গ্রীন ডেল্টা-ডেইলি স্টার গোলটেবিল আলোচনা

নিম্ন বেতন ও আস্থা সংকট নিয়ে চলছে বীমাখাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিম্ন বেতন ও অস্বস্তিকর চাকরি পরিবেশের কারণে প্রতিভাবান তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারেনি দেশের বীমাখাত। এর পাশাপাশি চরম ইমেজ সংকট ও দাবি পরিশোধে অনাস্থা নিয়ে চলছে পুরো খাতটি।

আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে অনুষ্ঠিত হাউ টু ওভারকাম দ্যা বিগেস্ট ওয়ার্কফোর্স চ্যালেঞ্জ ইন ইন্স্যুরেন্স সেক্টর থ্রো এমপাওয়ারমেন্ট অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, প্রফেশনাল এডভান্সমেন্ট বাংলাদেশ লি., চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট (সিআইআই), ইউকে এবং ডেইলি স্টার যৌথভাবে এটি আয়োজন করে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, বীমাখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, খাতটি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে এর অগ্রগতিতে সহায়তা করতে চায় সরকার। এ কারণেই এটি নিয়ন্ত্রণে পৃথক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিষয়ে গ্রাহকদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ইমেজ সংকট দূর করতে আইডিআরএ কাজ করছে। তিনি বলেন, বীমাখাতে মানবসম্পদের উন্নয়নে পেশাগত প্রশিক্ষণ আবশ্যক।

শফিকুর রহমান বলেন, তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে আইডিআরএ। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর এ ৭ বছরেও যথেষ্ট জনবল হয়নি কর্তৃপক্ষে। তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, এ খাতের জনশক্তি কেন প্রশিক্ষণ গ্রহণে অনিচ্ছুক তা আমরা চাই চিহ্নিত করতে চাই। প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহিত করতে কি সুবিধা দেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পরামর্শ দিতে বলেন বীমা কোম্পানিগুলোকে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মহুর্তে বীমাখাতের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবসম্পদ। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা এ খাতের জনবলের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।   

বীমাখাতে যোগ্যতা সম্পন্ন জনবল পেতে বেতন কাঠামো পরিবর্তন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন সাধারণ বীমা কারপোরেশনের চেয়ারম্যান শিবলী রোবায়েত-উল-ইসলাম।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী বলেন, বীমা কোম্পানিগুলো তাদের জনবলের উন্নয়নে এবং পেশাদারিত্ব তৈরিতে খুব একটা সচেতন নয়। কর্মকর্তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফারজানা চৌধুরী বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোতে যোগদানের শুরুতে কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো ব্যাংক এবং অন্যান্য খাতের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম। এ কারণে নতুন প্রজন্ম বীমাখাতে কাজ করতে আগ্রহী নয়।

নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং অসুস্থ চর্চার কারণে কোম্পানিগুলোতে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়, যা বীমাখাতে চাকরি গ্রহণে নতুন প্রজন্মকে অনুৎসাহিত করছে, বলেন গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী।

ন্যাশনাল লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এম এ নাসের বলেন, বীমাখাতের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সেবার মান বৃদ্ধিতে দক্ষ মানবসম্পদের ব্যবহার অপরিহার্য। বীমা কোম্পানিগুলোতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আইডিআরএ সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে। দক্ষ মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারে বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো অন্যমাত্রায় পৌঁছে যাবে।

সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল ইসলাম বলেন, বীমাখাতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকায় গত ৮ বছরে আমরা তেমন কিছু অর্জন করতে পারিনি।

এ ছাড়াও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমাম শাহীন, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ, সিআইআই'র দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল ডাইরেক্টর সেইনেশ দার, গার্ডিয়ান লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম মনিরুল আলম, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান প্রমুখ আলোচনা রাখেন।