এততো কাণ্ড, তারপরও আপোষ করতে পারেননি ফারইষ্ট চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েকটি ঝকঝকা দামী গাড়ি, এক ঝাঁক স্যুটেড বুটেড কর্মকর্তা, এলাকার নেতাদের নিয়ে মামলার বাদীর পিতার হাতে নগদ ৭ লাখ টাকা তুলে দিয়েও আপোষ করতে পারেননি ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম।
বীমা দাবী পরিশোধ না করার মামলায় বিচার শুরু ও জামিন বাতিল হওয়ার পরপরই বাদী রফিুকল ইসলামের সাথে আপোষ করতে নাটকীয় সব কাণ্ড করেন ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ। এতে নিয়োজিত করেন কোম্পানির ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর কর্মকর্তাদেরও।
তবে পূরো দাবী পরিশোধ না করায় আপোষ করতে রাজী হননি মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম বাবু।
এদিকে, বুধবার দুপরে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন মো: নজরুল ইসলাম।
গত বুধবার দুপুরে বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, বাদীকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে আপোষ করা হয়েছে। আগামীকাল আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়া হবে।
অন্যদিকে, বুধবার বিকালে ইন্স্যুরেন্স নিউজবিডি'র প্রতিনিধিকে বাদী রফিুকুল ইসলাম জানান, আপোষ করার জন্য পরিবারের লোকজন, আত্মীয় স্বজন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ধরেছে ফারইষ্ট লাইফ। আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আপোষ করতে আমার আইনজীবীদেরকেও ম্যানেজ করতে চেষ্টা করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের লোকজন।
আইনজীবীরা আপনার সাথে কথা বলেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার মূল আইনজীবী লিয়াকত হোসেন এ বিষয়ে কোনো কথা বলেন নি। তবে তার জুনিয়র মিজানুর রহমান সুজন ও ফারুক নামে অপর একজন আইনজীবী আমার সাথে কথা বলেছেন। তবে ন্যায্য পাওনা না পেলে আপোষ করব না বলে জানিয়ে দিয়েছি।
আলাপকালে মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে রাজবাড়ী চলে আসেন ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহ। তিনি সার্কিট হাউজে ওঠেন। তার আগ থেকেই মোবাইল ফোনে বাদী রফিুকল ইসলামের সাথে দফায় দফায় কথা বলেন। আপোষ করতে প্রস্তাব করেন ১০ লাখ টাকা দেয়ার।
পরে সার্কিট হাউজে অবস্থান কালে মঙ্গলবার রাত ১ টা পর্যন্ত হেমায়েত উল্লাহ স্থানীয় উর্দ্ধতন কর্মকতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এসময় মিমাংসার জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু এতেও বাদী রাজ হননি।
পরের দিন বুধবার সকালে সার্কিট হাউজে ওঠেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। এইদিনও নজরুল ইসলাম ও হেমায়েত উল্লাহ দফায় দফায় বৈঠক করেন বাদীর সাথে। কিন্তু বাদীকে আপোষ করতে রাজী করাতে ব্যর্থ হন।
এরপর আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেয়ার পরপরই রাজবাড়ী থেকে চলে আসেন নজরুল ইসলাম। বিষয়টি আপোষ করতে দায়িত্ব দিয়ে আসেন স্থানীয় ৪ কর্মকর্তাকে।
ওই দিনই বিকালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের স্থানীয় ৪ কর্মকর্তা মিমাংসা করতে চলে যান বাদি রফিকুল ইসলামের বাড়িতে। তবে এ সময় রফিুকল ইসলাম বাড়িতে ছিলেন না। বাদির পরিবারের সদস্যদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন তারা। এ সময়ে ১ হাজার টাকার ৭টি বান্ডিলে মোট ৭ লাখ টাকা বাদীর বাবার হাতে তুলে দেন ওই কর্মকর্তারা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ২৫ লাখ টাকা পাই। এ টাকা আমার ন্যায্য পাওনা । এ জন্যই আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। যার ফলে আমি তাদের কথায় আপোষ করিনি।
এর আগে গত রোববার ওই মামলার ২ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় চার্জ গঠন করেন রাজবাড়ীর একটি বিচারিক আদালত।
পরপর ৩ ধার্য্য তারিখে হাজির না হওয়ায় ১ নম্বর আসামী নজরুল ইসলামের জামিন বাতিল করে আদালত ওয়ারেন্ট জারি করেন ।
উল্লেখ্য, বীমা দাবির ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ না করায় গত বছরের ১৪ মার্চ রাজবাড়ীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলী আদালতে মামলা করেন রাজবাড়ী পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মো. রফিকুল ইসলাম বাবু।
দণ্ডবিধি ৪১৮/৪২০ ধারায় দায়ের করা এ মামলা নং-সি/আর ১৭৩/১৭। মামলায় বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামকে ১ নং আসামি এবং ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর মো. মোজাম্মেল হককে ২ নং আসামি করা হয়।
রাজবাড়ি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের মূখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।