেন, ১৫ বছর আগে পরিচালক ও কর্মকর্তাদের জন্য ভারতে লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স যেমন সক্রিয় সংলাপে পরিণত হয়েছিল ঠিক একই পর্যায়ে যাচ্ছে সাইবার বীমা। তবে মূল পার্থক্য হচ্ছে সাইবার ঝুঁকির ঘটনা খুব দ্রুত বাড়ছে এবং এর ঝুঁকির প্রকৃতিও গতিময়, অনেকে ক্ষেত্রে এটি ব্যাপক।

২০১৭ সালে সরকারি খাতের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ব্যাংক অব ইন্ডিয়া হ্যাকিং এর শিকার হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকটি ১৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সোসাইটি ফর ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (SWIFT) পেমেন্টের মাধ্যমে এসব অর্থ তুলে নেয় হ্যাকাররা। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এসব অর্থ উদ্ধারে সক্ষম হয় ব্যাংকটি।

এরআগে ২০১৬ সালে হিটাচি পেমেন্ট সার্ভিসের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ইয়েস ব্যাংক এটিএম নেটওয়ার্ক থেকে ৩.২ মিলিয়ন গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে ব্যাংকগুলো নতুন করে কার্ড বিতরণ করে। এতে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আর্থিক লোকসান হয় ব্যাংকগুলোর। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মোবাইল ফোন এপ্লিকেশন হ্যাকিংয়ে ব্যক্তিগত তথ্য ও ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে অর্থ চুরিতে কোটি কোটি রুপি ক্ষতির ঘটনাও রয়েছে।

মূলত ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মূলত সাইবার ইন্স্যুরেন্স প্রথমবারের মতো বাজারে ছাড়া শুরু হয়। ২০১০ সালের দিকে বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে এবং ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে। তবে ভারতের বাজারে সাইবার বীমার যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৩ বছর আগে। ব্যাংক ও ই-কমার্স কোম্পানিগুলো সাধারণত বড় আকারের সাইবার কভারেজ গ্রহণ করে থাকে।

সাইবার ইন্স্যুরেন্স এমন একটি বীমা পণ্য যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে ইন্টারনেট ভিত্তিক ঝুঁকি বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও কার্যক্রম সম্পর্কিত ঝুঁকির কভারেজ প্রদান করে। এই প্রকৃতির ঝুঁকি সাধারণত প্রথাগত বাণিজ্যিক সাধারণ দায় পলিসি থেকে ভিন্ন। সাইবার ইন্স্যুরেন্স পলিসির আওতায় ক্ষতির বিপরীতে ফার্স্ট পার্টি কভারেজ যেমন তথ্য ধ্বংস, চাঁদাবাজি, চুরি, হ্যাকিং ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।